1. shahajahanbabu@gmail.com : admin :
গণনার বাইরে বহু ডেঙ্গু রোগী - Pundro TV
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ন



গণনার বাইরে বহু ডেঙ্গু রোগী

অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিতঃ বুধবার, ৩০ আগস্ট, ২০২৩

সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি মিলে ৭৭টি হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর তথ্য দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর বাইরেও অনেক হাসপাতাল বা বাসায় চিকিৎসা নেন ডেঙ্গু আক্রান্ত বহু মানুষ। সেই তথ্য থেকে যাচ্ছে সরকারি হিসাবের বাইরে। ডেঙ্গু রোগীর তথ্য চেয়ে বেসরকারি সব হাসপাতালকে অবশ্য চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে সে ডাকে সাড়া দিচ্ছে না অনেকেই।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রোগীর সঠিক সংখ্যা ও তাদের অবস্থান জানা গুরুত্বপূর্ণ। কোথায় কতজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং মারা যাচ্ছেন, তার গণনা সঠিকভাবে না হলে এ নিয়ে পরিকল্পনা করা কঠিন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত দেশে ১ লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মারা গেছেন ৫৬৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। এই সময়ে নতুন আক্রান্ত ২ হাজার ২৯১ জন। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ডেঙ্গু রোগীর প্রকৃত সংখ্যা এর অন্তত ১০ গুণ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রতিদিন ডেঙ্গু আক্রান্তের যে তথ্য দেয়, তার বাইরে দেশে ডেঙ্গু রোগী আছে কিনা, তা যাচাইয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ নিয়েছে সমকাল। এতে দেখা যায়, অনেকের তথ্যই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে অন্তর্ভুক্ত নেই। এমনকি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনেক হাসপাতালের সঙ্গে ডেঙ্গু বিষয়ে যোগাযোগও রাখে না।

প্রতিদিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুম থেকে যারা ডেঙ্গু রোগীর তথ্য সংবাদমাধ্যমে সরবরাহ করেন, তারাও স্বীকার করেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা বেশি হতে পারে। কারণ কন্ট্রোল রুম শুধু হাসপাতালে ভর্তি রোগীর তথ্যই পায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডেঙ্গু নিয়ে রাজাধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে এ পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৬০৩ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দেখাচ্ছে ওই সংখ্যা ৪ হাজার ৪২৫। হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে ৪ হাজার ২১৮ জনকে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, ছাড়পত্র নিয়েছেন ৪ হাজার ১৪৫ জন।
রাজধানীর পান্থপথে বেসরকারি হাসপাতাল কমফোর্ট নার্সিংয়ে চলতি আগস্টে ১৩৭ জন ডেঙ্গুর পরীক্ষা করান। তাদের মধ্যে ৬৭ জনের পজিটিভ আসে। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ওই সময়ে সেখানে মাত্র ১০ জন ডেঙ্গু রোগীর তথ্য দেয়।

 

পান্থপথের গ্রিন লাইফ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, সেখানে দৈনিক ১০০ জনের বেশি ডেঙ্গুর পরীক্ষা করান। এর মধ্যে অন্তত ৩০ জন পজিটিভ বলে শনাক্ত হন। তবে গতকাল মঙ্গলবার এই হাসপাতালে মাত্র ছয়জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তির তথ্য দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বর্তমানে ও হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৪৩ জন ডেঙ্গু রোগী।

কমফোর্ট নার্সিংয়ের মহাব্যবস্থাপক সেলিম সরকার বলেন, ‘কতজন ডেঙ্গু পজিটিভ, সে হিসাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চায় না। শুধু কতজন রোগী ভর্তি হলেন, সে তথ্য তাদের দিতে হয়।’ আবার অনেকে পজিটিভ হওয়ার পর বাসায় গিয়ে বা অন্য হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। তারা হিসাবের বাইরে থাকতে পারেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গ্রিন লাইফ হাসপাতালের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. সোহরাব আলী  বলেন, ‘শুধু ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর তথ্যই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়। কতজন পজিটিভ, সে তথ্য চাওয়া হয় না।’

গণনার বাইরে রংপুরের অনেক রোগী

রংপুরে বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার তথ্য নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গণনায়। শহরে সবচেয়ে বড় বেসরকারি ক্লিনিক ‘ডক্টর কমিউনিটি মেডিকেল সেন্টার’। এখানে এ বছর ১০০ জন ডেঙ্গু পরীক্ষা করিয়েছেন। এর মধ্যে পজিটিভ শনাক্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫০ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এসব রোগীর হিসাব নেই। ডক্টর কমিউনিটির এক কর্মকর্তা বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ডেঙ্গু রোগীর তথ্য দেওয়ার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা এখন পর্যন্ত তারা পাননি।
রংপুরের পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ল্যাবএইডসহ কয়েকটি মেডিকেল সেন্টার ঘুরে ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য মানুষের ভিড় দেখা যায়। পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের জনসংযোগ কর্মকর্তা জামিল আহমেদ জানান, সেখানে প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে আসেন। পজিটিভ না হলে তাদের তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দেওয়া হচ্ছে না।
জেলা সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘রংপুরে ৮৫টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। প্রায় সব ক’টিতেই ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। সেন্টারগুলোতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারে শনাক্তদের তালিকা মোট আক্রান্তের তালিকায় বাদ থাকছে। শুধু হাসপাতালে ভর্তি হওয়াদের তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হচ্ছে।’

ময়মনসিংহেও হিসাবের বাইরে অনেকে

ময়মনসিংহের বড় দুটি বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার প্রান্ত স্পেশালাইজড হাসপাতাল ও স্বদেশ হাসপাতাল। প্রান্ত স্পেশালাইজড হাসপাতালে গত রোববার দুপুর পর্যন্ত এ মাসে ডেঙ্গু পরীক্ষা করান ২৫২ জন। এর মধ্যে পজিটিভ ২২ জন। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনসুর আলম চন্দন বলেন, করোনা আক্রান্তের হিসাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিলেও ডেঙ্গু আক্রান্তের হিসাব নিচ্ছে না।
স্বদেশ হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ সহকারী ব্যবস্থাপক মো. মোজাফফর হোসেন বলেন, গত জুলাই থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত সেখানে ৩৫৩ জন ডেঙ্গু পরীক্ষা করান। হাসপাতালে ভর্তি ছাড়া ডেঙ্গু রোগীর কোনো হিসাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিচ্ছে না।

যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

কীটতত্ত্ববিদ ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘ডেঙ্গু এবার মহামারি আকার ধারণ করেছে। সরকারের উচিত ডেঙ্গুর প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে তথ্য দিচ্ছে, তার চেয়ে রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ১০ গুণ। নমুনা পরীক্ষা ও পজিটিভ আসা রোগীর তথ্য সংগ্রহ না করে শুধু ভর্তি রোগীর তথ্য নেওয়া মানে সরকার প্রকৃত তথ্য গোপন করছে।’ তিনি বলেন, ‘থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে এডিস মশা বাড়ছে। অথচ মশা নিধন কার্যক্রমে জনগণকে সম্পৃক্ত করা যায়নি।’

কী বলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহাদাত হোসাইন বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে চিঠি দিয়ে ডেঙ্গু রোগী সম্পর্কে তথ্য চাওয়া হয়েছে। এর পর কিছু হাসপাতাল তথ্য দিচ্ছে। এই সংখ্যা ১০ শতাংশ হবে। বাকি হাসপাতালগুলো ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর তথ্য দিচ্ছে না। তবে সরকারি হাসপাতালে স্বাভাবিক রোগে আক্রান্ত ও মৃত্যুর তথ্য দেওয়ার জন্য একটি নতুন দরজা খোলা হচ্ছে। এটি চালু হলে ডেঙ্গুর তথ্য নেওয়ায় সুবিধা হবে।’

আরও ১৩ জনের মৃত্যু

দেশে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত শেষ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ঢাকায় মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের। এই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ২৯১ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯২০ জন এবং ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ১ হাজার ৩৭১ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ১৯ হাজার ১৩৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৫৬ হাজার ২৪৭ জন এবং ঢাকার বাইরে ৬২ হাজার ৮৮৬ জন। এ বছর ডেঙ্গুতে এ পর্যন্ত ৫৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে চলতি আগস্টে মারা গেছেন ৩১৮ জন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২
Developed By ATOZ IT HOST