আধুনিক ফ্রান্সের ইতিহাসে দ্বিতীয় এবং গত তিন দশকের মধ্যে প্রথম নারী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন এলিজাবেথ বোর্ন, যিনি এর আগে দেশের শ্রমমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।
গার্ডিয়ান জানায়, সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী জ্যঁ কাসটেকসের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন এলিজাবেথ বোর্ন।
দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত ভাষণে এলিজাবেথ বোর্ন বলেন, “আমার এই নিয়োগ আমি ফ্রান্সের ছোট ছোট মেয়েদের উৎসর্গ করছি। তাদের বলতে চাই, নিজের স্বপ্নকে অনুসরণ করে যাও। কোন বাঁধাই আমাদের সমাজে নারীর অবস্থানের জন্য লড়াইকে থামাতে পারবে না।”
পেশায় প্রকৌশলী এলিজাবেথ (৬১) ফ্রান্স সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। ইমানুয়েল ম্যক্রোঁ দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর নতুন মন্ত্রিসভার জন্য এলিজাবেথকে বেছে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে।
ম্যক্রোঁর প্রতিশ্রুত নীতিমালার বাস্তবায়ন এবং ইউক্রেইনে যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে উচ্চ মূল্যস্ফীতি সামলানোর চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে নতুন প্রধানমন্ত্রী বোর্নের জন্য।
তার আগে একমাত্র নারী হিসেবে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছিলেন ইদিথ ক্রেসোঁ। প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিতেরাঁর আমলে ১৯৯১ এর মে থেকে ১৯৯২ এর এপ্রিল পর্যন্ত ওই দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
দীর্ঘ বিরতির পর প্রধানমন্ত্রী পদে আরেকজন নারী আসার খবরে ক্রেসোঁ ফরাসি গণমাধ্যম বিএফএমটিভিকে বলেন, “অনেক আগেই এটা হওয়া উচিত ছিল।”
কিছুদিন আগেই ক্রেসোঁ বলেছিলেন, ফ্রান্সের রাজনীতি এখনও অনেক বেশি ‘পুরুষালী’ রয়ে গেছে। আর গত সপ্তাহে আইফপ পরিচালিত এক জরিপে ৭৪ শতাংশ নাগরিক বলেছিলেন, নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একজন নারীকে দেখতেই তারা পছন্দ করবেন।
দায়িত্ব নেওয়ার পর এলিজাবেথ বোর্নের প্রথম কাজ হতে যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট ম্যক্রোঁর মধ্যপন্থি রাজনৈতিক দলের ভেতরের মতদ্বৈততাগুলোর সুরাহা করা। আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে ম্যক্রোঁর দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য সেটা জরুরি।
এই গ্রীষ্মে পার্লামেন্ট নির্বাচনে জয় পেলে প্রধানমন্ত্রী বোর্নেকে জ্বালানি মূল্যের লাগাম টানতে হবে এবং জীবনযাপনের খরচ সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ সামলাতে হবে।
এরপর তার জন্য চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে ম্যক্রোঁর অজনপ্রিয় পেনশন নীতিমালার বাস্তবায়ন। প্রেসিডেন্ট ম্যক্রোঁ চাইছেন বর্তমান পেনশন শুরুর বয়স ৬২ বছরের সীমা থেকে বাড়িয়ে ৬৪ বা ৬৫ বছরে উন্নীত করতে। এই নীতির বিরুদ্ধে এরইমধ্যে রাজপথে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছে শ্রমিক ইউনিয়নগুলো।
এছাড়া কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে ‘সবুজ পরিকল্পনা’ বাস্তবায়নের পরিবেশ নীতিমালা নিয়েও কাজ করতে হবে এলিজাবেথ বোর্নকে।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে ম্যক্রোঁর সরকারে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর- পরিবহন, পরিবেশ ও শ্রম মন্ত্রণালয় সামলেছেন এলিজাবেথ বোর্ন। কঠিন নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সুনাম রয়েছে তার।
এলিজাবেথ বোর্ন মন্ত্রী থাকার সময়ই ফ্রান্সে রেল ব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কার আনা হয়, সে সময় কয়েক দশকের মধ্যে বড় ধরনের ধর্মঘটের ভেতর দিয়ে যেতে হয় ফ্রান্সকে।
প্রেসিডেন্ট ম্যক্রোঁর মিত্র ক্রিস্তফ কাস্তানারের ভাষায়, এলিজাবেথ বোর্ন ‘সরাসরি কথা বলতে পছন্দ করা’ একজন রাজনীতিবিদ, যিনি ‘অসম্ভব সংস্কার নীতিকে সম্ভব করতে পারদর্শী’।