আকাশের ঠিকানায় চিঠি লেখার কথা বলে চলে গেছেন তিনি। তাও ২৫ বছর আগে। তবু এখনো তার উদ্দেশ্যে প্রেরিত হয় অগণিত অদৃশ্য চিঠি, অজস্র ভালোবাসার বার্তা। ক্যালেন্ডারে এখনো নিয়ম করে আসে ১৯ সেপ্টেম্বর । শুধু স্বশরীরে পাওয়া যায় না তাকেই। কিন্তু তাতে কী! ভালোবাসায় দূরত্ব কি বাধা হতে পারে? হোক না সে দূরত্ব জীবন ও মৃত্যুর!
বাংলা সিনেমাপ্রেমী দর্শকদের কাছে বিশেষ এ দিনটি । কারণ এই দিনেই জন্মেছিলেন অমর নায়ক সালমান শাহ। বেঁচে থাকলে আজ ৫০ বছরে পা রাখতেন তিনি। মৃত্যুর এত বছর পরও কালজয়ী এই নায়ক এখনো সমানভাবে আলোচিত, জনপ্রিয়।
কেবল সাধারণ দর্শক নয়, সিনেমা জগতের অনেকেই সালমান শাহর ভক্ত। তেমনই একজন বিশেষ ভক্তের নাম সিয়াম আহমেদ। যিনি ঢালিউডের এ প্রজন্মের তারকা। প্রিয় নায়কের প্রতি তার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ছিল প্রথম সিনেমা ‘পোড়ামন ২’তেই। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে সাক্ষাৎকার, আড্ডায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় সালমান শাহর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন তিনি।
বাংলাচলচিত্রের বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খান।তিনিও সালমানকে ‘ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নায়ক’ আখ্যা দিয়ে তার ফেসবুক লিখেছেন, ‘দ্যুতিময় এক শিল্পীর নাম সালমান শাহ। বেঁচে থাকলে আজ ৫০ বছরে পা রাখতেন তিনি। হয়তো বয়সের ছাপ ফুটে উঠতো তার হাসিতে। গলায় ভর করতো গাম্ভীর্য। দুয়েকটা সাদাচুল দেখা গেলেও তার নায়ক সুলভ ব্যক্তিত্বের সামনে হয়তো কোনো পাত্তাই পেত না! তাকে নিয়েই পালন করতাম ৫০তম জন্মদিনের সুর্বণ জয়ন্তী ।
বাংলা চলচ্চিত্র জগতের রাজপুত্র বলা হয় সালমান শাহকে। মৃত্যুর দুই যুগ পরও আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা তার। এখনও টিভি পর্দায় তার অভিনীত ছবি প্রচার হলে আগ্রহ নিয়ে দেখেন দর্শক। ক্ষণজন্মা এই নায়ক রেখে গেছেন ২৭টি চলচ্চিত্র এবং অগণিত ভক্তকুল। আজ ১৯ সেপ্টেম্বর সেই অমর নায়কের জন্মদিন। বেঁচে থাকলে ৫০ বছরে পা দিতেন অসংখ্য ভক্তের এই স্বপ্নের নায়ক।
১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন সালমান শাহ। বাবার নাম কমরউদ্দিন চৌধুরী এবং মায়ের নাম নীলা চৌধুরী। পরিবারের বড় ছেলে সালমানের জন্মনাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। তবে চলচ্চিত্রে সবার কাছে সালমান শাহ নামেই পরিচিত ছিলেন তিনি।
সালমান শাহ পড়াশোনা করেছেন খুলনার বয়রা মডেল হাই স্কুলে।সেই স্কুলে তার সহপাঠী ছিলেন চিত্রনায়িকা মৌসুমী। পরে ১৯৯৩ সালে একই সঙ্গে দু’জনের অভিষেক হয় চলচ্চিত্রে। সালমান-মৌসুমী জুটি বেঁধে অভিনয় করেন সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবিতে। সেই থেকে একবারের জন্যও পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
সালমান শাহর সঙ্গে চিত্রনায়িকা শাবনূরের জুটি ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয়। বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে সেরা জুটিও বলেন অনেকে। এই জুটির প্রতিটি ছবিই সুপারহিট। তাদের পর্দার রসায়ন ছিল নজরকাড়া। আবার বাস্তব জীবনের রসায়ন নিয়েও আলোচনা ছিলো তুমুল। সালমান শাহর সঙ্গে শাবনূরের সে সময়কার সম্পর্ক নিয়ে এখনো কম-বেশি চর্চা হয়। ১৯৯২ সালের ১২ আগস্ট সামিরা হককে বিয়ে করেন সালমান শাহ। সামিরা ছিলেন বিউটি পার্লার ব্যবসায়ী।
সালমানের দু’টি চলচ্চিত্রে তার পোশাক পরিকল্পনাকারী হিসেবেও কাজ করেন তিনি। দাম্পত্য জীবনের পাঁচ বছরের মাথায় ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর হঠাৎই ছড়িয়ে পড়ে সালমানের মৃত্যুর খবর। ঢাকার ইস্কাটনে নিজ বাসার সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তার দেহ । ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হলেও রহস্য থেকে যায় তার মৃত্যু নিয়ে।
মাত্র চার বছরের ক্যারিয়ারে ২৭টি ছবিতে অভিনয় করেছেন সালমান শাহ। প্রায় সবগুলোই সিনেমাই ছিলো সুপারহিট । সালমান শাহ অভিনীত ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম অন্তরে অন্তরে, সুজন সখী, স্বপ্নের নায়ক, স্বপ্নের ঠিকানা, চাওয়া থেকে পাওয়া, জীবন সংসার, প্রেম প্রিয়াসী, সত্যের মৃত্যু নেই, মায়ের অধিকার, এই ঘর এই সংসার, তোমাকে চাই, আনন্দ অশ্রু, বুকের ভেতর আগুন ইত্যাদি।