যশোর: যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) আগামী তিন বছরের মধ্যে সব অ্যাকাডেমিক, আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমকে ডিজিটাইজড করার রোডম্যাপ ঘোষণা করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন।
তিনি বলেছেন, এ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শ্রেণিকক্ষও ডিজিটাইজড করা হবে।
একইসঙ্গে শহরের অপরাজনীতির সঙ্গে জড়িত শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ফিরে না এলে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
রোববার (৬ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে দ্বিতীয় মেয়াদে যবিপ্রবির উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণ উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আগামীতে আমরা অনলাইন এবং সশরীরে দুই ধরনের ক্লাস একই সঙ্গে চালু রাখবো। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি ডিজিটাল ক্লাসরুম রয়েছে। চলতি অর্থ বছরে আরও ২৬টি ডিজিটাল ক্লাসরুম সংযোজন করা হবে। যেন অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায় এবং ভবিষ্যতে যেকোনো পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা ক্লাসের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে পারে।
আগামী চার বছরের লক্ষ্য সম্পর্কে উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার বলেন, ইন্ডাস্ট্রি-অ্যাকাডেমিয়া সম্পর্ককে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ন্যায় অ্যাকাডেমিক কারিকুলাম প্রণয়ন, অত্যাধুনিক ল্যাব স্থাপন, স্টার্টআপ কোম্পানি স্থাপন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব উদ্ভাবন ও প্যাটেন্ট রাইট-এর মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখার পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে। বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট ও সংখ্যা বাড়ানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিস সেন্টারকে আরও গতিশীল করা হবে।
তিনি বলেন, গত চার বছরে যবিপ্রবিতে অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পেরেছিলাম। কিন্তু আমার দুই সপ্তাহের অনুপস্থিতির ফলে সেটার অবনতি হতে শুরু করে। আমি শুনেছি, যশোর শহর কেন্দ্রিক অপরাজনীতির চর্চাকারীদের এখানে আহ্বান জানানো হয়েছে। আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, বিশ্ববিদ্যালয় চলবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-কানুনে। যশোর শহরের অপরাজনীতিকদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দেওয়া হবে না। প্রভাবও বিস্তার করতে দেওয়া হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের যেসব সদস্য সেই অপরাজনীতির সঙ্গে এখনো যুক্ত আছেন, তাদের আমি ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। তা না হলে তাদের প্রতিটি অপকর্মের জন্য প্রশাসনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিশৃঙ্খলাকারীদের মধ্যে অনেকে আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। অভিভাবক হিসেবে আমি ক্ষমা করেছি, কিন্তু আবার অপরাধ করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। ’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালুর বিষয়ে অধ্যাপক আনোয়ার বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হলে সারা বিশ্বের ন্যায় এখানেও শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। এখন আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার হচ্ছে, ছেলে-মেয়েদের পরীক্ষা নেওয়া। এজন্য আমার দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম কর্ম দিবসেই বিভিন্ন অনুষদের ডিনদের সঙ্গে সভা করেছি। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা স্নাতক শ্রেণির সব বর্ষের দুটো সেমিস্টারের ক্লাস শেষ করেছি। কিন্তু এখন পরীক্ষা না নিলে বর্ষ উন্নয়ন সম্ভব নয়। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে আমরা আগামী মাসেই পরীক্ষা শুরু করতে পারবো বলে আশাবাদী। বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। আগামী সপ্তাহে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।
মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন যবিপ্রবির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আব্দুল মজিদ, রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আনিছুর রহমান, অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল কবীর জাহিদ, ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. তহিদুল ইসলাম প্রমুখ।