চরম আর্থিক সংকটে থাকা শ্রীলঙ্কায় উত্তাল গণবিক্ষোভের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের পদত্যাগ এবং তার সমর্থকদের সঙ্গে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ ঠেকাতে কারফিউ জারির পরও জটিল হচ্ছে পরিস্থিতি।
শ্রীলঙ্কায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সরকার সমর্থকদের সংঘর্ষে অন্তত পাঁচ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক। এছাড়া মাহিন্দা রাজাপাকসেসহ দেশটির মন্ত্রী, এমপি, সাবেক মন্ত্রী ও স্থানীয় নেতাদের বাসভবনে আগুন দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা ও রয়টার্স।
জানা যায়, নিহতদের মধ্যে ক্ষমতাসীন এক এমপি ও এক বিক্ষোভকারীও রয়েছেন। এছাড়া আহতদের দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে সোমবার (৯ মে) দেওয়া কারফিউ এর সময় বাড়ানো হয়েছে। মঙ্গলবার (১০মে) আল জাজিরা জানায়, জননিরাপত্তা অর্ডিন্যান্সের ১৬ ধারা মেনে যে কারফিউ দেওয়া হয়েছে তা আজ স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় তুলে নেওয়ার কথা ছিল। পরে তা বাড়িয়ে বুধবার (১১মে) সকাল ৭টা পর্যন্ত করা হয়েছে।
কলম্বো ন্যাশনাল হাসপাতালের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, কলম্বোর সংঘর্ষের ঘটনায় আহত অন্তত ১৩৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সোমবার সকালে দেশটির ক্ষমতাসীন রাজাপাকসের পরিবারের সমর্থকেরা বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কলম্বোয় প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের বাইরে নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর তাণ্ডব চালায় সরকারপন্থী সমর্থকরা।
এরপর সন্ধ্যার দিকে এর পাল্টা জবাব দেয় বিক্ষোভকারীরা। তারা বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে ও তার ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসের পিতামাতার জন্য নির্মিত স্মৃতিসৌধ ধ্বংস করে দিয়েছে। হামবানটোটায় তাদের পারিবারিক বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। এটি কলম্বো থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে।
এছাড়া তিন সাবেক মন্ত্রী ও দুই সংসদ সদস্যের বাড়িতেও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, মাউন্ট লাভিনিয়া এলাকায় সাবেক মন্ত্রী জনস্টন ফেরনান্দোর আবাসিক ভবন ও বর্তমান এমপি সনাথ নিশানথার বাড়িতে হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা। এরপর তাতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। ভিডিওতে, জ্বলন্ত ঘর থেকে আগুনের শিখা উঠতে দেখা গেছে।
এছাড়া দেশটির কর্মকর্তারা বলেন, কলম্বোর কাছের নিত্তামবুয়া এলাকায় বিক্ষোভকারীদের সামনে পড়েন এমপি অমরাকীর্থি আথুকোরালা। আন্দোলনকারীরা গাড়িটি আটকে দেওয়ার চেষ্টা করলে তিনি গুলিবর্ষণ করেন। এতে দুই জন গুরুতর আহত হলে এক পর্যায়ে সংলগ্ন একটি ভবনে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। পরে সেখানেই তার মরদেহের সন্ধান মেলে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ার গ্যাস ও জল ক্যানন নিক্ষেপ করে। এরপর কলম্বোজুড়ে কারফিউ জারি করে। পরবর্তীতে তা দেশজুড়ে জারি করা হয়।