অবরুদ্ধ বন্দরনগরী মারিউপোলের আত্মসমর্পণের বিনিময়ে শহরটিতে থাকা লোকজনকে নিরাপদে সরে যাওয়ার সুযোগ দেওয়ার রাশিয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ইউক্রেইন।
বিবিসি জানিয়েছে, শহরটিতে থাকা ইউক্রেইনীয় প্রতিরোধ বাহিনী অস্ত্র ত্যাগ করলে বেসামরিকদের শহরটি থেকে চলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে বলে প্রস্তাবে বলেছে রাশিয়া।
কিন্তু কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই বন্দরনগরী নিয়ে আত্মসমর্পণের কোনো প্রশ্নই ওঠে না বলে ইউক্রেইন সাফ জানিয়ে দিয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, মারিউপোলে প্রায় তিন লাখ মানুষ আটকা পড়ে আছে। তাদের সরবরাহ ফুরিয়ে আসছে আর শহরটিতে ত্রাণের প্রবেশও আটকে দেওয়া হয়েছে। সপ্তাহ দুয়েক ধরে রুশ বোমাবর্ষণের মধ্যে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ ছাড়াই শহরটির বাসিন্দারা টিকে থাকার চেষ্টা করছে।
রোববার রুশ জেনারেল মিখাইল মিজিএনসেভ আত্মসমর্পণ প্রস্তাবের বিস্তারিত জানিয়ে মস্কোর স্থানীয় সময় ভোর ৫টার মধ্যে শর্ত মেনে নেওয়ার জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন।
প্রস্তাবিত পরিকল্পনা অনুযায়ী, মস্কোর স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে রাশিয়ার সেনারা নিরাপদ করিডোর খুলে দেবে, প্রাথমিকভাবে ইউক্রেইনীয় সেনাদের ও ‘বিদেশি ভাড়াটে সেনাদের’ অস্ত্র সমর্পণ করার জন্য ও শহর ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য।
রুশ বাহিনী জানিয়েছে, এর দুই ঘণ্টা পর সড়কগুলো থেকে মাইন অপসারণ শুরু করবে তারা এবং তা শেষ হলে খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য মানবিক ত্রাণবাহী বহরকে নিরাপদে শহরটিতে প্রবেশ করতে দেবে।
মারিউপোলে ভয়ানক মানবিক বিপর্যয় নেমে আসছে, তা স্বীকার করেছেন জেনারেল মিজিএনসেভ। তিনি জানিয়েছেন, শহরটির বেসামরিক বাসিন্দাদের পূর্ব অথবা পশ্চিম দিক দিয়ে শহর ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার হবে, প্রস্তাবে এমনটি বলা হয়েছে।
এই প্রস্তাবগুলোর জবাবে ইউক্রেইনের উপপ্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেশচুক বলেছেন, ইউক্রেইন মারিওপোলের পতন রোধ করার চেষ্টা বন্ধ করবে না।
“আত্মসমর্পণের, অস্ত্র নামিয়ে রাখার প্রশ্নই উঠতে পারে না,” তিনি এমনটি বলেছেন বলে উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে ইউক্রেইনের অনলাইন সংবাদপত্র ইউক্রাইনস্কা প্রাভদা।
অপরদিকে, ইউক্রেইনে আগ্রাসন শুরুর পর পশ্চিমাদের ব্যাপক অবরোধের মুখে থাকা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ‘নিজেরই তৈরি করা এক বুদবুদে’ আটকা পড়েছেন বলে পশ্চিমা গুপ্তচরদের বিশ্বাস, আর এ বিষয়টি তাদের আরও বেশি ভাবিয়ে তুলেছে।
পুতিন আসলে কী চান, তা বুঝতে বছরের পর বছর ধরে তারা এই রুশ নেতার মনের ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে আসছেন।
কিন্তু এখন, রাশিয়ান সৈন্যরা যখন ইউক্রেইনে থমকে গেছে বলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, এই চাপের মধ্যে পুতিনের প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা আগে থেকে বোঝার জন্য পুতিনের মন পড়ার কাজটি পশ্চিমা গুপ্তচরদের জন্য আরও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
বিবিসি লিখেছে, ইউক্রেইন যুদ্ধ যাতে আরও বিপদজনক দিকে মোড় নিতে না পারে, সেই চেষ্টা করার জন্য পুতিনের মনের দশা বোঝা এখন যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট পুতিন অসুস্থ বলে বাজারে গুঞ্জন রয়েছে। তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, পুতিন আসলে বিচ্ছিন্ন, একা হয়ে পড়েছেন এবং ভিন্ন কোনো বিকল্প ওজন করে দেখার মত অবস্থায় তিনি নেই।
পুতিন যে বিচ্ছিন্ন পড়েছেন, সেই ধারণার পক্ষে পুতিনের কয়েকটি বৈঠকের ছবি কিছুদিন ধরেই সামনে আনছে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো।
বিশেষ করে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রোর সঙ্গে বৈঠকে দীর্ঘ এক টেবিলের দুই প্রান্তে দুই নেতার বসে থাকার ছবি বার বার আলোচনায় আসছে। ইউক্রেইনে যুদ্ধ শুরুর আগ মুহূর্তে নিজের নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সঙ্গে পুতিনের বৈঠকেও সেই দূরত্ব ছিল স্পষ্ট।
একজন পশ্চিমা গোয়েন্দা কর্মকর্তার ব্যাখ্যায়, ইউক্রেইন অভিযানে পুতিনের প্রাথমিক সামরিক পরিকল্পনাটি একজন কেজিবি কর্মকর্তার কাজের মতই দেখাচ্ছিল।
তার ভাষায়, পুরো পরিকল্পনায় সম্পৃক্ত ছিলে খুবই কম সংখ্যক মানুষ, গোপনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল খুব বেশি। কিন্তু এর ফলাফলে যা হয়েছে, তা হল বিশৃঙ্খলা। ইউক্রেইন যুদ্ধে রাশিয়ার কমান্ডাররা প্রস্তুত ছিলেন না এবং তারা কী করতে যাচ্ছেন তা না বুঝেই কিছু সৈন্য সীমান্ত পার হয়ে চলে গেছেন।
https://www.facebook.com/watch?v=364157485640986