দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে খুলেছে স্কুল-কলেজ। এখনো অপেক্ষায় উচ্চ শিক্ষা পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এরই মাঝে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসছে করোনা আক্রান্ত হওয়ার তথ্য। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৮ জন শিক্ষার্থী ও চার জন শিক্ষক। এছাড়াও উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে এক শিক্ষার্থীর। শিক্ষামন্ত্রী করোনা উপসর্গ থাকলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে না পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছেন অভিভাবকদের প্রতি শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসে আক্রান্ত হওয়ার কোনো তথ্য মেলেনি।
দীর্ঘ ১৮ মাস পর গত ১২ই সেপ্টেম্বর খোলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দেশে করোনার পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু স্বল্পসংখ্যক হলেও শিক্ষার্থীদের আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা ভাবিয়ে তুলছে অভিভাবক- শিক্ষার্থীদের।
জানা যায়, ঠাকুরগাঁওয়ে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ শিক্ষার্থী। আক্রান্তদের মধ্যে পাঁচজন সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউপির বাহাদুরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের মধ্যে তিনজন পঞ্চম শ্রেণির ও দু’জন চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। এই দুই শ্রেণির ক্লাস সাময়িক বন্ধ রয়েছে। বাকি আটজন ঠাকুরগাঁও সরকারি বালিকা শিশু সদন পরিবারের সদস্য। তারা হাজিপাড়া আদর্শ হাইস্কুলের ছাত্রী। আক্রান্ত হওয়ার পর তাদের বিদ্যালয়ে যেতে নিষেধ করেছে কর্তৃপক্ষ।
চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার হাসিমপুরে অবস্থিত ড. মনসুর উদ্দীন মহিলা কলেজের তিন শিক্ষার্থীর করোনা শনাক্ত হয়েছে। কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সূত্রে জানা যায়, গত ২০শে সেপ্টেম্বর ড. মনসুর উদ্দীন মহিলা কলেজের ৫০ শিক্ষার্থীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বুধবার তিনজনের করোনা রিপোর্ট পজেটিভ আসে। ড. মনসুর উদ্দীন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. শহীদুল ইসলাম জানান, করোনা শনাক্ত শিক্ষার্থীদের হোম আইসোলেশন নিশ্চিত করা হয়েছে। কলেজ ছাত্রীবাসে থাকতে ইচ্ছুক এমন ৫০ জন শিক্ষার্থীর করোনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
গোপালগঞ্জের দুই স্কুলে দুই শিক্ষার্থীর আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে। গোপালগঞ্জ পৌরসভার ১০২নং বীণাপাণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোনালিসা ইসলামের শরীরে ধরা পড়েছে করোনা। ২১শে সেপ্টেম্বর করোনা পজেটিভ আসে এই শিক্ষার্থীর। এখন বন্ধ রয়েছে পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান। পরিবারের দাবি- স্কুলে যাবার পর থেকেই অসুস্থ হয় মোনালিসা। গোপালগঞ্জেরই কোটালিপাড়ায় তৃতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থী করোনা আক্রান্ত হয়। উপজেলার ৪ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর নাম তিনা খানম। ১৬ই সেপ্টেম্বর পরীক্ষা করালে তিনার করোনা ধরা পড়ে।
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০ শিক্ষার্থী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। তবে সবার শারীরিক অবস্থা ভালো রয়েছে বলে জানিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। করোনা আক্রান্ত ১০ শিক্ষার্থীই হচ্ছে মেডিকেলের দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার্থী। গত ১৩ই সেপ্টেম্বর মেডিকেল কলেজ খুলে দেয়ার পর তারা ক্যাম্পাসে ফেরেন। তারা শামসুদ্দিন ছাত্রাবাসের আবাসিক শিক্ষার্থী। এরপর একেক করে তাদের উপসর্গ দেখা দিলে করোনা পরীক্ষা করা হয়। রিপোর্ট পজেটিভ আসার পর তাদের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টুডেন্ট কেবিনে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। মেডিকেল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ডা. শিশির রঞ্জন চক্রবর্তী জানিয়েছেন, করোনা আক্রান্ত শিক্ষার্থীর বাড়িতে থাকাকালেই ভ্যাক্সিন নিয়েছিলেন। ক্যাম্পাসে ফেরে আক্রান্ত হওয়ার পর তাদের আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। সবাই সুস্থ রয়েছে।
এদিকে দুই ডোজ টিকা নেয়ার পরও করোনা আক্রান্ত হয়েছেন নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার চিড়াভেজা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুশান্ত কুমার রায়। এছাড়াও আক্রান্ত হয়েছেন একই স্কুলের আরও দু’জন শিক্ষক রমিজুল ইসলাম ও আব্দুল জলিল। ২১শে সেপ্টেম্বর পরীক্ষা করান এবং পরদিন করোনা পজেটিভ আসে তাদের। এছাড়া, আক্রান্ত হয়েছেন বাগেরহাট জেলার মোংলা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও তার স্ত্রী।
রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে মানিকগঞ্জ এসকে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী সুবর্ণা ইসলাম রোদেলা। করোনা উপসর্গ নিয়ে বুধবার বিকালে মানিকগঞ্জ থেকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেয়ার পথে এম্বুলেন্সেই মারা যায় রোদেলা। এর আগে ওই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী করোনা পজেটিভ হওয়ায় ওই শ্রেণির পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরবর্তীতে ৫৮ জন সহপাঠীকে করোনা পরীক্ষা করানো হয়েছে। তবে কারও দেহে করোনা শনাক্ত না হওয়ায় এবং আক্রান্ত শিক্ষার্থী সুস্থ হওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে ওই শ্রেণির পাঠদান চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থী আক্রান্তের বিষয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শিক্ষার্থীদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে স্কুলে আসার পর কোনো ছাত্রছাত্রীর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ শিক্ষার্থীরা ঘরে থাকলে হতো না বা স্কুলে যাওয়ার কারণে হয়েছে- এটার কোনো সত্যতা বা প্রমাণ এখন পর্যন্ত নেই। শিক্ষার্থীরা স্কুলে না গেলেও আত্মীয়-স্বজনের বাসায়, বিনোদনের জায়গায় সবখানেই যাচ্ছিল। সুনির্দিষ্ট কিছু জায়গায় দেখেছি শিক্ষার্থীরা করোনা আক্রান্ত হয়েছে। আমরা সেখানে ব্যবস্থা নিয়েছি।
করোনার উপসর্গ থাকলে শিক্ষার্থীদের স্কুলে না পাঠাতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেছেন, আমাদের সবাইকে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। আমরা অভিভাবকদের বলেছি, কোনো শিক্ষার্থীর বিন্দু পরিমাণ উপসর্গও যদিথাকে বা তার বাড়িতে কারো উপসর্গ থাকে, তাহলে শিক্ষার্থীকে স্কুলে পাঠানো যাবে না।
বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের বাড়িতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসার পথে করোনা সংক্রমণ হতে পারে। আমরা এ বিষয়ে সতর্ক আছি। কোথাও এমন কিছু ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং করা হবে। তবে আশার কথা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখন পর্যন্ত এমন ঘটনা ঘটেনি।
ডা. দীপু মনি বলেন, শিক্ষার্থীর ক্লাসে উপস্থিতি নিয়ে চাপ দেয়া যাবে না। দেখতে হবে, সে কেন উপস্থিত হলো না। কিন্তু কোনোভাবেই জোর করা যাবে না। কারণ কোনো শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে পাঠগ্রহণ না করতে পারলেও তার জন্য অনলাইন ও টিভিতে এখনো ক্লাস চালু আছে।