বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা যায়, সকালে ডেঙ্গু রোগীর চাপে হাসপাতালে হিমশিম অবস্থা। কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। উপচেপড়া রোগীর এই চাপ হাসপাতালটির মেডিসিন বহির্বিভাগে লক্ষ্য করা গেছে।
লাইনে দাঁড়ানো রোগীর মধ্যে অনেকরই জ্বরসহ শরীরে অসহ্য ব্যথা। কারও কারও আছে বমি ও পাতলা পায়খানার উপসর্গ। ডাক্তার দেখানোর ভোগান্তি যেন ছাড়িয়ে গেছে মারাত্মক শারীরিক জটিলতাকেও।
কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০১৮ সালের পর এতো রোগীর চাপ কখনও দেখেনি হাসপাতালটি। দিন যত গড়াচ্ছে রোগীর সংখ্যাও যেন বাড়ছে জ্যামিতিক হারে।
রোগীরা বলছেন, দীর্ঘ অপেক্ষার পর ডাক্তার দেখানোর সুযোগ পেলেও হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা নিয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তারা। চিকিৎসক সংকট, প্রয়োজনীয় পরীক্ষার মেশিন নষ্টসহ ভোগান্তির যেন শেষ নেই রোগীদের।শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (মেডিসিন) ডা. মুহাম্মদ আল আমিন সেতু বলেন, রোগী বাড়লেও চিকিৎসকের সংখ্যা আগের মতো থাকায় রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
ডেঙ্গুর এই পরিস্থিতে উদ্বেগজনক উল্লেখ করে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে ডেঙ্গু এখনও মহামারি পর্যায়ে যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।
এদিকে গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের সব রেকর্ড ভেঙে ডেঙ্গুতে একদিনে সর্বোচ্চ ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মোট মারা যান ১৪৬ জন। এ ছাড়া ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ভর্তি ১৭৯২ জনের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯২২ জন। ঢাকার বাইরে ৮৭০ জন।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছে ২৫ হাজার ৭৯২ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ১৫ হাজার ৪৭৬ জন। আর ঢাকার বাইরে ৮ হাজার ৫২৪ জন।
এদিকে এখন পর্যন্ত ভর্তি রোগীদের মধ্যে হাসপাতাল ছেড়েছেন ২০ হাজার ৯৪ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ১২ হাজার ৯১৫ জন এবং ঢাকার বাইরে ৭ হাজার ১৭৯ জন।
গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২৮১ জনের মৃত্যু হয়। তবে এবার ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ ধারণ করায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন সংশ্লিষ্টরা। জুলাইয়ের তুলনায় আগস্ট এবং সেপ্টেম্বরে পরিস্থিতি আরও খারাপের আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।