1. shahajahanbabu@gmail.com : admin :
ডেঙ্গু কী ডেঙ্গু জ্বরের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার - Pundro TV
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:১২ অপরাহ্ন



ডেঙ্গু কী ডেঙ্গু জ্বরের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

স্টাফ রিপোর্টার
  • প্রকাশিতঃ বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৩

ডেঙ্গু জ্বর (সমার্থক ভিন্ন বানান ডেঙ্গি) একটি এডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু ভাইরাস জনিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ। এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণের তিন থেকে পনেরো দিনের মধ্যে সচরাচর ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো দেখা দেয়। উপসর্গগুলির মাঝে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, পেশিতে ও গাঁটে ব্যথা এবং গাত্রচর্মে ফুসকুড়ি।

কারণ

ডেঙ্গু জ্বর ভাইরাস সংক্রামিত একটি রোগ যা এইডিস প্রজাতির (Aedes aegypti বা Aedes albopictus) মশার কামড়ের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছাড়িয়ে পড়ে। এই মশা জিকা, চিকুনগুনিয়া এবং অন্যান্য ভাইরাসও ছড়ায়। ডেঙ্গু ভাইরাসের চার ধরনের সেরোটাইপ আছে। কোন ব্যক্তি যে ভাইরাস দ্বারা প্রথমে আক্রান্ত হয়, সেই ভাইরাসের বিরূদ্ধে তার দেহে প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরী হয়। এজন্য কোন ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় চার বারের মতো ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। যারা আগেও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে ডেঙ্গু হলে তা মারাত্মক হওয়ার ঝুঁকি থাকে। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এটি বেশি দেখা যায়। ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশা কোন ব্যক্তিকে কামড়ালে, সেই ব্যক্তি ৪ থেকে ৬ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়। এবার এই আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোন জীবাণুবিহীন এডিস মশা কামড়ালে, সেই মশাটিও ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশায় পরিণত হয়। এভাবে একজন থেকে অন্য জনে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে।

সময়কাল

সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ থাকে। কারণ এ সময়টিতে এডিস মশার বিস্তার ঘটে। কিন্তু এবার ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই দেখা দিয়েছে।

 এডিস মশা কখন কামড়ায়

ডেঙ্গু জ্বরের জন্য দায়ী এডিস মশা অন্ধকারে কামড়ায় না। সাধারণত সকালের দিকে এবং সন্ধ্যার কিছু আগে এডিস মশা তৎপর হয়ে উঠে। তবে অন্ধকারাছন্ন পরিবেশে দিনের যে কোন সময় কামড়াতে পারে।

 জ্বরের লক্ষণসমূহ

ডেঙ্গু প্রধানত দুই ধরনের হয়ে থাকে, ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বর এবং হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর। প্রকারবেধ অনুসারে লক্ষণ ভিন্ন হয়ে থাকে।

ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বর

ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বর হলে শরীরে সাধারণত তীব্র জ্বরের সাথে তীব্র ব্যথা হয়ে থাকে। কোন কোন সময় জ্বরের মাত্রা ১০৫ ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যায়। এই ব্যথা বিশেষ করে শরীরের বিভিন্ন জোড়ায় জোড়ায় যেমন কোমর, পিঠের অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশিতে তীব্র হয়ে থাকে। এছাড়া মাথায় ও চোখের পেছনে তিব্র ব্যথা হতে পারে। অনেক সময় ব্যথার মাত্রা এত তীব্র আকার ধারণ করে যে মনে হয় যেন হাঁড় ভেঙে যাচ্ছে। এজন্য এই জ্বরকে ‘হাড় ভাঙ্গা জ্বর’ও বলা হয়। জ্বরের ৪ বা ৫ দিনের সময় সারা শরীরে লালচে দানা যুক্ত অ্যালার্জি বা ঘামাচির মতো দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি রোগীর বমি বমি ভাব, এমনকি বমি হতে পারে। এতে রোগী অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করতে পারে। এছাড়া রোগীর খাওয়ার রুচি অনেক কমে যায়। কোনো কোনো রোগীর বেলায় জ্বর দুই বা তিনদিন পর আবার আসে বলে একে ‘বাই ফেজিক ফিভার’ও বলা হয়। লক্ষণগুলো রোগীর বয়স অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। ছোট বাচ্চা ও প্রথমবার আক্রান্তদের থেকে বয়স্ক, শিশু ও দ্বিতীয়বার আক্রান্তদের মাঝে রোগের তীব্রতা বেশি হয়।

হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর

হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর হলে অবস্থাটা আরও জটিল আকার ধারণ করে। এইরুপ জ্বরে শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে যেমন চামড়ার নিচ, চোখের মধ্যে এবং চোখের বাইরে, নাক, মুখ, দাঁতের মাড়ি কিংবা কফের সাথে রক্ত বমি হতে পারে। এছাড়া কালো বা আলকাতরার মত পায়খানা সহ পায়খানার সঙ্গে রক্ত বের হতে পারে। মেয়েদের ক্ষেত্রে অসময়ে ঋতুস্রাব হতে পারে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণ অনেকদিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এই রোগ হলে অনেকের বুকে ও পেটে পানি জমার মত উপসর্গ দেখা দিতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে লিভার আক্রান্ত হলে রোগীর জন্ডিস দেখা দিতে পারে। আবার কিডনি আক্রান্ত হয়ে রেনাল ফেইলিউরের মত ঘটনা ঘটতে পারে। ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহ একটি স্বরূপ হচ্ছে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম যাতে রক্তচাপ হঠাৎ কমে যেতে পারে। অন্যান্য সমস্যার মধ্যে নাড়ির স্পন্দন অত্যন্ত ক্ষীণ ও দ্রুত হওয়া, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, প্রস্রাব কমে যাওয়া, রোগী হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া সহ মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।

পরীক্ষা

অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডেঙ্গু জ্বর হলে খুব বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার দরকার নাই। জ্বরের ৪-৫ দিন পরে সিবিসি এবং প্লাটিলেট করাই যথেষ্ট। এর আগে করলে রিপোর্ট স্বাভাবিক থাকে এবং বিভ্রান্ত হতে পারেন। প্লাটিলেট কাউন্ট ১ লক্ষের কম হলে, ডেঙ্গু ভাইরাসের কথা মাথায় রেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া উচিত। ডেঙ্গু এন্টিবডির পরীক্ষা ৫ বা ৬ দিনের পর করা যেতে পারে, তবে রোগ সনাক্তকরণে সাহায্য করলেও চিকিৎসায় সরাসরি এর কোন ভূমিকা নেই। প্রয়োজনে ব্লাড সুগার, লিভারের পরীক্ষাসমূহ যেমন এসজিপিটি, এসজিওটি, এলকালাইন ফসফাটেজ ইত্যাদি করা যাবে। রোগের তীব্রতা বেধে চিকিৎসক অন্যান্য পরীক্ষা করার পরামর্শ দিতে পারেন।

চিকিৎসা

এখনও এর কার্যকরী কোন টিকা বা ঔষধ আবিষ্কার হয়নি। তাই প্রতিরোধই উত্তম ব্যবস্থা। এই রোগের কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তাই রোগের লক্ষণগুলোর উপর চিকিৎসা দেয়া হয়।

  • রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে।
  • প্রচুর পানি পান করাতে হবে।
  • স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিতে কাপড় ভিজিয়ে শরীর বারবার মুছে দিতে হবে।
  • প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খাওয়ানো যাবে।
  • ডাক্তারের পরামর্শে ব্যথানাশক ঔষধ দিতে হবে।
  • অ্যাসপিরিন বা এজাতীয় ঔষধ দেয়া যাবে না।

চিকিৎসকের পরামর্শ

উপসর্গ অনুযায়ী সাধারণ চিকিৎসাই যথেষ্ট। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়াই সমীচীন-

  • শরীরের যে কোন অংশ থেকে রক্তপাত হলে।
  • প্লাটিলেটের মাত্রা অনেক কমে গেলে।
  • শ্বাসকষ্ট হলে বা পেট ফুলে পানি আসলে।
  • প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে।
  • জন্ডিস দেখা দিলে।
  • অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা দেখা দিলে।
  • প্রচণ্ড পেটে ব্যথা বা বমি হলে।
  • ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চললে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ হয়।

খাবার

স্বাভাবিক খাবারের পাশপাশি প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমন- ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস এবং খাবার স্যালাইন ইত্যাদি।

ঔষধ

ডেঙ্গু জ্বর হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে। স্বাভাবিক ওজনের একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি প্রতিদিন সর্বোচ্চ চারটি প্যারাসিটামল খেতে পারবে। কিন্তু কোন ব্যক্তির যদি লিভার, হার্ট ও কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা থাকে, তাহলে প্যারাসিটামল সেবনের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে ব্যথার জন্য অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ খাওয়া যাবে না। এসময় অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ গ্রহণ করলে রক্তক্ষরণ হতে পারে।

প্রতিরোধ

এ রোগের কোন টিকা নেই। তাই প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে হয়।

  • জমে থাকা খোলা পাত্রের পানিতে মশকী ডিম পাড়ে। পোষা প্রাণির খাবার পাত্র, পানির পাত্র, ফুল গাছের টব, নারকেলের মালা, ফুলদানি, অব্যবহৃত কৌটা, ডাবের খোসা, পরিত্যক্ত টায়ার, খোলা একুরিয়াম, ফ্রিজ বা এয়ার কন্ডিশনার ইত্যাদিতে পানি জমে থাকতে পারে। সেগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে।
  • আক্রান্ত ব্যক্তিকে যাতে মশা কামড়াতে না পারে সেদিকে কড়া নজর দিতে হবে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে অবশ্যই সব সময় মশারির মধ্যে রাখতে হবে, যাতে রোগীকে কোন মশা কামড়াতে না পারে।
  • ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধের মূল মন্ত্রই হলো এডিস মশার বিস্তার রোধ এবং এই মশা যেন কামড়াতে না পারে তার ব্যবস্থা করা। মনে রাখতে হবে, এডিস মশা অভিজাত এলাকায় বড় বড় দালান কোঠায় বাস করে। স্বচ্ছ পরিষ্কার পানিতে এই মশা ডিম পাড়ে। ময়লাযুক্ত দুর্গন্ধ ড্রেনের পানি এদের পছন্দ নয়। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস মশার ডিম পাড়ার উপযোগী স্থানগুলোকে পরিষ্কার রাখতে হবে এবং একই সাথে মশক নিধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
  • এডিস মশা সাধারণত সকাল ও সন্ধ্যায় কামড়ায়। তবে অন্য সময়ও কামড়াতে পারে। তাই দিনের বেলা শরীর ভালোভাবে কাপড়ে ঢেকে বের হতে হবে, প্রয়োজনে মসকুইটো রিপেলেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। মশক নিধনের জন্য স্প্রে, কয়েল, ব্যাট ব্যবহারের সাথে সাথে মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য প্রয়োজনে দিনে ও রাতে মশারী ব্যবহার করতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বর হয়তো বা নির্মূল করা যাবে না। ডেঙ্গু জ্বরের মশাটি আমাদের দেশে পূর্বেও ছিল, এখনও আছে, মশা প্রজননের এবং বংশবৃদ্ধির পরিবেশও আছে। ডেঙ্গু জ্বর ভবিষ্যতেও থাকতে পারে। তাই সচেতনতা ও প্রতিরোধের মাধ্যমেই এর হাত থেকে বেঁচে থাকতে হবে।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২
Developed By ATOZ IT HOST