শেষ ২ দিনে প্রয়োজন ৬৯ রান, হাতে ৮ উইকেট। এরপরও লর্ডসে যখন চতুর্থ দিনে দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাট করতে নামে, তখনো দলটা চাপে ছিল বেশ। মাঠে শোনা যাচ্ছিল ‘চোকার’ শব্দটা। অস্ট্রেলিয়া বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছিল, এখনও কাজটা শেষ হয়নি।
টেম্বা বাভুমা প্যাট কামিন্সের বলে পিছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন, তখনও দরকার ৬৫। এরপর ট্রিস্টান স্টাবসকে মিচেল স্টার্ক এক দুর্দান্ত বলে বোল্ড করেন, তখনও ৪১ রান দূরে প্রোটিয়ারা। তখন মনে হচ্ছিল, অঘটন হলেও হয়ে যেতে পারে।
তবে এরপরও আর কোনো ‘অ্যান্টি ক্লাইম্যাটিক’ কিছু হতে দেয়নি দক্ষিণ আফ্রিকা। বিপদ ছাড়াই ইতিহাসটা গড়ে ফেলে। এইডেন মার্করাম এক মহাকাব্যিক ইনিংসে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন।
বাভুমা জানালেন, এখনকার অস্ট্রেলিয়া আগের মতো নয়, দলটা খুব একটা স্লেজিং করে না। তবে একটা-দুটা কথা যে হয়নি তা নয়। তিনি বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলা গত কয়েক বছরে একটু বদলেছে। আগের মতো মাঠে খুব একটা কথা বলে না তারা। তবে শরীরী ভাষা, স্কিলের মাধ্যমে আগ্রাসী মনোভাবটা বোঝা যায়।’
শেষ ৬০ রানে ৮ উইকেট খুইয়ে বসবে দক্ষিণ আফ্রিকা, এমন টিপ্পনিও কেটেছেন অস্ট্রেলিয়ার কেউ কেউ, জানালেন বাভুমা। তিনি বলেন, ‘আজ সকালে আবার চোকার কথাটা শুনেছি। তাদের একজন তো বলেছিল, আমরা নাকি ৬০ রানের নিচে ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলতে পারি। আমি সেটা পরিষ্কার শুনেছি।’
অস্ট্রেলিয়া ম্যাচটাকে যতদূর সম্ভব টেনে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। নতুন বলও নেয় তারা। তবে তখন দরকার মাত্র ১৪ রান। নতুন বলের প্রথম বলেই মার্করাম মিড উইকেট দিয়ে চার মেরে জয় নিশ্চিত করেন।
প্যাট কামিন্স বলেন, ‘আমরা ভাবছিলাম ম্যাচটাকে যতটা সম্ভব টেনে নিয়ে যাই। পেসারদের দিয়ে রান রেট দুইয়ের আশপাশে রাখি। লায়ন ভালো বল করছিল। ভাবছিলাম, যদি মেঘ আসে, কিংবা নতুন বল কিছু করে বসে, তাহলে একটা সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।’
তৃতীয় দিন সেঞ্চুরি করার পর আবেগাপ্লুত হয়েছিলেন মার্করাম। আগের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজে ব্যর্থ হওয়া নিয়ে তখন বলেছিলেন তিনি। এবার বললেন, অতীতের সেই ব্যর্থতার কথাটা ভুলে যাওয়ার সময় এসেছে।
তিনি বলেন, ‘এখন আর সেটা শুনতে না হলে ভালো লাগবে। এটা ঠিক, বাইরের অনেক কিছু আপনাকে অনুপ্রাণিত করতে পারে। তবে সেটাই মূল উদ্দেশ্য নয়। আমরা কাজটা শেষ করেছি। আর সত্যি সত্যিই সেটা শেষ করতে পারাটা এই দলের জন্য অনেক বড় একটা ব্যাপার।’
মার্করামকে প্রশংসায় ভাসান প্যাট কামিন্সও। বলেন, ‘অনেকেই আইপিএলে তার সঙ্গে খেলেছে। সে খুব ভালো মানুষ। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের বিপক্ষে সবকিছুই সহজ করে ফেলেছিল সে। আমরা অনেক কিছুই চেষ্টা করেছি, কিন্তু তার সব কিছুরই উত্তর ছিল।’
তার বিশ্বাস, দক্ষিণ আফ্রিকা যোগ্য হিসেবেই ফাইনাল জিতেছে। কামিন্সের কথা, ‘সব দলেরই ফাইনালে আসার পথ আলাদা ছিল। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা পুরোপুরি যোগ্য দল হিসেবেই শিরোপাটা জিতেছে। তারা দেখিয়েছে কেন তারা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যোগ্য।’