ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় মানবিক সংকট যখন চরমে, ঠিক তখনই বিভিন্ন দেশ মিলে একটি বড় ধরণের ত্রাণবাহী বিমান অভিযান চালিয়েছে। এ অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত ইউএই (UAE) ও জর্ডান, অংশ নিয়েছে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি এবং স্পেন। শনিবার (২ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
শুক্রবার (১ আগস্ট) গাজার দিকে চালানো হয় এই বহুজাতিক ত্রাণবাহী বিমান অভিযান। এটি ছিল ৫৯তম ‘এয়ারড্রপ’ বা বিমান থেকে ত্রাণ ফেলার কার্যক্রম। এই ত্রাণ মিশনের উদ্দেশ্য ছিল অবরুদ্ধ গাজায় জরুরি খাদ্য ও ওষুধ পৌঁছে দেওয়া, যেখানে দীর্ঘ সময় ধরে ইসরায়েলের অবরোধে খাদ্য, পানি ও ওষুধ সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
ইউএই ( UAE) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবারের এই বিমান অভিযান পরিচালিত হয় সংযুক্ত আরব আমিরাত ও জর্ডানের যৌথ নেতৃত্বে। এতে অংশ নেয় ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও স্পেনের সাতটি বিমান। ইউএই পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান এবং জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি ফোনে একে অপরের সঙ্গে গাজার পরিস্থিতি এবং সাহায্য সমন্বয় বিষয়ে আলোচনা করেন।
ইসরায়েলের অবরোধে খাদ্য, পানিউএই-এর প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদের নির্দেশে দেশটি গাজায় ভূমি, জল ও আকাশপথে ত্রাণ পাঠানোর বৈশ্বিক উদ্যোগে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তার মতে, এই ধরনের সম্মিলিত উদ্যোগ আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তার একটি কার্যকর উদাহরণ।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এর আগে জানায় যে, তারা এখন বিদেশি দেশগুলোকে গাজায় আকাশপথে ত্রাণ ফেলার অনুমতি দিচ্ছে। তবে এই এয়ারড্রপ পদ্ধতির সমালোচনাও রয়েছে। আগের কয়েকটি ঘটনায় দেখা গেছে, বিমান থেকে ফেলা ত্রাণ গাজার বুভুক্ষু মানুষের ওপর পড়েছে, যার ফলে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। অনেক ত্রাণ সামগ্রী সাগরে পড়ে যায়, ফলে মানুষ সমুদ্র উপকূলে ছুটে যায়, যা নতুন করে বিপদের সৃষ্টি করে।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ডব্লিউএফপি (WFP) সম্প্রতি জানায়, গাজার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ কয়েকদিন ধরে কোনো খাবার পাচ্ছেন না। তাদের মতে, প্রতি চারজন গাজাবাসীর মধ্যে একজন এখন দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি এবং অন্তত ১ লাখ নারী ও শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে।
ইসরায়েল গত ১৮ বছর ধরে গাজায় অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে। গত ২ মার্চ থেকে সব সীমান্ত পয়েন্ট বন্ধ করে দেয়, ফলে ত্রাণ প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। গাজার ২৪ লাখ মানুষের জন্য প্রতিদিন অন্তত ৬০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রয়োজন হলেও এই মুহূর্তে তা প্রবেশ করতে পারছে না।
গত ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে ইসরায়েল গাজায় যে হামলা শুরু করেছে, তাতে এখন পর্যন্ত ৬০,৩০০-র বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। বেশিরভাগই নারী ও শিশু। অব্যাহত বোমাবর্ষণে গাজা এখন প্রায় বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে, যার ফলে খাবার ও ওষুধের সংকট ভয়াবহ আকার নিয়েছে। তথ্যসূত্র : আনাদোলু এজেন্সি, খালিজ টাইমস