শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, মুজিব চর্চা যত আমরা করবো তত আমরা আমাদের আত্মপরিচয় উপলব্ধি করতে পারবো। সে পরিচয় আমরা তত বেশি করে পাবো। মুজিব চর্চা মানে আমাদের ইতিহাসকে জানা, আমাদের গন্তব্যকে চেনা, সেই গন্তব্যে পৌঁছানোর পথ-পাথেয় জেনে নেওয়া। তাই মুজিব চর্চা আমাদের জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা যেখানে সোনার মানুষ গড়ার হাতিয়ার, তা যদি মুজিব চর্চাবিহীন হয় তাহলে সে শিক্ষা সোনার মানুষ গড়ার হাতিয়ার হতে পারে না। তাই শিক্ষার প্রতিটি স্তরে মুজিব চর্চা অত্যাবশ্যকীয়ভাবে আমাদের থাকা উচিত।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গতকাল রোববার রাতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
মন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যত বেশি মুজিব চর্চা হবে তত বেশি এই সমাজ সঠিক পথে থাকবে। কখনো পথ থেকে বিচ্যুতি হবে না।
তিনি আরও বলেন, পিতা মুজিবের নেতৃত্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ যখন গড়ে উঠেছিল, ঘুরে দাঁড়িয়েছিল, বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে নিজের উপস্থিতি, স্বীকৃতি সব আদায় করে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অগ্রযাত্রা শুরু করেছিল ঠিক সেই সময়ে একাত্তরের পরাজিত অপশক্তি এবং তাদের দোসরেরা আঘাত এনেছিল। এই ষড়যন্ত্রকারীরা জানতো, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে সরিয়ে দিলে, তাদের আশা পূর্ণ হবে না, সাধের পাকিস্তানকে ফিরিয়ে আনা যাবে না তাই বঙ্গবন্ধুকে নির্বংশ করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারে এমন কেউ যেন না থাকে।
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে নিয়ে ভয়ের কারণে বঙ্গবন্ধুকে ঢাকাতে সমাহিত করেনি। তাঁর শবদেহ নিয়েও তাদের কত ভয় ছিল। পরিবারের সকল সদস্যকে ঢাকায় সমাহিত করলেও বঙ্গবন্ধুর শবদেহকে নিয়ে গিয়েছিল টুঙ্গিপাড়ায় এবং চরম অবহেলায় সেখানে তাকে দ্রুত সমাহিত করা হয়েছিল। কারণ তারা জানতো ঢাকায় সমাহিত করা হলে কোন সময়ই লাগবে না প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের ঝড় উঠতে।
ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক হিসেবে অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. শামিমুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন। সভায় সভাপতিত্ব করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী। আলোচনা সভাটির সঞ্চালনায় ছিলেন বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. জি এম মনিরুজ্জামান।
মুখ্য আলোচক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, যখনই সত্যের সাথে অসত্যের লড়াই হয় তখন সত্য একা হয়ে দাঁড়ায়। অসত্যের বাহিনী বিশাল। কারণ তার পেছনে থাকে মূর্খ, লোভী, স্বার্থপর এবং বিশ্বাসঘাতকেরা। এগুলোকে তুচ্ছ বিবেচনা করে বঙ্গবন্ধু এগিয়ে এসেছেন। বঙ্গবন্ধুর সমস্ত জীবন সত্যের মধ্যে নিহিত। বঙ্গবন্ধু জীবনে কখনো মিথ্যা উচ্চারণ করেননি। তিনি চাপের মুখে, জেল-জুলুম, ফাঁসির মুখে কখনো মাথা নত করেননি। সে কারণেই আমরা এ দেশ পেয়েছি। আজকে যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা বলেন, তাদের মুখে শুধু এটা বললে হবে না সেটা মনের মধ্যে ধারণ করতে হবে।
উপাচার্য প্রফেসর ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, আমি বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর একক নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে আমরা কতটা সচেতন? আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ পাইনি কিন্তু বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। কাজেই সকলে এই অর্থনৈতিক মুক্তি, সমৃদ্ধি অর্জন এবং শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে নিজেদের পরিচিত করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করা প্রয়োজন।