এপ্রিলের শেষে ইন্দোনেশিয়া থেকে প্রায় ৯০ হাজার টন পাম তেল আমদানির ঋণপত্র খুলেছিলেন ব্যবসায়ীরা। গত ২৮ এপ্রিল দেশটি পাম তেল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর এই তেল আমদানিতে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এখন আবার ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি বাজার খুলে দেওয়ার ঘোষণায় পাম তেলের সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটতে শুরু করেছে। ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় বিশ্ববাজারেও এখন পাম তেল ও সয়াবিন তেল দুটোরই দাম সংশোধন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত ২৮ এপ্রিল ইন্দোনেশিয়া পাম তেল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। গতকাল বৃহস্পতিবার দেশটি সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কথা জানায়। নিষেধাজ্ঞার ২৫ দিন পর আগামী সোমবার থেকে রপ্তানি বাজার খুলবে বলে জানান দেশটির প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো। ইন্দোনেশিয়া পাম তেলে বিশ্বের শীর্ষ উৎপাদক ও রপ্তানিকারক দেশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগের চার দিনে প্রায় ৯০ হাজার টন তেল আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়। এসব তেল জাহাজে তোলার আগেই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়ে যায়। ফলে আটকে যায় এসব আমদানি।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসের হিসাবে, বাংলাদেশে পাম তেলের ৯০ শতাংশ আমদানি হয়েছে ইন্দোনেশিয়া থেকে। দেশটি রপ্তানি বন্ধের পর বিকল্প উৎস থেকে আমদানি না করে ব্যবসায়ীরা অপেক্ষায় ছিলেন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের। গতকাল রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার খবরে তাই স্বস্তি ফিরেছে আমদানিকারকদের মধ্যে।
জানতে চাইলে ভোজ্যতেলের শীর্ষ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান টি কে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার গনমাধ্যমকে বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়া নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় ভোজ্যতেলের দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা কমবে। এই খবর অবশ্যই আমাদের জন্য স্বস্তির। আর যেসব ঋণপত্রের বিপরীতে পাম তেল আমদানি হয়নি, সেগুলো সরবরাহ পেতে এখন আর সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এরপরও দেশটির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অফিশিয়াল সিদ্ধান্ত কী আসে, কোনো শর্ত দেয় কি না, সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’
গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বৈশ্বিক পণ্যবাজারে অস্বাভাবিক উত্থান হয়। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে সব ধরনের ভোজ্যতেলের। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি সংস্থার হিসাবে, রাশিয়া ও ইউক্রেন বিশ্বে সূর্যমুখী তেলের এক-তৃতীয়াংশ জোগান দিত। সূর্যমুখী তেলের সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় চাপ পড়ে পাম ও সয়াবিন তেলের ওপর। বিশ্ববাজারে যখন দাম কিছুটা কমে আসছিল, সে সময় ইন্দোনেশিয়া পাম তেল রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। আর তাতেই বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দামে রেকর্ড হয়।
ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার দিন (২৮ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বোর্ড অব কমোডিটি এক্সচেঞ্জে প্রতি টন সয়াবিন তেল বেচাকেনা হয় ১ হাজার ৯৯৭ ডলারে। মালয়েশিয়ার কমোডিটি এক্সচেঞ্জে পাম তেলের দর ছাড়ায় ১ হাজার ৭০০ ডলার। এর পর থেকে উত্থান-পতন চলছিল বৈশ্বিক বাজারে। তবে ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি বাজার খুলে দিতে পারে—এমন আভাসের প্রভাব পড়েছিল বৈশ্বিক বাজারে। তাতে গত বুধবার শিকাগোতে প্রতি টন সয়াবিন তেল ১ হাজার ৭৭৫ ডলারে বেচাকেনা হয়।
এদিকে পাম তেলের দাম বাড়তে থাকায় আমদানিও কমে আসছিল। চলতি অর্থবছরের ১৫ মে পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের ট্যাংক টার্মিনাল থেকে ১১ লাখ ৯৬ হাজার টন পাম তেল খালাস করেছেন ব্যবসায়ীরা। গত অর্থবছরের একই সময়ে ১২ লাখ ১৮ হাজার টন পাম তেল খালাস করেন তাঁরা। অর্থাৎ এ সময়ে আমদানি কমেছে প্রায় ২৩ হাজার টন।