জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, হাসপাতালগুলো নির্মাণের জন্য স্থান চূড়ান্ত হয়েছে। জমির প্রাপ্যতাও নিশ্চিত হওয়া গেছে। এখন নকশা ও খরচ প্রাক্কলন করে প্রকল্প তৈরি করা হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, আটটি বিভাগীয় শহরে একসঙ্গে সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল নির্মাণ করতে গেলে অনেক অর্থের প্রয়োজন হবে। তাই একসঙ্গে সব হাসপাতাল নির্মাণ না করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ শুরু করা হবে। তবে একেকটি হাসপাতাল নির্মাণ করতে কত টাকা খরচ হবে, তা এখন পর্যন্ত ঠিক হয়নি।
সূত্র জানায়, প্রথমে সরকারি তহবিল থেকে এই হাসপাতাল নির্মাণের চেষ্টা করা হবে। সরকারি তহবিল থেকে পুরো অর্থ না মিললে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার কথাও ভাবছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই ঋণের ব্যবস্থা করতে ইতিমধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়েছে।
জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কে এম আলী আজম প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি কর্মচারীদের জন্য সব বিভাগে হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী সায় দিয়েছেন। জমির নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে। এসব হাসপাতাল সরকারি তহবিলে অথবা বিদেশি ঋণে নির্মাণ করা হতে পারে।
কোন পদ্ধতিতে এসব হাসপাতাল পরিচালনা করা হবে, জানতে চাইলে কে এম আলী আজম বলেন, অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে চিকিৎসক নেওয়া হবে। প্রয়োজন হলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় চিকিৎসক নিয়োগ দেবে।
বিভাগীয় শহরগুলোতে সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাবটি গত বছরের ৯ ডিসেম্বর নীতিগত অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সরকারপ্রধানের কাছ থেকে অনুমোদন পাওয়া যায় ১৪ ডিসেম্বর।
সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে হাসপাতাল নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কথা হয় কয়েকজন বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, কোনো সরকারি কর্মচারী গুরুতর অসুস্থ হলে তাঁকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যেতে হয়। সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে হাসপাতাল হলে তাঁদের আর ঢাকার মুখাপেক্ষী হতে হবে না।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিভাগীয় কমিশনার সমন্বয় সভায় আটটি বিভাগীয় শহরে সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল নির্মাণের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, দ্রুত হাসপাতালের অর্গানোগ্রাম চূড়ান্ত করা হবে। হাসপাতাল পরিচালনার জন্য থাকবেন মহাপরিচালক (ডিজি) ও অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি)। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নিজেই চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ দেবে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকেও চিকিৎসক ও নার্স নেওয়া হবে।
সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিভাগীয় শহরে শুধু হাসপাতালই নয়, ডরমিটরিও নির্মাণ করা হবে বলে একই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। সরকারের গণপূর্ত অধিদপ্তর ইতিমধ্যে দেশের সব জেলায় ডরমিটরি নির্মাণের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, দেশে এখন রাজধানীর ফুলবাড়িয়ায় ‘সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল’ নামের একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল রয়েছে। এটি আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ছিল। ২০১৫ সাল থেকে হাসপাতালটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিচালিত হচ্ছে।
ঢাকার ফুলবাড়িয়ার সরকারি কর্মচারী হাসপাতালটি ১৫০ শয্যাবিশিষ্ট। এটিকে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করার প্রক্রিয়া চলছে। মহামারিকালে হাসপাতালটিতে করোনার রোগীদের সেবা দেওয়া হয়। এখন অন্য রোগীও ভর্তি করা হচ্ছে।
আটটি বিভাগীয় শহরে হাসপাতালগুলো নির্মাণ করা হবে ফুলবাড়িয়ার সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের আদলে। নাম দেওয়া হবে ‘বিভাগীয় সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল’।
ফুলবাড়িয়ার সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের উপসচিব দিদারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এখানে সচিব থেকে শুরু করে অফিস সহায়ক—সবাই সেবা নিতে আসেন। মাঝে এখানে করোনার রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
রাজশাহী বিভাগীয় সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের জন্য বোয়ালিয়া থানায় চার একর জমি পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে প্রস্তাবটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। বিষয়টি নিশ্চিত করে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালটি নির্মিত হলে বিভাগীয় পর্যায়ে সরকারি পিয়ন থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সবাই এখানে চিকিৎসাসেবা নিতে পারবেন।
খুলনা বিভাগীয় সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের জন্য জমি পাওয়া গেছে দুই একর। এই জমি বিভাগীয় কমিশনার অফিসের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল বলে জানান খুলনা জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের দপ্তরের জন্য বরাদ্দ জমি থেকে সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল নির্মাণে দুই একর জমি দেওয়া হচ্ছে বলে প্রথম আলোকে জানান ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক এনামুল হক।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিভাগীয় শহরে হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। কারণ, সামরিক বাহিনী ও পুলিশের জন্য আলাদা হাসপাতাল আছে। বিভাগীয় পর্যায়ে হাসপাতালগুলো নির্মাণ করা হলে সরকারি কর্মচারীদের আর ঢাকামুখী হতে হবে না। এ ছাড়া সরকারের ছোট পদে কর্মরত ব্যক্তিদের আর্থিক অবস্থা ততটা ভালো থাকে না। তাঁরা বিভাগীয় পর্যায়ের হাসপাতাল থেকে সেবা নিতে পারবেন।’