নাটকের পাশাপাশি কয়েকটি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন নসুরাত ইমরোজ তিশা। তবে এর আগে কোনো চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে এমন ঘটনা ঘটেনি, যা ঘটেছে ‘বঙ্গবন্ধু’ চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে। এই চলচ্চিত্রে তিনি মাত্র এক টাকা সম্মানী নিয়েছেন। প্রথম আলোকে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন স্বয়ং তিশাই। গত বছরের এপ্রিলে তিশা ‘বঙ্গবন্ধু’ চলচ্চিত্রে তাঁর অংশের শুটিং শেষ করেন। চলচ্চিত্রে তাঁর অংশের শুটিং হয়েছে ভারতের মুম্বাইয়ে। এই চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী রেণুর (শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব) চরিত্রে। শুটিং শেষে তিনি জানতে পারেন, মা হতে যাচ্ছেন। তারপর সব ধরনের আউটডোর শুটিং থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন তিশা। এদিকে মাত্র এক টাকা সম্মানী নেওয়ার বিষয়ে তিশা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সম্মানী এক টাকা নিয়েছি, এটা নিয়ে অনেকে অনেক কিছু আমাকে জিজ্ঞাসা করেছে। কী কারণে, কেন এমনটা করেছি? আমি বলতে চাই, সম্মানী নেওয়ার ব্যাপারটা একেবারে ব্যক্তিগত ইস্যু ছিল। এখানে ভালোবাসা ও আবেগটা বেশি কাজ করেছে। আমার মনে হয়েছে, আমাদের দেশের জন্মের ইতিহাস নিয়ে একটা চলচ্চিত্র হচ্ছে, যেখানে আমি বেগম মুজিবের চরিত্রে অভিনয় করেছি—এমন একটি কাজের জন্য তো পারিশ্রমিক নির্ধারণ করার কথা ভাবতেই পারি না। এই চরিত্রের জন্য কোনো অ্যামাউন্টই কিছু নয়। তাই আমি ভেবেছি, শুধু শিল্পী হিসেবে মাত্র এক টাকা সম্মানী নেব।’ ‘বঙ্গবন্ধু’ চলচ্চিত্রে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ২০ বছর বয়স থেকে মৃত্যুর আগপর্যন্ত চরিত্রে তিশাকে দেখা যাবে। অভিনয়শিল্পীদের যাঁরাই এই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন, সবার মতে, তাঁরা ইতিহাসের অংশ হতে পারছেন। তিশাও তেমন মনে করছেন। তিনি বললেন, ‘এই ছবিতে কাজ করা ইতিহাসের অংশ হওয়াই। কিছু কিছু অনুভূতি সব সময় প্রকাশ করা সম্ভব হয় না। আমি মনে করি, বড় সুযোগগুলোর সঙ্গে থাকে বড় রকমের দায়িত্ব। এটা অনেক বড় প্ল্যাটফর্ম। বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস যাঁর মাধ্যমে রচিত হয়েছে, যাঁর কথা সেই ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি, সেই ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে সেই পরিবারের অংশ হতে পারছি, এটা তো নিঃসন্দেহে অভিনয়শিল্পী হিসেবে ভীষণ ভালো লাগার। দেশের বাইরের একটি ইউনিটের সঙ্গে কাজ করেছি, এটাও দারুণ একটা অভিজ্ঞতা।’
সিনেমার রেণু হয়ে ওঠার পেছনে তিশাকে অনেক সময় দিতে হয়েছে। রেফারেন্স কী কী সামনে ছিল জানতে চাইলে তিশা বললেন, ‘সেই অর্থে আমার কাছে কোনো রেফারেন্স ছিল না। বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে যিনি অভিনয় করছেন, তাঁর সুবিধা হচ্ছে, মানুষটার ভাষণ থেকে শুরু করে অনেক কিছু সংরক্ষিত আছে। তিনি আমাদের দেশের সম্মুখভাগের নায়ক। আর রেণু চরিত্রটা পেছনের হিরো। তিনি পেছনে থেকে বঙ্গবন্ধুকে সাপোর্ট করে গেছেন। কখনো মানুষটা সামনে আসেননি। তাই এ ধরনের মানুষের চরিত্র ফুটিয়ে তোলাটা কঠিন। প্রস্তুতির কথা যদি বলতেই হয়, প্রথমবার মুম্বাইয়ে শুটিংয়ে যাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমাদের একটা লম্বা সেশন ছিল। সেখানেই তাঁর মায়ের চরিত্র সম্পর্কে ৯০ ভাগ ধারণা পাই। তাঁর মুখ থেকে শুনেই আমার চরিত্রটি এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। তিনি নিখুঁতভাবে এত বিস্তারিত বলেছেন, ওটাই আমাকে চরিত্রটির উপস্থাপনে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছে। বই পড়ে অনেক ইতিহাস হয়তো জেনেছি, কিন্তু ভেতরের মানুষটাকে জানার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছেন।’