বিশ্বে প্রথমবারের মত যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিকের দেহে জিন বিন্যাস বদলে নেওয়া শূকরের হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাল্টিমোরের ইউনিভার্সিট অব মেরিল্যান্ড মেডিকেল সেন্টারে দীর্ঘ সাত ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে ৫৭ বছর বয়সী ডেভিড বেনেটের দেহে পরীক্ষামূলকভাবে হৃৎপিণ্ডটি বসানো হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিন দিন আগে ওই অস্ত্রোপচারের পর থেকে ভালোই আছেন বেনেট। সোমবার থেকে নিজে থেকেই শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছেন। বেনেটের জীবন বাঁচাতে চিকিৎসকরা শূকরের হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনকেই ‘শেষ উপায়’ বিবেচনা করলেও দীর্ঘ মেয়াদে তিনি কেমন থাকবেন সে বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়।
এই প্রতিস্থাপন করা না হলে বেনেট মারা যেতে পারেন, এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এই অস্ত্রোপচরের জন্য বিশেষ অনুমোদান দেয়। অস্ত্রোপচারের এক দিন আগে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বেনেট বলেন, “বিষয়টা এমন যে, হয় মরতে হবে নয়তো প্রতিস্থাপন করতে হবে। আমি জানি এটা হচ্ছে অন্ধকারে ঢিল ছোড়া, কিন্তু এটাই আমার শেষ ভরসা।” অস্ত্রোপচারের পরের অবস্থা জানিয়ে সার্জন বার্টলে গ্রিফিথ বলেন, অত্যন্ত সতর্কাতার সঙ্গে বেনেটের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। “আমরা মানব শরীরে এর আগে এটা করিনি এবং আমি মনে করি তিনি যে থেরাপির মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন, আমরা তার চেয়ে ভালো কিছু তাকে দিয়েছি।” তবে প্রতিস্থাপন করা হৃৎপিণ্ড নিয়ে বেনেটের আয়ু কেমন হতে পারে, সে বিষয়ে কোনো ধারণা দিতে পারছেন না এই চিকিৎসক। তিনি বলেন, “তিনি কতোটা সময় পাবেন (বাঁচবেন)- একদিন, সপ্তাহ, মাস, না কি বছর, আমি জানি না।” অবশ্য বেনেট হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন নিয়ে আশাবাদীই ছিলেন।
অস্ত্রোপচরের আগে তিনি বলেছিলেন, “আমি আশা করছি, সুস্থ হয়ে আমি আবারও বিছানা ছাড়তে পারব।” হৃদযন্ত্রের গুরুতর রোগ ধরা পরার পর থেকে একটি যন্ত্রের সহায়তায় বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল বেনেটকে। অস্ত্রোপচারের আগে ছয় সপ্তাহ ধরে তিনি হাসপাতালে শয্যাশায়ী ছিলেন।চিকিৎসকরা সে সময় পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বলেছিলেন, মানবদেহের হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন করার মত শারীরিক অবস্থাও বেনেটের নেই। তখনই জিন বিন্যাস বদলে দেওয়া শূকরের হৃদপিণ্ড ব্যবহারের বিষয়টি আসে।এর আগে গত অক্টোবরে প্রথমবারের মত পরীক্ষামূলকভাবে মানুষের শরীরে শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপনে সফলতা পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা। গত কয়েক দশক ধরে গবেষকরা পশুদেহ থেকে মানবদেহে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করছিলেন। কিন্তু মূল সমস্যা ছিল, মানবদেহ যাতে তাৎক্ষণিকভাবে সেই অঙ্গ প্রত্যাখ্যান না করে, তা নিশ্চিত করা।
সেজন্য গবেষকরা শূকরের জিন বিন্যাস থেকে একটি অংশ বাদ দেন, যেটি শর্করা তৈরি করত। এরপর সরকারের অনুমতি নিয়ে সেই পরিবর্তিত জিনের একটি শুকরের জন্ম দিয়ে সেটি বড় করে তোলা হয়। জিন রূপান্তরিত ওই শূকরের হৃদযন্ত্রের পাশাপাশি অন্যান্য অঙ্গও মানুষের দেহে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব বলে গবেষকরা মনে করেন। শূকরের হৃদযন্ত্রের ভালভ মানবদেহে বসানোর বিষয়টি ইতোমধ্যে সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছে। অঙ্গ প্রতিস্থাপন করতে না পেরে যুক্তরাষ্ট্রে দিনে ১৭ জন রোগীর মৃত্যু হয়। সে দেশে এক লাখেরও বেশি মানুষ কোনো না কোনো অঙ্গ প্রতিস্থাপনের অপেক্ষায় রয়েছেন। ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড স্কুল অব মেডিসিনের সার্জন বার্টলে গ্রিফিথ এক বিবৃতিতে বলেন, “প্রতিস্থাপনের জন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের যে সংকট, তার সমাধানের পথে আমাদের আরও এক ধাপ এগিয়ে নিল এই প্রতিস্থাপন।”