1. shahajahanbabu@gmail.com : admin :
খুলনায় নারী ফুটবলারদের মারধর কারীদের কঠিন শাস্তি দাবি - Pundro TV
বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০৩:১৬ অপরাহ্ন



খুলনায় নারী ফুটবলারদের মারধর কারীদের কঠিন শাস্তি দাবি

অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিতঃ শনিবার, ৫ আগস্ট, ২০২৩

কৃষ্ণা বিশ্বাসই করতে পারছেন না, কোনো মেয়ে কেন এমন করলেন!

খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার তেঁতুলতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নারী ফুটবলারদের ছবি তুলেছিলেন নূপুর খাতুন নামের এক মেয়ে। ঘটনার সূত্রপাত সেখান থেকেই। ওই মাঠে সুপার কুইন ফুটবল একাডেমির মেয়েরা কেন ‘হাফপ্যান্ট’ পরে ফুটবল খেলছে—নূপুর খাতুনের অভিযোগ ছিল সেটিই। একাডেমির এক সদস্যের ছবি তাঁর পরিবারের সদস্যদের দেখান নূপুর। একই সঙ্গে মেয়ে হাফপ্যান্ট পরে ফুটবল খেলে বলে পরিবারের সদস্যদের কয়েক কথা শুনিয়েও আসেন।

সেই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর সতীর্থরা নূপুরের বাড়ি গিয়েছিল এটা জানতে যে কেন তিনি এমন কাজ করলেন। সেই ঘটনা কেন্দ্র করে তাঁদের মারধর করেন নূপুরের বাড়ির লোকজন। এতে আহত হয় চার নারী ফুটবলার মঙ্গলী বাগচী, সাদিয়া নাসরিন, হাজেরা খাতুন ও জুঁই মণ্ডল।

মেয়েদের জাতীয় ফুটবল দলের অন্যতম সদস্য কৃষ্ণা রানি সরকারের কাছে পুরো ব্যাপারটি অবিশ্বাস্য লাগছে, ‘একটা মেয়ে ছবি তুলে ঝামেলা বাধাল! একটা মেয়ে হয়ে অন্য মেয়ের ক্ষতি সে কীভাবে করল! আমার মাথায় ঢুকছে না।

খুলনায় ফুটবল খেলতে গিয়ে নারী ফুটবলারদের অপদস্থ হওয়া ও শারীরিকভাবে আহত হওয়ার ঘটনাটি ছুঁয়ে গেছে জাতীয় নারী ফুটবল দলের সদস্যদের। কৃষ্ণা ঘটনাটির নিন্দা জানিয়ে এর সুষ্ঠু বিচার চেয়েছেন। তিনি মনে করেন, এমন ঘটনা ঘটতে থাকলে সেটি হবে বেশ শঙ্কার, ‘এমনিতেই সামাজিক কারণে মেয়েদের খেলাধুলায় অনেক বাধা আসে। আমরা এসব পেরিয়েই এ পর্যায়ে খেলছি। আমাদের দেখাদেখি আরও মেয়েরা যুক্ত হচ্ছে ফুটবলে বা অন্য খেলায়। কিন্তু খুলনার ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল মেয়েদের নিরাপত্তার বিষয়টি। আমি প্রশাসন ও সর্বোচ্চ মহলে এর বিচার চাই। যারা মেয়েদের ছবি তুলেছে। শারীরিকভাবে আঘাত করেছে, অ্যাসিড মারার হুমকি দিয়েছে, তাদের এমন শাস্তি দিতে হবে, যেন ভবিষ্যতে এমন কিছু করার সাহস কেউ না পায়।

সানজিদা আক্তার নারী ফুটবল দলের আরেক তারকা। ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর গ্রাম থেকে উঠে আসা অসাধারণ প্রতিভাময়ী এক খেলোয়াড়। খুলনার বটিয়াঘাটার ঘটনা দেশের সবার জন্য লজ্জার বিষয় বলে মনে করেন তিনি, ‘বাংলাদেশে মেয়েদের খেলাধুলা বিশেষ করে ফুটবল অনেক দূর এগিয়েছে। এই সময় এমন ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। মেয়েরা তো খেলাধুলাই করছে, কোনো অন্যায় তো করছে না। ফুটবল খেলার জন্য মেয়েদের ওপর হামলা, তাদের নিগ্রহ, ভীষণ লজ্জার বিষয়।

মেয়েদের ফুটবল সানজিদাদের কলসিন্দুর গ্রামে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছিল। সানজিদা সেই মুহূর্তের কথা মনে করেন দারুণ গর্বের সঙ্গে, ‘আমরা যখন ফুটবল খেলতাম, তখন এলাকার মানুষ যে সেটি খুব ভালো চোখে দেখত, তা বলব না। কিন্তু আমাদের দিয়ে যখন সারা দেশের মানুষ কলসিন্দুরকে চিনল, তখন মেয়েদের ফুটবল নিয়ে সবার ধারণা পাল্টে যায়। আমরা ভালো খেলেছি বলেই একসময় অন্ধকারে ডুবে থাকা গ্রামটিতে বিদ্যুৎ গিয়েছে। আমাদের এলাকার মানুষ এটি সব সময় মনে রাখে।

মেয়েদের খেলাধুলার ব্যাপারে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর অনুরোধও জানিয়েছেন সানজিদা, ‘মেয়েরা ফুটবল খেলবে না, বাইরে যাবে না, চাকরি করবে না, তারা শুধু বাড়িতে থাকবে, সংসার দেখবে, বাচ্চা পালন করবে আর রান্নাবান্না করবে, এই ধারণা ভুল। সে সব কিছুই করবে। সে রান্নাও করবে, বাচ্চাও পালন করবে, বাইরে গিয়ে কাজও করবে। এমনকি ফুটবলও খেলবে। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে মেয়েদেরই এগিয়ে আসতে হবে। আরও বেশি করে খেলতে হবে। সিরিয়াসলি খেলাটাকে নিতে হবে।

বাংলাদেশে মেয়েদের খেলাধুলার অন্যতম পথিকৃত কামরুন্নাহার ডানা। সাবেক এই ব্যাডমিন্টন তারকা মেয়েদের ফুটবল, ক্রিকেটের শুরুর সময়টা দেখেছেন। কামরুন্নাহার ডানা ক্ষুব্ধ আজ এত বছর পর নারী ফুটবলারদের এমন অবস্থা দেখে, ‘খুলনার ঘটনাটা আমাকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। হ্যাঁ, এই দেশে মেয়েদের খেলাধুলা নিয়ে আমরা অনেক সংগ্রাম করেছি, সেটি আর্থসামাজিক কারণেই। ভেবেছিলাম, সেই দিনগুলো অতীত হয়ে গেছে। মেয়েরা ফুটবল, ক্রিকেট বা অন্য খেলায় দেশকে গর্বিত করছে। কিন্তু খুলনার ঘটনাটা পেছনে হাঁটার মতোই। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২
Developed By ATOZ IT HOST