1. shahajahanbabu@gmail.com : admin :
মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড থেকে জ্বালানি তেল চুরির অভিযোগ - Pundro TV
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৪২ অপরাহ্ন



মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড থেকে জ্বালানি তেল চুরির অভিযোগ

পুন্ড্র.টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিতঃ মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল, ২০২৩

রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণন প্রতিষ্ঠান মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের প্রধান স্থাপনা থেকে জ্বালানি তেল চুরির অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে এই অপকর্ম চললেও বেশির ভাগ সময়ই তা ধরা পড়ে না। মাঝেমধ্যে ধরা পড়লেও শাস্তি হয় না জড়িতদের। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সিবিএর কিছু নেতার ছত্রচ্ছায়ায় থেকে একটি চক্র তেল চুরির সঙ্গে জড়িত থাকায় তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিপত্তিতে পড়েছেন নিরাপত্তাকর্মীসহ অনেকেই।

মেঘনা পেট্রোলিয়ামের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, প্রধান স্থাপনা থেকে সারা দেশের ২১টি ডিপোতে তেল সরবরাহ করা হয়। প্রতিটি লরিতে (তেলবাহী গাড়ি) ডিজেল, পেট্রল, অকটেন মিলে গড়ে ৯ হাজার লিটার জ্বালানি তেল পরিবহন করা হয়। এসব লরির ধারণক্ষমতা ১০ হাজার লিটার। দুর্ঘটনা এড়াতে এক হাজার লিটারের জায়গা সাধারণত ফাঁকা রাখা হয় প্রতিটি লরিতে। কেউ চাইলে সর্বোচ্চ সাড়ে ৯ হাজার লিটার পর্যন্ত তেল পরিবহন করতে পারে। মূলত যে স্থানটি ফাঁকা থাকে সেখানেই ২০০ থেকে ৫০০ লিটার পর্যন্ত অতিরিক্ত তেল পরিবহন করে চক্রটি। এই তেলের জন্য কোনো অর্থ পরিশোধ করা হয় না। তেলবাহী লরি বাইরে বের হওয়ার পর সুবিধাজনক স্থানে ওই তেল নামিয়ে তা বিক্রি করে দেয় তারা। প্রায় প্রতিদিনই এভাবে তেল চুরি হয়। পরে চুরি যাওয়া এই তেল সিস্টেম লস, ট্রান্সপোর্ট লস হিসেবে সমন্বয় মেঘনা কর্তৃপক্ষ সমন্বয় করে বলে অভিযোগ রয়েছে।

গত বুধবার বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা গুপ্তখাল এলাকায় মেঘনা পেট্রোলিয়ামের প্রধান স্থাপনা থেকে একটি জ¦ালানি তেলবাহী গাড়ি বের হওয়ার সময় দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মীরা তা পরীক্ষা করতে গেলে তারা বাধার মুখে পড়েন। এ সময় তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। কিন্তু পরে এ নিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি মেঘনা পেট্রোলিয়ামের প্রধান স্থাপনা থেকে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে মেসার্স আবদুর রউফ অ্যান্ড সন্সের নামে একটি গাড়িতে তেল ভর্তি করা হয়, যার ইনভয়েস নম্বর ১৯১১০। গাড়িটি ‘সিকিউরিটি পয়েন্টে’ পৌঁছানোর পর সন্দেহ হলে অতিরিক্ত একটি ড্রাম পাওয়া যায়, যেখানে প্রায় ২০০ লিটার ডিজেল ছিল। ওইদিন ডেলিভারি শেডে দায়িত্বে ছিলেন মেঘনা পেট্রোলিয়ামের কর্মচারী (জিই-১) জয়নাল আবেদিন।

একই দিন খাগড়াছড়ির মেসার্স জিলানি এন্টারপ্রাইজের জন্য (ইনভয়েস নম্বর ১৯০৭৬) তেলভর্তি একটি গাড়িতে চালানের অতিরিক্ত অকটেন ও পেট্রল পাওয়া যায়। ওইদিন এই ডেলিভারি শেডের দায়িত্বে ছিলেন মিটার অপারেটর-১ মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন।

বিষয়টি জানাজানি হলে পরদিন জয়নাল আবেদিন এবং আলতাফ হোসেনকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য পৃথক চিঠি দেন উপব্যবস্থাপক (অপারেশনস) জিয়া উদ্দিন আহমদ এবং সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আবুল মেরাজ।

দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে অবহেলার অভিযোগ তুলে চিঠিতে বলা হয়, চালানে উল্লিখিত পরিমাণের চেয়ে বেশি জ¦ালানি তেল পাওয়ার কারণে কোম্পানির আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা ছিল, যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। তবে কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়ার দুই মাস পরও তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তারা দুজনেই প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত বেতন-ভাতা নিচ্ছেন।

যোগাযোগ করা হলে সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আবুল মেরাজ বলেন, ‘তেল চুরির কোনো ঘটনা এখন পর্যন্ত ঘটেনি। বুধবার দুজনের মধ্যে একটা বিষয় নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়েছিল। আমি যাওয়ার পর তারা সরে যায়। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি হয়নি।’

আলতাফ হোসেনকে তাহলে কেন চিঠি দিয়েছেন? জবাবে মেরাজ বলেন, এ ধরনের ছোটখাটো ব্যবস্থা তো মাঝেমধ্যে প্রতিষ্ঠানকে নিতে হয়। কারণ দর্শানোর চিঠি পাওয়ার পর লিখিত জবাব দিয়েছে। এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

আলতাফ হোসেনের কারণ দর্শানোর চিঠির ওপর তারিখ হিসেবে ৩১ জানুয়ারি উল্লেখ থাকলেও নিচে আবুল মেরাজ সই করার পর সেখানে তারিখ দিয়েছেন ৩০ মার্চ।

এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, ৩১ জানুয়ারির ঘটনা মার্চে যাওয়ার সুযোগ নেই। এটা হতেই পারে না। চিঠিটা পাঠান দেখি।

এরপর তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ওই চিঠি পাঠানোর পর তিনি তা দেখেন। মতামত জানতে চেয়ে খুদেবার্তা পাঠানো হলে সেটিও দেখেন। কিন্তু কোনো জবাব দেননি। এমনকি পরে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তার সাড়া মেলেনি।

উপব্যবস্থাপক জিয়াউদ্দীন আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, জয়নাল আবেদিনকে কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়ার পর জবাব দিয়েছেন। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে কবে নাগাদ সিদ্ধান্ত নেবেন তা তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানায়, সরাসরি তেল চুরির সঙ্গে জড়িতদের বেশির ভাগই শ্রমিক। এদের পরোক্ষ সহায়তা করছেন কোম্পানির কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সিবিএর নেতাকর্মী। কেউ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে তাকে নানাভাবে হেনস্তা করা হয়। বিশেষ করে নিরাপত্তাকর্মীরা নানা রকম ভয়ভীতির শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবু সালেহ ইকবাল  বলেন, ‘আমি অল্প কিছুদিন (জানুয়ারি থেকে) এখানে যোগদান করেছি। এখন পর্যন্ত তেল চুরির কোনো অভিযোগ পাইনি। আপনার কাছ থেকে অভিযোগ পেলাম, বিষয়টি খোঁজ নেব। কারও বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জানতে চাইলে সিবিএ সেক্রেটারি হামিদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার জানামতে তেল চুরির সুযোগ নেই। কারণ কয়েকটা ধাপে চেকিংয়ের পর তা গেট দিয়ে বের হয়। এর পরও মাঝেমধ্যে যারা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বুধবারের ঘটনা আমার জানা নেই। বিষয়টি জেনে মন্তব্য করতে পারব।’

এসব ঘটনার সঙ্গে সিবিএ জড়িত নয় এমন দাবি করে তিনি বলেন, ‘দায়িত্বে থাকার কারণে অনেকেই আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমার নাম ভাঙিয়ে কেউ অপকর্ম করলে প্রতিষ্ঠান আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। আমরা সহযোগিতা করব। কারণ প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ সবার আগে।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২
Developed By ATOZ IT HOST