1. shahajahanbabu@gmail.com : admin :
ব্যাংকে জমা আছে মাত্র ৪ কোটি টাকা - Pundro TV
শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:২৪ পূর্বাহ্ন



ব্যাংকে জমা আছে মাত্র ৪ কোটি টাকা

পুন্ড্র.টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিতঃ বুধবার, ১৮ মে, ২০২২

পি কে হালদার নামে পরিচিত প্রশান্ত কুমার হালদার ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট কাগুজে কোম্পানির ১৭৮টি ব্যাংক হিসাবে গত ১২ বছরে প্রায় ৬ হাজার ৮০ কোটি টাকা জমা হয়েছে। এসব ব্যাংক হিসাব থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে ৬ হাজার ৭৬ কোটি টাকা। বর্তমানে ওই সব ব্যাংক হিসাবে ৪ কোটি ৪০ লাখ ৭৭ হাজার ৫৬৯ টাকা আছে।

অর্থ পাচার মামলায় আদালতে দেওয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযোগপত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। এতে বলা হয়েছে, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদার তাঁর অবৈধ অর্থের উৎস গোপন করতে নামে-বেনামে কাগুজে কোম্পানি খোলেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী অবন্তিকা বড়াল, ভাই প্রীতিশ কুমার হালদার, মামাতো ভাই শঙ্খ ব্যাপারীসহ কয়েকজনের নামে ব্যাংক হিসাব খুলে অর্থ হস্তান্তর করেন।

দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, পি কে হালদার অবৈধ অর্থের উৎস লুকাতে নিজেকে গ্রেনাডার নাগরিক হিসেবে দেখিয়েছেন। ওই দেশের নাগরিক পরিচয়ে সুখদা পিটিই লিমিটেড নামে কোম্পানি পরিচালনা করেন। কানাডা, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ভারতে তাঁর ভাই প্রীতিশ কুমার হালদারের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন করেন। কলকাতায় প্রীতিশের নামে এইচডিএফসি ও আইসিআইসিআই ব্যাংকে দুটি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। অবশ্য এই দুটি হিসাবের লেনদেনের পূর্ণাঙ্গ তথ্য দুদক জানতে পারেনি।

তদন্ত দলের প্রধান ও দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান গণমাধ্যমে বলেন, কলকাতার দুটি ব্যাংক হিসাবের লেনদনের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। অন্যান্য দেশে তাঁদের পাচার করা সম্পদের হিসাব জোগাড় করে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

২০২০ সালের জানুয়ারিতে দেশের চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পি কে হালদার সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছেন বলে জানাজানি হয়। তবে এর আগেই দেশ ছেড়ে যান তিনি। ওই বছরের ৮ জানুয়ারি তাঁর বিরুদ্ধে প্রায় ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা করে দুদক। ওই মামলা তদন্তে পি কে হালদারসহ ১৪ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়।

ঋণের নামে যে চারটি প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ সরিয়ে নেওয়া হয়, সেগুলো হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (আইএলএফএসএল), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (পিএলএফএসএল), এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড (এএফইএল) ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)।

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের ঘুষ

ব্যাংক-কোম্পানি আইনের রীতিনীতির তোয়াক্কা না করে কাগুজে কোম্পানি বানিয়ে পি কে হালদার ঋণের নামে আইএলএফএসএল এবং এফএএস ফাইন্যান্স থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে পি কে হালদারসহ ৮৩ জনের বিরুদ্ধে ৩৫টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার ১৩ জনের মধ্যে ১১ জন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। অর্থ পাচার মামলার কাগজপত্র ও পাঁচজনের জবানবন্দির তথ্য পর্যালোচনায় জানা যায়, ঋণের নামে অর্থ সরিয়ে নিতে পি কে হালদার তাঁর সহযোগীদের দিয়ে কোম্পানির নামে জাল কাগজপত্র তৈরি করেন।

পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী জবানবন্দিতে বলেন, অপকর্ম ঢাকতে ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত নিরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর, একজন মহাব্যবস্থাপকসহ অন্যদের এক কোটি টাকা

করে সাড়ে ছয় কোটি টাকা ঘুষ দেওয়া হয়েছিল। কিছু ভিআইপির জন্য মূল্যবান উপহারসামগ্রীও কেনা হয়।

১০ বছরে সম্পদের পাহাড়

দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পি কে হালদার চাকরি থেকে বেতন–ভাতাসহ মোট আয় করেন ১২ কোটি ৯ লাখ ৬৪ হাজার ৩২৬ টাকা। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে আয়কর বিবরণীর তথ্য অনুযায়ী, তাঁর পরিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় ৪ কোটি ৮ লাখ ১৬ হাজার ৫১০ টাকা।

অভিযোগপত্র বলছে, ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত পি কে হালদার ৩৯১ কোটি ৭৫ লাখ ৮১ হাজার ১২ টাকার স্থাবর সম্পদের মালিক হন। একই সময়ে অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৪২ কোটি ২১ লাখ ৯৫ হাজার ৯৪৪ টাকা। সব মিলিয়ে ১০ বছরে তিনি ৪৩৩ কোটি ৯৭ লাখ ৭৬ হাজার ৯৫৬ টাকার মালিক হন। এতে তাঁর অবৈধ সম্পদের পরিমাণ ৪২৫ কোটি ৯৬ লাখ ২৯ হাজার ১৪০ টাকা।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, পি কে হালদার নিজের নামের পাশাপাশি ১৩ সহযোগীর নামে নগদ অর্থ জমা এবং জমি, বাড়ি ও গাড়ি কেনেন। তাঁর নামে ঢাকার ধানমন্ডিতে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে। তাঁর নামে–বেনামে ২২টি গাড়ি রয়েছে। নিজের নামে ২২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে কিনেছেন ৪ হাজার ১৭৪ শতাংশ জমি। বেশির ভাগ জমি কেনা হয় নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও ঢাকায়।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, পি কে হালদারের মা লীলাবতী হালদার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। ২০২১ সালের মে পর্যন্ত লীলাবতীর ব্যাংক হিসাবে ১৩১ কোটি ৩০ লাখ ৮০ হাজার ৩৪১ টাকা লেনদেনের তথ্য মিলেছে। এ ছাড়া অবন্তিকা বড়ালের নামে ফ্ল্যাটসহ নারায়ণগঞ্জে ৫৭৩ শতাংশ জমি কেনা হয়, যার বাজারমূল্য প্রায় ২৪ কোটি টাকা। তাঁর ব্যাংক হিসাব থেকে ১৩ কোটি ৯৩ লাখ ৩৫ হাজার ৫৫৮ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, পি কে হালদারের মামাতো ভাই শঙ্খ ব্যাপারীর ব্যাংক হিসাবে ৬৬ কোটি ১০ লাখ ৯৭ হাজার ৭৭১ টাকা লেনদেন হয়। তাঁর খালাতো ভাই অমিতাভ অধিকারীর নামে মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ২২২ শতাংশ জমি কেনা হয়। তাঁর ব্যাংক হিসাব থেকে ৫৯ কোটি ৩৭ লাখ ৬ হাজার ৪৬৯ টাকা তুলে নেওয়া হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২
Developed By ATOZ IT HOST