অর্থনৈতিক সংকটের জেরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ আর সহিংসতায় টালমাটাল শ্রীলঙ্কায় এ সপ্তাহেই নতুন প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে।
তিনি বলেছেন, নতুন প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ ২২৫ আসনের জনপ্রিতিনিধিদের প্রতিনিধিত্ব করবে। পার্লামেন্টকে আরও ক্ষমতা দিতে সাংবিধানিক পরিবর্তন আনা হবে।
এক বিবৃতিতে গোটাবায়া রাজাপাকসে বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য, দেশকে অরাজক পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করতে এবং থমকে যাওয়া সরকারি কার্যক্রম চালিয়ে নিতে আমি একটি নতুন সরকার গঠনের পদক্ষেপ নিচ্ছি।”
রয়টার্স লিখেছে, প্রেসিডেন্টের ওই বিবৃতি আসার আগে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ঘোষণা দিয়েছিলেন, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা না ফিরলে তিনি পদত্যাগ করবেন।
দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপ রাষ্ট্রটিকে তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আর্থিক সংকট থেকে টেনে তুলতে গত মাসে পি নন্দলাল ভিরাসিংহেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্ব দেওয়া হয়। নন্দলাল ভিরাসিংহে বলেন, দেশের অর্থনীতিকে পথে আনতে একটি স্থিতিশীল সরকার অপরিহার্য।
গভর্নর সাংবাদিকদের বলেন, “আমি প্রেসিডেন্ট এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে স্পষ্ট বলেছি যে আগামী দুয়েক সপ্তাহের মধ্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরানো না হলে আমি পদত্যাগ করব।
“রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর কে থাকল, তাতে কিছু যায় আসে না। অর্থনীতির পতন ঠেকানোর অন্য কোনো উপায় নেই।”
শ্রীলঙ্কা সরকার এখন ৫১ বিলিয়ন দেনার ভারে ডুবে আছে। ঋণের কিস্তি হিসেবে দেশটির এই বছর ৭ বিলিয়ন ডলার পরিশোধের কথা থাকলেও ওই অর্থ দেশটির হাতে নেই।
কোভিড-১৯ মহামারী ও ইউক্রেইনে যুদ্ধের প্রভাবে শ্রীলঙ্কায় বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ মাত্র ৫ কোটি ডলারে নেমেছে। জীবন ধারনের নিত্যপণ্য যেমন রান্নার তেল, গ্যাস, জ্বালানি, ওষুধ, খাদ্যসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি করা যাচ্ছে না। শ্রীলঙ্কা সরকার আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে হাত পাতলেও তেমন সাহায্য মেলেনি।
সাধারণ নাগরিকরা দেশের এই চরম আর্থিক দুর্দশার জন্য প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে ও তার ভাই সদ্য পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে এবং তাদের পরিবারকে দায়ী করে আসছে। এক মাসের বেশি সময় ধরে নতুন সরকারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে তারা।
এর মধ্যে গত সোমবার ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকরা কলম্বোয় সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের শিবিরে হামলা করলে জনতার ধৈর্য্যের বাধ ভেঙে যায়। দুপক্ষের সংঘর্ষে ৯ জন নিহত ও ২০০ জনেরও বেশি আহত হন।
সহিংসতা শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। দেশটির মন্ত্রিসভার সব সদস্যও পদত্যাগ করেন। তাতে শ্রীলঙ্কার একটি ঐকমত্যের সরকার গঠনের পথ তৈরি হয়।
পুলিশ ও সৈন্যরা বুধবারও রাজাপাকসে পরিবারের গ্রামের বাড়ি ভিরাকেতিয়ার রাস্তায় টহল দিয়েছে। সেখানে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত কারফিউ রয়েছে।