নতুন করে আলোচনায় এসেছেন রুশ রাজনীতিবিদ, সাবেক অলিম্পিক জিমন্যাস্ট এবং মিডিয়া বস এলিনা কাবায়েভা। তবে তাকে ঘিরে এতো আলোচনার মূল কারণ, গুজব রয়েছে যে তিনি আসলে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রেমিকা। এছাড়া এলিনা পুতিনের কয়েকজন সন্তানের মা। তাই এবার তাকে টার্গেট করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে পশ্চিমারা।
ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো। পুতিনের ঘনিষ্টদের টার্গেট করে আরোপ করা হয়েছে সম্ভাব্য সবধরনের নিষেধাজ্ঞা। সেই ধারায়ই এখন পশ্চিমাদের নতুন টার্গেট হয়েছেন এলিনা। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেন পুতিনের দুই মেয়ের উপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পুতিনের সাবেক স্ত্রী লিউডমিলা ওই দুই মেয়ের মা। এখন পর্যন্ত পুতিনের প্রেমিকা এমিলার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পশ্চিমারা।
তবে সূত্রের মাধ্যমে বিবিসি জানতে পেরেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার নতুন তালিকায় নাম রয়েছে এলিনার। তাকে পুতিনের ঘনিষ্ট হিসেবে চিহ্নিত করে এই শাস্তির আওতায় আনা হবে যদিও খসড়া নথিতে এমিলাকে পুতিনের প্রেমিকা কিংবা পার্টনার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি। তাছাড়া ওই ঘোষণা এখনো চূড়ান্ত নয়।
রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন সবসময়ই নিজের ব্যাক্তিগত জীবনকে আড়ালে রেখেছেন। তাকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বরাবরই তা এড়িয়ে গেছেন। যদিও এমিলার সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি তিনি স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছেন। ২০০৮ সালে রুশ গণমাধ্যম মস্কোভস্কি করোস্পন্ডেন্ট নামের একটি সংবাদপত্র প্রথম রিপোর্ট করে যে, পুতিনের সঙ্গে এমিলার সম্পর্ক রয়েছে। তারা বিয়ে করতে চান। এ জন্য পুতিন তার স্ত্রী লিউডমিলাকে ডিভোর্স দেবেন। এরপরই ওই গণমাধ্যমটিকে বন্ধ করে দেয়া হয়। পুতিন ও লিউডমিলা এর ৫ বছর পর আলাদা হয়ে যান। সে সময় একজন জিমন্যাস্ট থেকে রাজনীতির দিকে ঝুকছিলেন এমিলা। নানা গুজব সত্বেও পুতিনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো সম্পর্কে তিনি ছিলেন না তিনি।
নিজের ক্যারিয়ার সেরা সময়ে এমিলা বিশ্বের সেরাদের একজন ছিলেন। তার একটি আলাদা ‘মুভ’ ছিল যেটি তাকে সেরাদের কাতারে নিয়ে এসেছে। এর নামও করা হয়েছে তার নামেই। ২০০০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে এই ইভেন্টে সম্ভাব্য সব গোল্ড মেডেল জিতেছিল রাশিয়া। এই কিংবদন্তি জিমন্যাস্টের জন্ম ১৯৮৩ সালে। মাত্র ৪ বছর বয়সেই তিনি জিমন্যাস্টিক শুরু করেন। তার কোচ ইরিনা ভাইনার বলেন, আমি যখন তাকে প্রথম দেখি, আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। জিমন্যাস্টিকে দুটি গুণ থাকা খুব জরুরি। একটি হচ্ছে নমনীয় শরীর এবং ক্ষিপ্রতা। এমিলার দুটিই ছিল। সে রাশিয়ার সবথেকে ফ্লেক্সিবল বা নমনীয় নারী হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিল। ১৯৯৬ সালে আন্তর্জাতিক ইভেন্টে যোগ দিতে শুরু করেন এমিলা। ১৯৯৮ সালে তিনি ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ জয় করেন। ২০০৪ সালে এথেন্সে তিনি গোল্ড জিতেন। জিমন্যাস্ট হিসেবে অবসরে যাওয়ার পর রাজনীতিতে মন দেন এমিলা। তবে এর আগে তিনি ১৮টি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ মেডেল জয় করেন। তার আছে ২৫টি ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ মেডেল।
রাশিয়ার শাসক দল ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টির হয়ে ২০০৭ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে ছিলেন এলিনা। ২০১৪ সালে তিনি রাশিয়ার ন্যাশনাল মিডিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান। রাশিয়ার সকল রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের উপরে তার প্রভাব ছিল। এই গণমাধ্যমগুলোও ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের উস্কানি সৃষ্টি করে আসছিল বহু বছর ধরে। রুশ ভাষাভাষী এলাকায় ইউক্রেনীয়রা হামলা করছে, হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে বলেও প্রচারণা চালায় তারা। এটি হতে পারে তাকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনার অন্যতম কারণ।
এলিনা রাশিয়ার ধনী নারীদের একজন। তিনি প্রতি বছর ১২ মিলিয়ন ডলার আয় করেন। পুতিনের সঙ্গে তার প্রথম কবে দেখা হয়েছে তা অবশ্য জানা যায় না। তবে দেশটির অলিম্পিক তারকাদের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের দেখা করা অস্বাভাবিক কিছু নয়। ২০০১ সালেই পুতিন ও এলিনাকে একসঙ্গে দেখা যায়। গুজব রয়েছে তাদের দুই জনের সন্তান রয়েছে। তবে ঠিক কতজন সন্তান আছে তা নিয়ে বিভিন্ন দাবি রয়েছে।
ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এলিনার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার আরোপের চাপ বাড়ছে ইউরোপীয় নেতাদের উপর। যদিও ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলছে, যুক্তরাষ্ট্র এখনও এলিনাকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনতে চায় না। কারণ, এটিকে পুতিন অত্যন্ত ব্যক্তিগত হিসেবে নিতে পারেন। এতে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পাবে সে আশঙ্কা রয়েছে। তবে এখনো বিষয়টি টেবিলেই রয়েছে। গত এপ্রিলে হোয়াইট হাউসকে এ নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন সাংবাদিকরা। তখন হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি বলেছিলেন, কেউ বিপদমুক্ত নন।