ই-সিগারেটে গ্রাস করছে তরুণ সমাজকে। এতে উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস (ভ্যাপিং, ই-সিগারেট)-এর আবির্ভাবের পর থেকে বিশ্বব্যাপী তামাক ব্যবহারের পদ্ধতি ও ব্যবহার, বিপণন কৌশল, তামাক আসক্তি সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গি এবং তামাক ব্যবহারজনিত মৃত্যু প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। কৌশলী প্রচার-প্রচারণার কারণে এসব পণ্যের জনপ্রিয়তা এবং ব্যবহার বর্তমানে আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইতিমধ্যে অনেক দেশ ই-সিগারেট ও ভ্যাপিং পণ্য নিষিদ্ধ করেছে। বাংলাদেশে দাবি উঠেছে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে অবশ্যই ই-সিগারেট বন্ধে আইন প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
রাস্তাঘাট, ক্যাম্পাস, তরুণদের আড্ডাস্থল, বিভিন্ন মার্কেট এবং রাস্তার মোড়ে গড়ে ওঠা ভ্যাপিং ক্লাবে এসব পণ্যের ব্যবহার ব্যাপকহারে চোখে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান বাজারে মোট দুই ধরনের ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্ট পাওয়া যায়।
ইলেক্ট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম্স এবং হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্ট। ইলেক্ট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম্স এক ধরনের ব্যাটারিচালিত ডিভাইস যা ই-লিক্যুইড বা নিকোটিনযুক্ত তরল দ্রবণকে তাপের মাধ্যমে বাষ্পে রূপান্তরিত করে। একজন ব্যবহারকারী যখন ডিভাইসটিতে টান দেয়, তখন নিকোটিনের দ্রবণ গরমে বাষ্পীভূত হয় এবং ব্যবহারকারীকে নিকোটিন সরবরাহ করে।
নিকোটিন ছাড়াও নানারকম রাসায়নিক মিশ্রণ এবং সুগন্ধি মেশানো থাকে, যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ইলেক্ট্রনিক সিগারেট বা ই-সিগারেট, ভ্যাপ বা ভ্যাপ পেনস্?, ই-হুক্কা, ই-পাইপ এবং ই-সিগার প্রভৃতি এন্ডস্? পণ্যের বিভিন্ন ধরন। সাধারণ সিগারেট বা পাইপ আকৃতি ছাড়াও এগুলো দেখতে কলম, পেনড্রাইভ, বিভিন্ন খেলনা কিংবা সিলিন্ডার আকৃতির হয়ে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ পর্যন্ত দেশটির বিভিন্ন হাসপাতালে ফুসফুসজনিত রোগে ভর্তি হওয়া মোট ২ হাজার ৮০৭ জন রোগী এবং এরমধ্যে ৬৮ জনের মৃত্যুর সঙ্গে ই-সিগারেট/ভ্যাপিংয়ের যোগসূত্র থাকার কথা নিশ্চিত করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, তামাক এবং ভ্যাপিং পণ্য ব্যবহারে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় এবং অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের কোভিড-১৯ সংক্রমণে মারাত্মকভাবে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি।
সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৪৯ শতাংশই তরুণ, যাদের বয়স ২৪ বছর বা তার নিচে। অর্থাৎ বাংলাদেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট সময়কাল অতিবাহিত করছে যেখানে, নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর তুলনায় কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেশি। এই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট সাধারণত ৩৫ থেকে ৪০ বছর দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে। একটি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং ইতিবাচক পরিবর্তনে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট জনগোষ্ঠীর অবদান অতি গুরুত্বপূর্ণ। তামাক কোম্পানিগুলোও এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এই বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীকে যেকোনো উপায়ে তামাকপণ্য ও ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্ট এ আসক্ত করে নিজেদের ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং মুনাফা বৃদ্ধি করতে চায়। । ই-সিগারেট এবং হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্ট (এইচটিপি) বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হলে তরুণ এবং কিশোর বয়সীদের ধূমপানে আসক্ত হওয়া থেকে বিরত রাখা যাবে, যা ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে সহায়তা করবে।
https://www.facebook.com/pundrotvbd/videos/686638169214020