রাজধানীর কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে থানা নয়, শিশুদের জন্য খেলার মাঠ সংরক্ষণ করতে হবে। পাশাপাশি এ ঘটনায় গত ২৪শে এপ্রিল শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে অংশগ্রহণকারী আন্দোলনকারীদের সংগঠক সৈয়দা রত্না ও তার ১৭ বছর বয়সী পুত্র ঈশা আব্দুল্লাহকে থানা কর্তৃপক্ষ আটকের ঘটনায় পুলিশি হয়রানির নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো।
এএলআরডি, বাপা, বেলা, আসক, ব্লাস্ট, গ্রিন ভয়েস, নিজেরা করি, নাগরিক উদ্যোগ, নারীপক্ষ, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি ও টিআইবি গতকাল যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানিয়েছে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘তেঁতুলতলা মাঠে থানা না, এলাকাবাসীকে হয়রানি ও আটকের তীব্র প্রতিবাদ’ ব্যানারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত রোববার দিনভর কলাবাগান থানা কর্মকর্তাদের মুঠোফোন বন্ধ ছিল। কেউ কোনো উত্তর দিচ্ছিলেন না। যাঁরা থানায় খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন, তাদের প্রথম ঢুকতে বাধা দেয়া হয় বলেও জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমাদের দাবি স্পষ্ট। এই খেলার মাঠ খেলার মাঠই থাকবে।
পাশাপাশি গত রোববার ঘটে যাওয়া ঘটনার আমরা নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। এলাকাবাসী বরাবরের মতো এবারো যেন ওই মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারে এটাই আমাদের ইচ্ছা এবং দাবি। পরিবেশ নিয়ে কাজ করতে গেলে এখন হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে। বসবাসের অযোগ্যের তালিকায় থাকা শহরে একটা খেলার মাঠ নিয়ে নেয়া মানে আত্মহত্যার শামিল। এলাকাবাসী খেলবে কোথায়, এই জবাব কী কর্তৃপক্ষ দেবে?
রত্নাকে আটকের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তুলে নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা আবার দেখলাম। তিনি যদি কোনো আইন ভঙ্গ করতেন তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেয়া যেতো। কিন্তু পুলিশ চাইলে তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যেতে পারে এবং তার ছেলেকেও তুলে নিয়ে গেল। তারা আইনি ব্যবস্থা নেবেন। মুচলেকার ভাষা হচ্ছে মাঠ রক্ষার আন্দোলন করা যাবে না। আমরা বলি গণতন্ত্র, আবার বলি মাঠ রক্ষার আন্দোলন করা যাবে না। তাহলে কী নিয়ে আন্দোলন করা যাবে, তার একটা তালিকা দেয়া হোক। সরকারি কাজের তালিকা দেয়া হোক। তিনি আরও বলেন, দু’জন নাগরিককে আটকে রাখা যায়। কিন্তু এ দেশে ক্ষমা চাওয়ার সংস্কৃতি কোনোদিন হবে না? বলবে না তারা লজ্জিত বা দুঃখিত। সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে আটক করে একটি মুচলেকা দিয়ে ছাড়া হয়েছে। এটি পরিকল্পিত। এলাকার অন্যদের ভয় দেখানোর জন্য।
তিনি বলেন, থানায় প্রবেশের মুহূর্তে কলাবাগান থানার গেট বন্ধ করে দেয়া হয়। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সারাদিন ফোন রিসিভ করেননি। রত্না ও তার ছেলেকে আটক করার বিষয়ে কারও কাছে স্পষ্ট জবাব ছিল না। এটাই যদি পরিস্থিতি হয় তাহলে আমরা কোথায় যাবো? তারা কী থানায় মানুষের প্রবেশ সীমিত করতে পারে? সাধারণ মানুষকে তাদের কাজে বাধা দেয়া হচ্ছে। মানুষকে তুলে নেয়া, পকেটে ইয়াবা রেখে দিয়ে আটক করা, মানুষকে নানাভাবে হয়রানি করা দেশে রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা এই ধরনের অভ্যাসের প্রতিবাদ জানাই। এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবেন এবং থানা অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা হবে বলে আশা প্রকাশ করছি। অন্যদের ভয় দেখানোর জন্য এটা করা হয়েছে। যাতে তারা খেলার মাঠ দখলের বিরুদ্ধে আওয়াজ না তোলে।
নিজেরা করির সমন্বয়ক খুশী কবির বলেন, এটা কী মগের মুল্লুক নাকি? যে চেনা মুখ হলেই রেহাই পাওয়া যেতে পারে? এই দেশে সাধারণ মানুষের বিচার পাওয়ার অধিকার নাই? আইন কী নিজের মতো চলে না? রত্নাকে ছেড়ে দেয়ার পরও সংবাদ সম্মেলন করার কারণ হিসেবে খুশী কবির বলেন, মানুষ প্রশ্ন করবে, জবাব চাইবে। নাগরিককের কী অধিকার, সুরক্ষার জন্য কী ব্যবস্থায় এসব কথা বলতে হবে। জনগণের বন্ধু বলা হয় পুলিশকে। তারা যদি বন্ধুই হয়ে থাকে, তাহলে তারাই সবার আগে মাঠ রক্ষায় এগিয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি ও নগর বিশ্লেষক মোবাশ্বের হোসেন। তিনি বলেন, ধানমণ্ডির শেখ জামাল মাঠটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু সেখানে সাধারণ মানুষ ঢুকতে পারে না। সেখানে পুলিশ কোথায় জানতে চেয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। মোবাশ্বের হোসেন বলেন, জনগণ পুলিশের বন্ধু। আমি মনে করি এই মাঠ সংরক্ষণে পুলিশকেই সবার আগে আন্দোলনে নামা দরকার। এটা থানা হতে পারে না। কারণ, এই এলাকার জনগণের খেলার মাঠ এটা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, তেঁতুলতলা মাঠটি সংরক্ষণ করতে হবে এবং থানা নির্মাণের কাজ দ্রুত বন্ধ করতে হবে। মাঠটি রক্ষায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও রাজউককে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
পাশাপাশি সৈয়দা রত্না, তার পরিবার এবং আন্দোলনে যুক্ত এলাকাবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, গতকালের ঘটনায় ১০টি আইনের লঙ্ঘন হয়েছে। শিশু অধিকার রক্ষার কথা বলায় মাকে জেলে দিতে হবে? এই অবিচারের বিচারের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানান। তেঁতুলতলা মাঠ থেকে দ্রুত কাঁটাতারের বেড়া সরানোর দাবি জানিয়ে ইকবাল হাবিব বলেন, প্রতিশ্রুতি না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম, সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী কমিটির মহাসচিব নূর খান লিটন, ব্লাস্টের আইন উপদেষ্টা এস এম রেজাউল করিমসহ প্রমুখ।