সোনিয়া মেহেরের সঙ্গে রাকিবের পরিচয় হয়েছিল একটি ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে। দু’জনের মধ্যে মোবাইল নম্বর আদান-প্রদান হয়। তারপর শুরু হয় নিয়মিত কথাবার্তা। ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগটি সোনিয়া নিজেই করে দিয়েছিল রাকিবকে। ভার্চ্যুয়ালি দু’জন দু’জনের অনেক আপন হয়ে যান। স্বাভাবিক কথাবার্তার বাইরে দ্রুতই তারা অন্তরঙ্গ ও একান্ত বিষয় শেয়ার করতেন।বলতে গেলে অল্প দিনেই তারা গভীর সম্পর্কে পৌঁছে যান। কিছুদিন যেতে না যেতে রাকিব তার প্রেমিকাকে প্রস্তাব দেন সরাসরি সাক্ষাতের। সোনিয়া প্রথমদিকে কিছুটা নারাজি থাকলেও পরে আগ্রহ প্রকাশ করেন। দেখা করার জন্য দিনক্ষণও ঠিক হয়। স্থান নির্বাচন করে সোনিয়া নিজেই। ভেবেছিলেন সোনিয়ার সঙ্গে দিনভর একান্তে আড্ডা দিয়ে রেস্টুরেন্টে খেয়ে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরবেন। কিন্তু রাকিবের ভাগ্যে আর সেটি হয়নি। সোনিয়ার দেয়া স্থানে দেখা করতে গিয়ে রাকিব অপহরণকারীচক্রের হাতে পড়েন। অপহরণকারীরা তার চোখ মুখ বেঁধে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় একটি অজানা ফ্ল্যাটে। ফ্ল্যাটে নেয়ার পর তার চোখ মুখের বাঁধন খুলে দেয়া হয়। চোখ খুলে দেখে আরও কয়েকজন নারী পুরুষের সঙ্গে তার প্রেমিকা সোনিয়া মেহেরও দাঁড়িয়ে আছেন। রাকিব কিছু বুঝে ওঠার আগেই ৫/৬ জন ব্যক্তি রাকিবের ওপর শারীরিক নির্যাতন করতে শুরু করেন। ঘণ্টাখানেক মারধরের একপর্যায়ে সেখানে থাকা নারীদের সঙ্গে রাকিবের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও তোলা হয়। এরপর তার কাছে অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা ৫০ লাখ টাকা দাবি করে। কিন্তু এত টাকা কীভাবে দিবে রাকিব? সে বার বার প্রেমিকা সোনিয়ার কাছে কাকুতি মিনতি করছিল। সোনিয়া তাতে বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করেননি। উপায়ন্তর না পেয়ে রাকিব তার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ধার নিয়ে অপহরণকারী চক্রের সদস্যদের ২ লাখ টাকা দেয়।
অপহরণকারীদের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে রাকিব চলে আসেন তার বাসায়। কিছুদিন পর ওই চক্রের সদস্যরা তার মোবাইলে ফোন দিয়ে টাকা চায়। টাকা না দিলে ছবি ও ভিডিও ভাইরাল করে দেয়ার হুমকি দেয়। এ ছাড়া সেগুলো রাকিবের আত্মীয়-স্বজনের কাছে পাঠাবে বলে জানায়। রাকিব তখন উপায়ন্তর না পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে যান। ঘটনার বিবরণ দিয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন। পরে ওই মামলার ভিত্তিতে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম অভিযান চালিয়ে চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- সোনিয়া মেহের (১৮), তার বাবা আব্দুল জলিল হাওলাদার (৫৬) ও মো. ইউসুফ মোল্লা (৪৩)।
ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্টসূত্র জানিয়েছে, শুধু রাকিবের ক্ষেত্রে যে এমনটা হচ্ছে তা নয়। ডেটিং অ্যাপ টিন্ডার, টানটান, মামবা ব্যবহার করে অনেক নারী পুরুষই এখন প্রতারণার ফাঁদে পড়ছেন। এসব অ্যাপ ঘিরে ফাঁদ পেতে রেখেছে অপহরণকারী ও প্রতারক চক্র। এসব চক্রের সদস্যরা বিভিন্নভাবে মানুষকে ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রত্যাশিত টাকা আদায় করতে না পারলে হত্যা করে লাশ গুম করে দেয়। ডিবি বলছে, এ ধরনের অনেক চক্র ডেটিং অ্যাপ দিয়ে প্রতারণা করছে।
ডিবি আরও জানায়, এই চক্রে অন্তত ১০ জন সদস্য রয়েছে। যাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা কাজ ছিল।
ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের ফাইন্যান্সসিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মহিদুল ইসলাম বলেন, ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার করে বিভিন্ন বয়সী ছেলেদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে অপহরণ করে এ রকম একটি চক্রকে আমরা গ্রেপ্তার করেছিলাম। তাই অনলাইন ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে।
https://www.facebook.com/pundrotvbd/videos/743174283728100