অনাস্থা ভোটে ইমরান খানকে হারিয়ে পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) প্রধান শাহবাজ শরিফ। কিন্তু সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মন্ত্রিসভা গঠন করতে পারেননি তিনি। কারণ ইমরানবিরোধী আন্দোলনে শরিকদের অনেকে মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে চাচ্ছেন না। তবে তারা প্রেসিডেন্ট, স্পিকার, গভর্নর অর্থাৎ সাংবিধানিক পদ নিতে আগ্রহী। পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) কো- চেয়ারম্যান আসিফ আলী জারদারি এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন। এদিকে পদচ্যুত ইমরান খান অভিযোগ করেছেন, বিদেশি ষড়যন্ত্রে মীরজাফররা ক্ষমতায় বসেছে। মামলা দিয়ে তারা তাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। খবর ডন, এক্সপ্রেস ট্রিবিউন ও জিয়ো নিউজের।
শনিবার পিপিপির বৈঠক শেষে দলটির প্রধান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি সাংবাদিকদের বলেন, সম্ভবত পিপিপি মন্ত্রিত্ব নিতে চাচ্ছে না। তবে আমরা চাই, আমাদের অন্য বন্ধুদের মন্ত্রিসভায় নেওয়া হোক।
এখনই শাহবাজ শরিফের ওপর চাপা প্রয়োগ করছেন কিনা-এ প্রশ্নের জবাবে জারদারি বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ব্যাপার নেই। আমরা বরং বন্ধুদের একটা সুযোগ দিতে চাই। আমরা স্বতন্ত্র থেকে সরকারের কাজে সহায়তা করব।’
তবে জারদারির সংবাদ সম্মেলনের পর পিপিপির কয়েক নেতা জানান, তারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন। শেষ পর্যন্ত তারা হয়তো মন্ত্রিসভায় যোগ দিতেও পারেন। ইতোপূর্বে শোনা গিয়েছিল যে পিপিপি নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। তবে এই নেতাদের চেয়ে আসিফ আলি জারদারির কথাকেও গুরুত্ব দিচ্ছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
তবে রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, পিপিপি মন্ত্রণালয়ের চেয়ে সাংবিধানিক দপ্তরের পদগুলোর দিকে বেশি আগ্রহী। এরই মধ্য পার্লামেন্টের নতুন স্পিকার হয়েছেন পিপিপির রাজা পারভেজ আশরাফ। তিনি এ পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এরপর ডেপুটি স্পিকার, সিনেট চেয়ারম্যান এবং প্রেসিডেন্টের পদের দিকে নজর দলটির। কারণ, ধারণা করা হচ্ছে আরিফ আলভি শিগগিরই পদত্যাগ করতে পারেন। যদি এমনটা ঘটে, তবে পিপিপি প্রেসিডেন্ট চাইবে।
১১ এপ্রিল দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পিপিপিকে মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়ার জন্য জোর দিয়ে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। তবে পিপিপি তাকে বলেছে, মন্ত্রিসভার বাইরে থেকেই তারা তাকে সমর্থন করতে বেশি আগ্রহী। প্রধানমন্ত্রী নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য সময় নিচ্ছেন। কারণ, তিনি মিত্রদের সঙ্গে নিয়েই এগিয়ে যেতে চান। বিশেষ করে যারা পিটিআইয়ে নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোট ছেড়ে বিরোধী দলে যোগ দিয়েছিলেন তাদের সবাইকে নিয়ে সরকার চালাতে চান শাহবাজ।
শনিবার পিপিপির সভায় বলা হয়, যারা পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে টিকিট পেতে চান, তাদের ফরমে আবেদন করতে হবে। জাতীয় পরিষদে মনোনায়ন প্রত্যাশীদের ফরমের জন্য ৪০ হাজার রুপি এবং প্রাদেশিক পরিষদের জন্য ৩০ হাজার রুপি দলের ফান্ডে জমা দিতে হবে। পিপিপির সাধারণ সম্পাদক ফারহাতুল্লাহ বাবর বলেছেন, আবেদন ফরম দলের ইসলামাবাদ দপ্তরে অথবা করাচিতে বিলাওয়াল ভুট্টোর করাচির বাসভবনে ৩০ এপ্রিলের মধ্য পাঠাতে হবে।
এদিকে ইমরানবিরোধী জোটের আরেক শরিক এমকিউএম-পিএর আহ্বায়ক খালিদ মকবুল সিদ্দিকী বলেছেন, তিনি মন্ত্রিসভার সদস্য হওয়ার চেয়ে জনগণের সেবায় বেশি আগ্রহী।
পিটিআইকে রাজনীতি থেকে সরাতে চাইছে সরকার-ইমরান : পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান ইমরান খান অভিযোগ করেছেন, মামলার মধ্য দিয়ে তার দলকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। শনিবার করাচির বাঘ-ই-জিন্নাহতে এক সমাবেশে তিনি এ অভিযোগ করেন।
ইমরানের আশঙ্কা, তার এবং তার মন্ত্রিসভায় যারা ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিতে পারে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (এফআইএ) ও জাতীয় জবাবদিহি সংস্থা (এনএবি)।
ইমরান বলেন, ‘আপনারা যদি আমাদের দেওয়ালের দিকে ঠেলে দিন, তবে আপনারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’
তিনি বলেন, ‘আজ পর্যন্ত কখনোই পাকিস্তানের আইন ভঙ্গ করিনি। আমি কখনোই কোনো দেশের বিরুদ্ধে নই। আমি ভারত, ইউরোপ কিংবা মার্কিনবিরোধী নই। আমি বিশ্বমানবতার সঙ্গে আছি। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই, কিন্তু দাসত্ব চাই না।’
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে নিয়েও আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেন ইমরান। তিনি বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে পিএমএল-এন প্রধান। দুবার মিথ্যা কথা বলে তিনি পালিয়ে গেছেন। এখন তিনি ফিরে আসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
গত চার বছর নষ্ট হয়েছে-শাহবাজ শরিফ : পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর শাসনের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, বিভিন্ন উন্নয় প্রকল্পের হালহকিত দেখে বুঝতে পারছি, গত চার বছরে কতটা সময় নষ্ট হয়েছে। রোববার ডিয়ামার ভাসা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প পর্যালোচনায় তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তিনি বাঁধ নির্মাণ কাজ ২০২৯ সালের পরিবর্তে ২০২৬ সালের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্টদের।
শাহবাজ বলেন, একজন খাদিম-ই-পাকিস্তান হিসাবে আমি জাতির সামনে মিথ্যা বলব না বা সত্যকে বিকৃত করব না। আমি মনে করি সত্য সামনে আসা উচিত।