1. shahajahanbabu@gmail.com : admin :
পাকিস্তান কি আলী বাবা ও চল্লিশ চোরের দেশ হতে চলেছে? ভিডিও - Pundro TV
সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২১ পূর্বাহ্ন



পাকিস্তান কি আলী বাবা ও চল্লিশ চোরের দেশ হতে চলেছে? ভিডিও

পুন্ড্র.টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিতঃ মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল, ২০২২

পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন শাহবাজ শরিফ। তাঁর ছেলে হামজা শরিফ হতে যাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। অতএব পাকিস্তান এখন বাপ-ব্যাটার দেশে পরিণত হতে চলেছে। আরো বড় পরিসরে বলতে গেলে শাহবাজ শরিফের বড় ভাই তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফও রাজনীতিতে ফিরে আসছেন। ২০১৬ সালে পানামা পেপার্সে নওয়াজ শরিফের নাম আসে। এর সূত্র ধরে ২০১৭-১৮ সালে দুর্নীতি মামলায় তাকে দশ বছরের জেল দেওয়া হয়। তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ হারান এবং কারাভোগ করতে থাকেন। ইমরান খান ক্ষমতায় থাকাকালে চিকিৎসার নাম করে তিনি লন্ডনে পাড়ি জমান।

যাহোক এখন পট পরিবর্তন হয়ে যাওয়ায় তিনি এবং তাঁর সাথে দুই পুত্র হুসাইন নেওয়াজ ও হাসান নেওয়াজ রাজনীতিতে ফিরবেন। সেই সাথে নওয়াজ শরিফের বেয়াই সাবেক অর্থমন্ত্রী ইসহাক দারও রাজনীতিতে ফিরবেন। এরা সবাই দুর্নীতির মামলায় দন্ডিত হয়ে দেশ ছেড়ে বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন, শীঘ্রই যেকোনো দিন পাকিস্তানে ফিরে আসবেন। এর পাশাপাশি নওয়াজ শরিফের বড় মেয়ে মরিয়ম নেওয়াজ আগে থেকেই দেশে অবস্থান করছেন। তিনিও দুর্নীতির মামলায় দন্ডিত।
তার স্বামী ক্যাপ্টেন সফদারও দুর্নীতি মামলায় দন্ডিত। তবে তারা জামিনে আছেন। তারা বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ইমরান খানের বিরোধিতায় দেশ ত্যাগ করতে পারেননি।

ইমরান খানের সাড়ে তিন বছরের শাসন আমলে মরিয়ম নেওয়াজ রাজনীতিতে বেশ সক্রিয় থেকেছেন। ইমরান খান বিরোধী ভীষণ আক্রমনাত্মক বক্তব্য দিতেন। তিনি এখন পাকিস্তানের অন্যতম শীর্ষ নেত্রী। এভাবে পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা এখন শরিফ খানদানের দখলে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো শাহবাজ শরিফ যেদিন প্রধানমন্ত্রী হলেন সেদিনই তাঁর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলার অভিযোগপত্র গঠনের শুনানি হওয়ার কথা ছিলো। তার পুত্র হামজা শাহবাজও ঐ একই মামলার আসামী। কিন্তু শাহবাজ শরিফ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার কিছু আগেই আগামী ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত মামলার শুনানি পিছিয়ে দেওয়া হয় এবং পিতা পুত্রের জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়।

শাহবাজ শরিফের বিরুদ্ধে ১৬ বিলিয়ন রুপির দুর্নীতির অভিযোগ আছে। তার রমজান সুগার মিলের গরীব কর্মচারীদের বেনামী অ্যাকাউন্টে মিলিয়ন মিলিয়ন রুপি জমা থাকার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। শুধুমাত্র একজন কর্মচারী মাকসুদ চাপরাশির একাউন্টেই ৭৭১ মিলিয়ন রুপির সন্ধান পাওয়া যায়। ক্ষমতার দাপটে এসব মামলাগুলো এখন হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে।
উল্লেখ্য শরিফ খানদানের রাজনৈতিক দলের নাম মুসলিম লীগ নুন বা মুসলিম লীগ নেওয়াজ।

ওদিকে ইমরান খান বিরোধী জোটের আরেক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হলো পাকিস্তান পিপলস পার্টি বা পি.পি.পি। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো। ১৯৭৭ সালে জুলফিকার আলী ভুট্টোকে জেনারেল জিয়াউল হকের আমলে ফাসিতে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। পরবর্তীতের তাঁর কন্যা বেনজীর ভুট্টো রাজনীতিতে সক্রিয় হন, দেশের প্রধানমন্ত্রীও হন। বেনজীর ভুট্টো ২০০৭ সালে এক নির্বাচনী র‌্যালিতে জঙ্গী হামলায় নিহত হন। এরপর তাঁর স্বামী আসিফ আলী জারদারী দলের হাল ধরেন এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হন। আর বেনজীর ভুট্টোর পুত্র বিলওয়াল ভুট্টোকে পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান করা হয়।

৩৩ বছর বয়সী বিলওয়াল ভুট্টো এখনও বিয়ে করেননি। তিনি হতে চলেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বিলওয়াল ভুট্টোর ওপর দুর্নীতির মামলা না থাকলেও তাঁর পিতা ও ফুফুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা বিচারাধীন আছে। তাঁর পিতা আসিফ আলী জারদারীকে তো ঘুষ বাণিজ্যের কারণে মিস্টার টেন পারসেন্ট বলে ডাকা হয়। অভিযোগ করা হয় যে এই ভুট্টো পরিবারের প্রচুর সম্পদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গচ্ছিত আছে।

ইমরান খান বিরোধী জোটের আরেক সদস্য জে ইউ আই এফ। এ দলের নেতা মাওলানা ফজলুর রহমান। তিনি গত নির্বাচনে জয়লাভ করতে না পারায় ভীষন ক্ষুব্ধ ছিলেন। অতীতে ডিজেল তেল ব্যবসার পারমিট কেনা বেচার কেলেংকারীর কারণে পাকিস্তানে তিনি ডিজেল ফজলু হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি ইমরান খানকে হরহামেশাই ইহুদিদের এজেন্ট বলে গালি গালাজ করেন।

অপরদিকে ইমরান খানের শিবির থেকে উল্টো তাকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোলাম বলে অভিযুক্ত করা হয়। এদিকে ইমরান খানের বিরুদ্ধে ধর্মীয় উগ্রবাদী দল TLP বা তেহরিক ই লাববায়েক পাকিস্তান দলও সোচ্চার হয়েছে। অন্যান্য ধর্মীয় দলও ইমরান খানের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হয়েছে।

এদিকে আবার ইমরান খান বিরোধী এসব জোটের সাথে যোগ দিয়েছে তাঁরই নিজ দল পিটিআই এর দুজন বিদ্রোহী নেতা। একজন হলেন জাহাঙ্গীর খান তারিন। ইমরান খানের শাসন আমলে তাঁর বিরুদ্ধে চিনি কেলেংকারীর অভিযোগ আসলে তাঁকে তদন্তের আওতায় আনা হয়। অন্য একজন হলেন আলীম খান। অভিযোগ করা হয় যে, তিনি তার ৩০০ ক্যানাল জমি বৈধ করতে চাইলে ইমরান খান তাতে বাধা দেন।

ওদিকে, চীনের অর্থ সহায়তায় পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন প্রকল্প হচ্ছে CPEC. এর চেয়ারম্যান ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল আসিম বাজওয়া। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে তিনিও অপসারিত হন বা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে চলে যান।

এদিকে পাকিস্তানের বিচার বিভাগের দ্বিতীয় সিনিয়র বিচারপতি হলেন জাস্টিজ কাজী ফয়েজ ঈসা। তিনিই পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধান বিচারপতি হবার তালিকায় সর্বপ্রথমে রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হয়। তবে তিনি ঐ সব সম্পদ তাঁর স্ত্রী মালিকানায় আছে বলে জবাব দেন এবং দীর্ঘ শুনানি শেষে কোনোক্রমে অবমুক্ত হয়ে যান।

ইমরান বিরোধী জোটে সবচেয়ে বড় চমক দেখান করাচি ভিত্তিক রাজনৈতিক দল এম.কিউ.এম। সুবিধাবাদী এ দলটি শেষ মুহুর্তে ইমরান খানের কোয়ালিশন ত্যাগ করে ৭টি আসন নিয়ে বিরোধী যোগ দেয়। এম কিউ এম তথা মোহাজের কওমি মুভমেন্ট। মোহাজের শব্দের অর্থ দেশত্যাগী। ১৯৪৭ সালে ভারতের বিহার থেকে দেশত্যাগী হয়ে যারা করাচিতে গিয়েছিলো তাদেরকে নিয়ে এই দল গঠন করা হয়। এদের ডাক সাইটে নেতা ছিলেন আলতাফ হোসেন। তিনি এখন সন্ত্রাসবাদ ও দেশদ্রোহিতার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে লন্ডনে বসবাস করছেন।
ইমরান বিরোধী জোটে পাকিস্তানের সবচেয়ে বিপদজনক অঞ্চল ওয়াজিরস্তানের দু’জন সংসদ সদস্য যোগ দিয়েছেন। একজন হলেন আলী ওয়াজির আর অন্যজন হচ্ছেন মহসিন দাওয়ার। এই দুজনকে অনেকেই মার্কিনপন্থী পাঠান বলে আখ্যায়িত করে থাকেন এবং তাদেরকে PTM বা পাখতুন খোয়া তাহফুজ মুভমেন্ট দলের সাথে সম্পর্কিত মনে করেন।

এই হলো বর্তমান পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর জোট। তাদের জোটের নাম পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট বা PDM. মোট ১১টি দল নিয়ে এই জোট গঠিত। এরা সবাই সম্প্রতি ইমরান খান বিরোধিতায় একাজোট হয়েছে। অথচ অতীতে এরা ভীষণ কুৎসিতভাবে পরস্পর কাদা ছোড়াছুড়ি ও লড়াই করেছে।

পাকিস্তানের ক্ষমতায় সবে মাত্র এই যে ১১ দলীয় জোট ও তাদের সহযোগীরা অধিষ্ঠিত হলো তাতে অনেকেই বিরূপ সমালোচনা করছেন। বিশেষ করে শরিফ খানদান ও ভুট্টো পরিবারের অতীত দুর্নীতি ক্ষমতার অপব্যবহারের উদাহরন টেনে বলছেন পাকিস্তান কি আলী বাবা ও চল্লিশ চোরের দেশ হতে চলেছে? সবচেয়ে আজব বিষয় হলো সাধারনত দেখা যায় যখন কোনো সরকারের পতন হয় তখন তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কাহিনী শোনা যায়। আর পাকিস্তানে হচ্ছে এর উল্টোটা।
বিদায়ী ইমরান খানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ নাই বরং নব গঠিত সরকারের দুর্নীতির কাহিনী নিয়ে পাকিস্তানের রাজনীতি ভীষণ সরগরম।

পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ ও এস্টাবলিশমেন্টদের দুর্নীতি ও কুকীর্তির কার্যকলাপ সম্পর্কিত অভিযোগগুলো কতটা সত্য কতটা মিথ্যা তা জানা ও বোঝার ক্ষমতা সাধারণ মানুষের খুব কমই আছে। তবে সত্য মিথা যাই হোক আমরা চাই পৃথিবীর সব দেশেই সৎ ও ভালো মানুষেরা দেশ শাসন করুক। তবেই পৃথিবীতে শান্তি বজায় থাকবে।

https://www.facebook.com/pundrotvbd/videos/2078880208940426

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২
Developed By ATOZ IT HOST