গত ৯ এপ্রিল মধ্যরাতে ইমরান খান অপমানজনকভাবে ক্ষমতা থেকে বিতারিত হয়েছেন। গত এক মাস ধরে তাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছিলো। সংসদ, বিচার বিভাগ, মিডিয়া, সেনা বাহিনী এই চতুষ্টয় শক্তি তাঁর বিরুদ্ধে একজোট হয়ে নেমেছিলো। এর বিপরীতে জনগনের ভালোবাসার ওপর ভর করে ইমরান খান একাই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু শেষমেশ তিনি মসনদ কেন্দ্রিক নোংরা রাজনীতির কাছে হেরে গেলেন। তিনি ১৭৫৭ সালের বাংলা বিহার উড়িষ্যার নবাব সিরাজউদ্দৌলা এবং ১৭৯৯ সালের দক্ষিণ ভারতের মহিশূর রাজ্যের টিপু সুলতানের ভাগ্য বরন করলেন। ইতিহাসের সেই উপাখ্যানেরই নতুন সংস্করন সংগঠিত হলো। তিনি যাবার আগে বারবার বলে যাচ্ছিলেন ইতিহাস মীর জাফর মীর সাদিকদের ক্ষমা করে না।
পৃথিবী ইমরান খানকে মনে রাখবে। কেননা তিনি ছিলেন সৎ ও সাহসী। গোলামী তথা পরাধীনতার বিরুদ্ধে শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত লড়ে গেছেন। তিনি লড়াই করে পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ ও ক্ষমতার কুশীলবদের নোংরা চেহারা উন্মোচন করে দিয়েছেন। তিনি বীরের মর্যাদা নিয়ে বিদায় নিয়েছেন। পাকিস্তানের প্রচলিত নোংরা কুৎসিত রাজনৈতিক ধারার বিপরীতে তিনি ছিলেন এক সত্যভাষী রাজনীতিবিদ। তার ভাষণ ও কথনে অনুপ্রেরণা ও আদর্শের ছাপ পাওয়া যায়।
পৃথিবী ইমরান খানকে তার উত্তম গুনাবলীর কারণে মনে রাখবে। তরুন বয়সে ক্রিকেট স্টার হয়ে বিশ্বকে হাতের মুঠোয় পেয়েছিলেন। সারা জীবনের উপার্জিত অর্থ ব্যয় করে ক্যান্সার হাসপাতাল করেছেন, ২২ বছর ধরে রাজনৈতিক লড়াই সংগ্রাম করে জনগনের সেবা করতে চেয়েছেন। অথচ তাঁর মতো ব্যক্তিত্ব একটু মাত্র আপোষ করলেই আজীবন রাজকীয় আয়েশী জীবন যাপন করতে পারতেন। মুখে থাকবে এক কথা আর অন্তরে অন্য কথা তাহলেই সারা পৃথিবী অতীব সোজা। তিনি এই নোংরা নীতির বিরোধী ছিলেন।
রাজনীতিক ইমরান খানের ঝলক বিশ্ববাসী প্রথম লক্ষ্য করলেন যখন তিনি ২০১৯ সালে জাতিসংঘের সাধারন পরিষদে জ্বালাময়ী ভাষণ দিলেন। তখন থেকেই গুঞ্জন শুরু হয় তিনি বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। অতঃপর ৩ বছরের মাথায় সেটাই সত্যি হলো।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে তিনি এমন এক সময়ে রাশিয়া সফর শুরু করেন যখন হঠাৎ প্রেসিডেন্ট পুতিন ইউক্রেনে হামলা করে বসেন। ঘটনাটি কাকতালীয়। এর সাথে ইমরান খানের কোনো যোগসাজশ নাই। কিন্তু এমন মোক্ষম সুযোগ কিছুতেই দেশ বিদেশের ইমরান বিরোধী মহল হাতছাড়া করলো না।
এক পরাশক্তিধর রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইমরান খানকে প্রথমে ধমক দেয়া হলো। এর একদিন পর ৮ মার্চ ২০২২ তারিখে সংসদে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হলো। নিজ দলের কয়েকজন সংসদ সদস্য, শরীক দলগুলো, সেনাবাহিনী, বিচার বিভাগ, মিডিয়া সবাই তাঁকে ছেড়ে চলে গেলো। ঠিক এক মাসের মাথায় তিনি ক্ষমতাচ্যুত হলেন। সংবিধান ও আইনের প্যাঁচে তিনি উৎখাত হলেন। গভীর রাতে আদালত বসলো।
দর্শক! ইমরান খান ক্ষমতায় টিকে থাকতে রাইফেল রকেট ব্যবহার করেননি। তিনি সংবিধানের ভেতর থেকেই সাংবিধানিক ও আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু এ বিষয়ে পাকিস্তানের আদালত সম্পর্কে কথিত আছে যে-Judges are controlled by Generals.
পাকিস্তানের সংবিধানের আর্টিকেল ৬৯ অনুযায়ী আদালত স্পীকারের রুলিংকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে না। অথচ, আদালত সংসদের কাজে হস্তক্ষেপ করলো। স্পীকারের রুলিং বাতিল করে দিয়ে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট আয়োজনের ব্যবস্থা করলো। তাও আবার সুয়োমোটো নোটিশ দিয়ে অর্থাৎ স্ব-প্রনোদিত হয়ে।
ইমরান খান যখন আইনের মধ্য দিয়েই সর্বশেষ চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন তখন গভীর রাতে সুপ্রিম কোর্ট বসে যায়, পেছনে থাকে সেনাবাহিনীর ব্যাকিং। শনিবার ৯ এপ্রিল ২০২২ তারিখে রাত বারোটার মধ্যে সংসদে অনাস্থা পাশ করার ইমরান ও তার সহপাঠীদের গ্রেফতারের হুমকি দিয়ে রাখা হলো। তারপরও ইমরান খান মাথা নত করেননি। তাঁর স্পীকার ও ডেপুটি স্পীকার পদত্যাগ করলেন এই বলে যে তারা পুতুল সরকার প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্রের সহযোগী হবেন না। স্পীকার বিদেশী ষড়যন্ত্রের চিঠি ভবিতব্য প্রধানমন্ত্রীর জন্য দপ্তরে রেখে দিলেন। ইমরান খান বিদেশী ষড়যন্ত্রের চিঠি প্রধান বিচারপতি ও প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠিয়ে দিলেন।
অতঃপর বিদায় ইমরান খান। চগ হাউজ থেকে নিজেই গাড়ি চালিয়ে নিজ বাসভবন বানীগালার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। উপস্থিত গুটি কয়েক সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলেন স্যার! আপনার মালসামানা? তিনি বললেন আমার গাড়িতে দুই একটা কাপড় আছে। আমি তো প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে থাকিনা, বানীগালায় নিজ বাপের বাড়িতেই থাকি। প্রধানমন্ত্রীর হাউজে যখন আসতাম তখন শুধু এই ডায়েরিটাই নিয়ে ঢুকতাম।
https://www.facebook.com/pundrotvbd/videos/2054515614717062