ইউক্রেইনে সামরিক অভিযানের পর পশ্চিমা দেশগুলোর একের পর এক নিষেধাজ্ঞায় প্রায় এক ঘরে হয়ে পড়া রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অবন্ধু দেশের তালিকা তৈরি করেছেন আগেই। এবার সেইসব অবন্ধু দেশ থেকে রাশিয়ায় প্রবেশের ওপর কড়াকড়ির পদক্ষেপ আসতে চলেছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ টিভিতে এক মন্তব্যে বলেছেন, “বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর অবন্ধুসুলভ আচরণের পাল্টা জবাবে ভিসার ওপর কড়াকড়ি আরোপের জন্য প্রেসিডেন্টের একটি খসড়া ডিক্রি প্রস্তুত করা হচ্ছে। এতে ওইসব অবন্ধু দেশের নাগরিকদের রাশিয়ায় প্রবেশের ওপর বেশকিছু বিধিনিষেধ আরোপ হবে।”
তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আর কিছু জানাননি ল্যাভরভ। রাশিয়া প্রথমে অবন্ধু দেশের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোকে রেখেছিল, যারা যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকে দায়ী করে দেশটির উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, রুশ বিমানের জন্য নিজেদের আকাশ বন্ধ করে দিয়েছে।
পরে রাশিয়া এ তালিকায় আরও দেশকে অন্তর্ভুক্ত করে। অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ডের পাশাপাশি এশিয়ার জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুরকেও অবন্ধু দেশের তালিকায় রেখেছে রাশিয়া। যোগ করা হয়েছে তাইওয়ানের নামও, যাকে চীন নিজেদের অংশ বলেই মনে করে।
যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন নেটো জোটে ইউক্রেইনের যোগ দেওয়ার আগ্রহের ঘোর বিরোধী রাশিয়া গত ২৪ ফেব্রুয়ারি তার প্রতিবেশী দেশটিতে সামরিক অভিযান শুরু করে।
এরপর খোদ পুতিনসহ রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ব্যক্তির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পশ্চিমা দেশগুলো এবং তাদের মিত্ররা।
আন্তঃব্যাংক লেনদেনের বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম সুইফট থেকে রাশিয়াকে বাদ দেওয়ার পাশাপাশি ভিসা ও মাস্টারকার্ড এবং অ্যাপল পে ও গুগল পে সেবা থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে দেশটি।
ইউক্রেইন-রাশিয়াকে যুদ্ধের ময়দান থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাতে গিয়ে মস্কোর কট্টরপন্থিদের কোপানলে পড়েছিলেন রোমান আব্রামোভিচ।
তার মুখপাত্র দাবি করেছেন, দুই পক্ষের শাস্তি আলোচনায় মধ্যস্থতা করতে কিইভে অবস্থানের সময় রুশ এই ধনকুবকে বিষ দেওয়া হয়েছিল।
সোমবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এই মাসের শুরুতে কিইভে সন্দেহজনক ওই বিষ প্রয়োগের ফলে আব্রামোভিচের চোখে জ্বালাপোড়া এবং ত্বকে সমস্যা দেখা দিয়েছিল।
তবে ব্রিটিশ ফুটবল ক্লাব চেলসির মালিক আব্রামোভিচ সেরে উঠেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
শুধু আব্রামোভিচই নয়, আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী দুজন ইউক্রেনীয়ও একই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন বলে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যমটি জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, রাশিয়ার কট্টরপন্থিরা, যারা আলোচনা ভেস্তে দিতে চাইছিল, তারাই এই বিষ প্রয়োগের হোতা।
দেড় যুগ আগে সাবেক রুশ গোয়েন্দা আলেকজান্ডার লিটভিনেনকো যুক্তরাজ্যে পালিয়ে যাওয়ার পর বিষ প্রয়োগের শিকার হয়েছিলেন, যা ব্যাপক আলোচিত ছিল বিশ্বজুড়ে।
তখন অভিযোগ উঠেছিল, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশেই লিটভিনেনকোকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়।
ইউক্রেইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রুশবিরোধী ভিক্টর ইউশেঙ্কোকে বিষ প্রয়োগের অভিযোগও রয়েছে মস্কোর এজেন্টদের বিরুদ্ধে।
প্রেসিডেন্ট পুতিনের নির্দেশে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেইনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া, যার মধ্য দিয়ে ইউরোপে বড় যুদ্ধ ফিরেছে দীর্ঘদিন বাদে।
তারপর চেলসি ফুটবল ক্লাবের মালিক রুশ-ইসরায়েলি ধনকুবের আব্রামোভিচ ইউক্রেইন এবং রাশিয়াকে সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছতে সহায়তা করার জন্য মধ্যস্থতার চেষ্টা চালান।
বিবিসি এ মাসের শুরুতে জানিয়েছিল, ইউক্রেইনের কর্মকর্তারা আলোচনায় একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য তার কাছে সাহায্য চান। তখন সক্রিয় হন আব্রামোভিচ।
তার মধ্যস্থতায় ওই বৈঠকে ইউক্রেইনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ এবং উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইকোলা তোকিতস্কি, রাশিয়ার উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যালেক্সান্ডার ফোমিন এবং বেলারুশে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বরিস গ্রিজলোভ উপস্থিত ছিলেন।
তবে আলোচনায় কোনো সফলতা আসেনি, যুদ্ধ এখনও চলছে।
এদিকে ইউক্রেইনে আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার উপর যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছেন পুতিন-ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আব্রামোভিচ। তবে তিনি পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে আসছেন।
আব্রামোভিচের উপর নিসেধাজ্ঞা আসায় তার মালিকানাধীন ক্লাব চেলসিও বড় বিপাকে পড়েছে। তিনি ক্লাব বিক্রি করে দেওয়ার ঘোষণা দিলেও তাও আটকে গেছে।
https://www.facebook.com/pundrotvbd/videos/1119504462175698