মস্কোর ভয়েই পশ্চিমারা ইউক্রেইনকে অত্যাধুনিক অস্ত্র ও যুদ্ধযান দিতে নারাজ কিনা, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।
শনিবার রাতে যে ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কিকে এই প্রশ্ন তুলতে দেখা যায়, ওই ভিডিওতে তাকে বেশ বিরক্ত মনে হয়েছে বলেও জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে ইউক্রেইনজুড়ে রুশ হামলার প্রতিক্রিয়ায় কিইভ পশ্চিমাদের কাছ থেকে একাধিক চালানে অস্ত্র সহায়তা পেয়েছে; আক্রান্ত দেশটিতে ট্যাংকবিধ্বংসী ও বিমানবিধ্বংসী আরও ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে অনেক দেশ।
কিন্তু জেলেনস্কি চাইছেন ট্যাংক, বিমান আর জাহাজবিধ্বংসী ব্যবস্থাপনা।
“আমাদের অংশীদারদের কাছে এগুলো আছে, সেগুলোতে কেবল ধুলাই জমছে। এই চাওয়া কেবল ইউক্রেইনের স্বাধীনতার জন্য নয়, ইউরোপের স্বাধীনতার জন্যও,” বলেছেন ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট।
জেলেনস্কি জানান, ইউক্রেইনের দরকার কেবল নেটোর বিমানের ১ শতাংশ আর ট্যাংকের ১ শতাংশ। এর বেশি কিছু চাইছেনও না তারা।
“আমরা ৩১ দিন ধরে অপেক্ষা করছি। ইউরো-আটলান্টিক সম্প্রদায়ের দায়িত্বে কে? সত্যিই কি মস্কো দায়িত্বে, কারণ তারা ভয় দেখাচ্ছে?,” বলেন তিনি।
ইউক্রেইনের এ প্রেসিডেন্টের আশঙ্কা, তার দেশের পতনের পর রাশিয়া হয়তো ইউরোপের আরও ভেতরে ঢোকার চেষ্টা চালিয়ে যাবে।
তিনি ইউক্রেইনকে ‘নো-ফ্লাই জোন’ ঘোষণা করতে নেটোর প্রতি বারবার আহ্বান জানালেও যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট প্রতিবারই তা প্রত্যাখ্যান করে এসেছে।
পশ্চিমাদের ভাষ্য, ‘নো-ফ্লাই জোন’ ঘোষণা করলে যুদ্ধ ইউক্রেইনের বাইরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানিয়েছে, শনিবার জেলেনস্কি পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেই দুদার সঙ্গে কথা বলেন এবং পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে থাকা রাশিয়ার বানানো যুদ্ধবিমানগুলো এখনও ইউক্রেইনের হাতে না পৌঁছানোয় হতাশা ব্যক্ত করেন।
“বিমান নিয়ে বিলম্বের দাম হাজারও ইউক্রেইনীয়র জীবন,” জেলেনস্কি এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে তার কার্যালয়।
পোল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশই রুশ হামলা মোকাবেলায় ইউক্রেইনকে যুদ্ধবিমান পাঠাতে আগ্রহী; চলতি মাসের শুরুর দিকে পোল্যান্ড তাদের কাছে থাকা মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানগুলোকে জার্মানিতে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটির মাধ্যমে ইউক্রেইনকে দিতে চাইলেও ওয়াশিংটন তাৎক্ষণিকভাবে ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।
রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, শনিবার পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে ইউক্রেইনের শরণার্থীদের কাছে তাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা শুনে পুতিনকে ‘কসাই’ আখ্যায়িত করেছেন বাইডেন।
এর তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে মস্কোর পক্ষ থেকে। ক্রেমলিন বলেছে, পুতিন ক্ষমতায় থাকবেন কি না, সে সিদ্ধান্ত বাইডেন নেবেন না।
হোয়াইট হাউজ অবশ্য পরে বিষয়টি এভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছে যে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন রাশিয়ায় সরকার পরিবর্তনের ডাক দেননি। তিনি আসলে বলতে চেয়েছেন, ইউক্রেইনে দীর্ঘমেয়াদী সংঘাতের জন্য বিশ্বকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
ওয়ারশর রয়্যাল কাসলে দেওয়া ভাষণে বাইডেন সোভিয়েত লৌহ যবনিকার অধীনে পোল্যান্ডের চার দশকের ইতিহাস মনে করিয়ে দেন। তিনি বলেন, বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার স্বার্থে রাশিয়ার স্বৈর শাসনের বিরুদ্ধে বিশ্বের গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর জরুরি ভিত্তিতে একাট্টা হওয়া দরকার।
বক্তব্যের শেষ দিকে তিনি বলন, “ঈশ্বরের দোহাই, এই লোকটা ক্ষমতায় থাকতে পারে না।”
এর প্রতিক্রিয়ায় ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, “রাশিয়ার ক্ষমতায় কে থাকবে, এটা বাইডেন ঠিক করবেন না। কেবল রুশ ফেডারেশনের নাগরিকরাই এটা নির্ধারণ করার এখতিয়ার রাখে।”
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে হোয়াইট হাউজের একজন মুখপাত্র বলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন রাশিয়ায় পুতিনের ক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করেননি, সেখানে ক্ষমতার পরিবর্তনের কথাও বলেননি। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, প্রতিবেশীদের ওপর পুতিনের ক্ষমতার যে প্রয়োগ, সেটা চলতে পারে না।
পুতিন ‘ক্ষমতায় থাকতে পারেন না’- এ অংশটি বাইডেনের ভাষণের খসড়ায় ছিল না বলেও মন্তব্য করেন হোয়াইট হাউজের ওই কর্মকর্তা।
মার্কিন কর্মকর্তারা এর আগেও বলেছেন, পুতিনকে রাশিয়ার ক্ষমতা থেকে সরানো তাদের লক্ষ্য নয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন এ মাসের শুরুতেও বলেছেন, “রাশিয়ার ক্ষমতায় পরিবর্তন ঘটানো আমাদের উদ্দেশ্য নয়। রাশিয়ার নেতৃত্ব কে দেবে, সে দেশের মানুষই তা ঠিক করবে।”
https://www.facebook.com/pundrotvbd/videos/361432335885961