ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সরাসরি আলোচনায় বসার আহ্বান জানালেও রাশিয়ার নেতা এখনও এ ধরনের কোনো বৈঠকের জন্য ‘প্রস্তুত নন’ বলে মন্তব্য করেছেন তুরস্কের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
জেলেনস্কি শনিবার এক ভিডিও বার্তায় পুতিনকে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আসতে বলেন; নাহলে পরে পস্তাতে হবে বলে হুঁশিয়ারও করেন।
“জেলেনস্কি বসতে প্রস্তুত, কিন্তু পুতিন মনে করছেন, শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক করার মতো পরিস্থিতি এখনও আসেনি,” বলেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোয়ানের মুখপাত্র ও প্রধান উপদেষ্টা ইব্রাহিম কালিন।
নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধবিরতি এবং তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলা নৃশংস যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধানে আলোচনার পথ খুঁজে বের করতে তুরস্ক ও এরদোয়ান মধ্যস্থতাকারীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের চেষ্টা করছে।
তুরস্ক নেটোর সদস্য; ৩০ দেশের এ সামরিক জোটকে পুতিন অপছন্দ করলেও এরদোয়ানের সঙ্গে তার সম্পর্ক বেশ ভালো।
তুর্কি প্রেসিডেন্ট বৃহস্পতিবার জেলেনস্কি ও পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন, ওই কলগুলোতে কালিনও ছিলেন।
তুরস্কের এই কর্মকর্তা জানান, পুতিন এখন আর জেলেনস্কিকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরাতে চাইছেন না।
কালিন বলেন, “পছন্দ হোক বা না হোক, তিনি এখন জেলেনস্কিকে ইউক্রেইনের জনগণের নেতা হিসেবেই মেনে নিচ্ছেন,”
কোনো এক সময়ে দুই নেতার মধ্যে বৈঠক হবে বলেও আশাবাদী এ তুর্কি কর্মকর্তা।
“আমার বিশ্বাস কোনো না কোনো এক পর্যায়ে বৈঠকটি হবে। এক পর্যায়ে শান্তি চুক্তিও হবে। আমরা সবাই চাই এটা দ্রুতই হোক, কিন্তু হয়তো পুতিন মনে করছেন, তিনি তখনই এটা (বৈঠক) করবেন, যখন একটা শক্তিশালী অবস্থানে থাকবেন; যেন সামরিক ক্ষয়ক্ষতি বা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞায় তাকে দুর্বল না দেখায়,” বলেছেন তিনি।
সেই সময় এখনও হয়নি, শিগগিরই হয়তো হবেও না, বলেছেন কালিন।
অপরদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন স্বাস্থ্যবান, সুস্থ এবং ‘অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো’ আছেন বলে জানিয়েছেন বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো।
জাপানের টেলিভিশন চ্যানেল টিবিএস কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পুতিনের শারীরিক অবস্থার কথা এভাবেই বর্ণনা করেন বেলারুশ প্রেসিডেন্ট।
সম্প্রতি ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলোতে পুতিনের শারীরিক অবস্থা নিয়ে বেশ কিছু নেতিবাচক খবর প্রকাশ পায়। সেখানে পুতিন অসুস্থ, কড়া ডোজের ওষুধ খাচ্ছেন, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় তার শরীর ফুলে গেছে, এমনকি তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত বলেও খবর প্রকাশ পেয়েছে।
যদিও ওইসব খবরের সবই ছিল অনুমান নির্ভর। এবারই প্রথম নয়, এর আগেও ব্রিটিশ মিডিয়া পুতিনের স্বাস্থ্য এবং অসুস্থতা নিয়ে মাতামাতি করেছে।
আগে রেকর্ড করা ওই সাক্ষাৎকারে পুতিনের ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত লুকাশেঙ্কো বলেন, ‘‘তিনি এবং আমি শুধু রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবেই সাক্ষাৎ করি না। আমরা পরষ্পরের বন্ধুও বটে। আমি অবশ্যই তার সম্পর্কে বিস্তারিত সব কিছু হোক সেটা রাষ্ট্রীয় বা ব্যক্তিগত যতদূর সম্ভব গোপন রাখি।
‘পুতিন পুরোপুরি সুস্থ আছেন, তিনি অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে স্বাস্থ্যবান আছেন…তিনি একজন অ্যাথলেট। পশ্চিমা বিশ্ব এবং আপনি, আপনাদের এই বোকামি থেকে বেরিয়ে আসা উচিত, এই কল্পকাহিনী আপনাদের মাথা থেকেই বেরিয়েছে।”
পুতিন ও লুকাশেঙ্কোর বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের। এমনকি ইউক্রেইনে আগ্রাসন চালাতে রাশিয়া বেলারুশের ভূখণ্ড ব্যবহার করছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেইনের আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। যুদ্ধ শুরুর কয়েকদিন পর এমন গুঞ্জনও আরম্ভ হয়েছিল যে, রাশিয়ার সঙ্গে বেলারুশও ইউক্রেইন আগ্রাসনে যোগ দিতে যাচ্ছে।
https://www.facebook.com/watch?v=962031287789767