সোমবার রাশিয়ার ন্যাশনাল গার্ডের প্রধান বলেছেন, ইউক্রেনে মস্কোর সামরিক অভিযান পরিকল্পনামত চলছে না। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স । এটাই হচ্ছে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের গতি প্রত্যাশার চেয়ে ধীরগতি হওয়ার বিষয়ে ক্রেমলিনের একজন কর্মকর্তার কাছ থেকে পাওয়া সবচেয়ে শক্তিশালী স্বীকারোক্তি।
প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং সাবেক দেহরক্ষী ভিক্তর জোলোতভ বলেছেন, ‘হ্যাঁ আমি বলব যে, সব কিছু আমাদের পছন্দমতো দ্রুত চলছে না। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একদল নীতিনির্ধারক কাজ শুরু করেছেন কিভাবে রাশিয়ার মজুদকৃত বিপুল সোনা কাজে লাগানোর সুযোগ সীমিত করে দেওয়া যায়। অর্থনৈতিক এ সংকটে নগদ অর্থের জন্য মূল্যবান এ ধাতু বিক্রি করে দিতে পারেন পুতিন।সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে দ্বিপক্ষীয় একটি বিল উপস্থাপন করা হয়েছে। এর লক্ষ্য পুতিনের ওপর আরো আর্থিক চাপ তৈরি করা; ব্যাপক অবমূল্যায়নে পড়া মুদ্রা রুবেলের দাম বাড়াতে পুতিন যাতে সোনা কাজে লাগাতে না পারেন। বর্তমান নিষেধাজ্ঞাগুলোতে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভাণ্ডারে থাকা প্রায় ১৩০ বিলিয়ন ডলার সোনা লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি।
সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সিনেটর অ্যাংগাস কিং বলেন, ‘এ নিষেধাজ্ঞার ফলে পুতিনের আর্থিক ফাঁস আরো কঠোর হবেএরং ‘আমরা ইউক্রেনে তাদের এ নৃশংস কর্মকাণ্ড বন্ধ করার জন্য আর্থিক চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করছি। আপনি এমন দ্বিপক্ষীয় বিল কখনো দেখেননি। ’ কিং আরও বলেন, ‘সোনা এই আর্দ্র তহবিলের অংশ, যা পুতিন নিষেধাজ্ঞার প্রাক্কালে সংগ্রহ করেছেন। ’ রাশিয়ার দুঃসময়ে সোনা বড় সম্পদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ পশ্চিমারা কার্যত দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেশির ভাগ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ জব্দ করে রেখেছে।
মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি জ্যানেট ইয়েলেন গত বৃহস্পতিবার সতর্ক করেছেন যে মার্কিন কর্মকর্তারা এবং তাঁদের ইউরোপীয় মিত্ররা রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞার কথা বিবেচনা করছে।
এদিকে, বিশ্বজাবাজারে খাদ্যশস্য রপ্তানি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাশিয়া। সোমবার রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী এই নিষিদ্ধাজ্ঞার কথা জানান। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স
রাশিয়ার কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ইন্টারফ্যাক্সকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘কৃষি মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে একটি সরকারি ডিক্রির খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আগামী ১৫ মার্চ থেকে ৩০ জুন পযন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে গম, যব, ভুট্টা ও রাইস সহ কোনো খাদ্যশস্য রপ্তানি করা হবে না। খুব দ্রুতই ডিক্রিটি কার্যকর করা হবে।’
প্যারিসভিত্তিক সংস্থা ফ্রন্ট-মান্থ মের তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপে এর মধ্যেই প্রতি টন গমের দাম বেড়েছে এক দশমিক ৮ শতাংশ। ‘আমরা আশা করছি—রপ্তানি বিষয়ক পুরনো যে চুক্তিগুলো আছে, সেসব সচল রাখবে রাশিয়া। যদি তা না রাখে, সেক্ষেত্রে বিশাল বিপর্যয় ঘটবে।’
আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের একাংশের ধারণা, ইউক্রেনে রুশ অভিযানকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক যেসব নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, সেসবের জবাব দিতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি।