রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয় ইউক্রেইনের রাজধানী কিয়েভের সুনির্দিষ্ট কয়েকটি নিশানায় হামলা চালানোর হুমকি দিয়ে অধিবাসীদের সতর্ক করার পরই নগরীর কেন্দ্রস্থলে একটি টিভি টাওয়ারে রকেট হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী।
ইউক্রেইন সরকারের জরুরি সেবা বিভাগ টিভিতে এক বিবৃতিতে হামলায় কমপক্ষে পাঁচজন নিহত হওয়ার খবর জানায়।
কিয়েভের মেয়র জানিয়েছেন, দুটো রকেট টাওয়ারটিতে আঘাত হানে। এতে টাওয়ারটির কাছ দিয়ে হেঁটে যাওয়া ৫ জন নিহত হন। হামলার আশঙ্কা থাকার কারণে মানুষজনকে রাস্তা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
অনলাইনে ইউক্রেইনের জরুরি সেবা বিভাগের শেয়ার করা ভিডিওতে প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে, টাওয়ারটির পাদদেশে ধ্বংসস্তুপের মধ্যে জ্বলতে থাকা আগুন নেভাতে বিদ্যুতের লাইন নামিয়ে ফেলছে কাছ দিয়ে হেঁটে যাওয়া মানুষজন।
ইউক্রেইনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বলেছে, এই হামলার কারণে কিছু যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং কয়েকটি টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার ব্যাহত হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার ফুটেজে দেখা গেছে, টিভি টাওয়ারস্থলে বিস্ফোরণ হয়েছে। ফুটেজটি যাচাই করে দেখা হচ্ছে।
এই হামলা হওয়ার আগে মঙ্গলবার বিকালে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, “রুশ বাহিনী কিয়েভে ইউক্রেইনের সিকিউরিটি সার্ভিসের (এসবিইউ) প্রযুক্তি কেন্দ্রগুলো এবং প্রধান সাই-অপস সেন্টারকে (সেন্টার ফর ইনফরমেশন এন্ড সাইকোলোজিক্যাল অপারেশনস) নিশানা করে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।”
কাছাকাছি এলাকাগুলো থেকে অধিবাসীদেরকে সরে যেতে বলা হয়েছিল বিবৃতিতে। রুশ কর্মকর্তারা বলেছিলেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রচারণা বন্ধ করতেই তাদের এই হামলা চালানো।
ইউক্রেইনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বলছে, কিয়েভের টিভি টাওয়ারস্থলে এই হামলার পর রাশিয়া নগরীটির যোগাযোগ অবকাঠামো গুঁড়িয়ে দিতে চাইছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অপরদিকে ইউক্রেনে রুশ হামলার মুখে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইউরোপের নেতাদের বলেছেন, ‘আপনারা যে আমাদের পাশে আছেন, তার প্রমাণ দিন।’
অবিলম্বে ইউক্রেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যপদ দিতে জোটের কাছে আনুষ্ঠানিক আবেদন জানানোর এক দিন পরই এ কথা বললেন জেলেনস্কি।
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের ষষ্ঠ দিনে গতকাল মঙ্গলবার ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের এক জরুরি অধিবেশনে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। জরুরি ভিত্তিতে ইইউয়ের সদস্যপদের জন্য আবেদন করেছে ইউক্রেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়েছেন, দেশের প্রতিরক্ষার স্বার্থেই এই পদক্ষেপ নিয়েছেন তাঁরা। এ পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের অধিবেশনে তাঁর আবেগঘন বক্তব্যে অধিবেশন কক্ষের সবাই দাঁড়িয়ে হাততালি দেন।
এ ঘটনার পরে মনে করা হচ্ছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ পেতে যাচ্ছে ইউক্রেন। জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা ইউরোপের সমপর্যায়ের সদস্য হওয়ার জন্য লড়ছি। প্রমাণ করুন, আপনারা আমাদের পাশে আছেন। প্রমাণ করুন, আপনারা আমাদের ছেড়ে যাবেন না। প্রমাণ করুন আপনারা ইউরোপিয়ান। তাহলেই জীবন জয় করবে মৃত্যুকে, আলো জয় করবে অন্ধকারকে। আমাদের সঙ্গে ইইউ শক্তিশালী হবে।’
জেলেনস্কির বক্তব্য ইংরেজিতে বলা দোভাষীর কান্নাজড়িত কণ্ঠ এবং ইইউ পার্লামেন্ট সদস্যদের দাঁড়িয়ে হাততালিতে ওই সময় পরিবেশও আবেগপূর্ণ হয়ে ওঠে।
জেলেনস্কি যখন ইইউ পার্লামেন্টে বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন ৪০ মাইল লম্বা সাঁজোয়া যানের বহর নিয়ে রুশ সেনারা ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে অগ্রসর হচ্ছিল।
ইউক্রেইন সংকট সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে রাশিয়া ও ইউক্রেইনের প্রতিনিধিরা আগামী ২ মার্চ দ্বিতীয়দফা বৈঠকে বসবেন।
ইউক্রেইনের সংবাদ মাধ্যমের বরাত দিয়ে রুশ সংবাদ সংস্থা তাস মঙ্গলবার এ খবর দিয়েছে।
ইউক্রেইনের সংবাদ সংস্থা ‘গ্লাভকম’ দেশটির প্রতিনিধি দলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদস্যদের বরাত দিয়ে প্রথমদফা বৈঠকে উভয়পক্ষ কী কী দাবি করেছে সেটা সম্পর্কে জানিয়েছে বলেও দাবি তাস’র।
https://www.facebook.com/pundrotvbd/videos/927530344598120