ইউক্রেইনে রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা জানাতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের যুক্তরাষ্ট্রের আনা একটি খসড়া প্রস্তাবে ভিটো দিয়েছে রাশিয়া; আর ভোটদানে বিরত ছিল চীন, ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
রয়টার্স জানিয়েছে, শুক্রবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ওই প্রস্তাব তোলা হয়। এর পক্ষে ১১টি ভোট পড়লেও পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাশিয়ার ভিটোর ফলে তা পাস হয়নি।
প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া ভোট দিয়েছিল যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, নরওয়ে, আলবেনিয়া, আয়ারল্যান্ড, মেক্সিকো, ব্রাজিল, কেনিয়া, ঘানা ও গ্যাবন।
এদিকে খসড়া প্রস্তাব পাস করাতে না পারলেও একে নিজেদের ‘বিজয়’ হিসেবেই দেখছে পশ্চিমা বিশ্ব। এর মাধ্যমে রাশিয়ার আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা প্রকাশ পেয়েছে বলে মনে করছে তারা।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের মোট ১৫টি সদস্য। এর মধ্যে স্থায়ী পাঁচটি সদস্য হল- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স এবং রাশিয়া। এদের যে কোনো দেশ যে কোনো প্রস্তাব আটকে দিতে পারে।
নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিত্ব প্রতি মাসে পরিবর্তন হয়। ‘কাকতালীয়ভাবে’ জাতিসংঘে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বর্তমানে এই মাসের কাউন্সিল সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
নিয়মানুযায়ী, পরিষদে তোলা কোনো প্রস্তাব পাস করতে গেলে স্থায়ী পাঁচ সদস্যেরই হ্যাঁ ভোট লাগবে। স্থায়ী কোনো একটি দেশ ভিটো দিলে সেই প্রস্তাব আর পাস হয় না।
এই অবস্থায় প্রস্তাবটির খসড়া এখন ১৯৩ সদস্যের সাধারণ পরিষদে তোলা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের দূত লিন্ডা থমাস গ্রিনফিল্ড বলেছেন, “আমরা ইউক্রেইনের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আছি, যদিও নিরাপত্তা পরিষদের বেপরোয়া, দায়িত্বজ্ঞানহীন এক স্থায়ী সদস্য ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতিবেশী দেশের ওপর হামলা চালিয়েছে এবং জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে অবজ্ঞা করেছে।”
কয়েক সপ্তাহ আগেই চীন ও মস্কো ‘সীমাহীন’ অংশীদারিত্বের ঘোষণা দিয়েছে। ইউক্রেন ও তাইওয়ান ইস্যুতে একে অন্যকে সমর্থন করে পশ্চিমের বিরুদ্ধে নিজেদের বন্ধন দৃঢ় করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। নিরাপত্তা পরিষদে ভিটো ক্ষমতা থাকা চীন ইউক্রেইন বিষয়ে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকে ‘রাশিয়ার পক্ষেই’ অবস্থান নিয়েছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত নেবেনজিয়া নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন, যারা যুক্তরাষ্ট্রের ওই খসড়াকে সমর্থন করেননি। ওই প্রস্তাবকে রুশবিরোধী বলে বর্ণনা করেছেন।
“আপনাদের এই খসড়া প্রস্তাব ইউক্রেনীয় দাবার বোর্ডে আরেকটি নৃশংস, অমানবিক পদক্ষেপ ছাড়া আর কিছু নয়,” বলেন তিনি।
ইউক্রেনের জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত সের্গি কিসলিয়্যাস নিরাপত্তা পরিষদের চেম্বারে বলেন, “রাশিয়া বিপক্ষে ভোট দিয়েছে, আমি তাতে বিস্মিত নই। রাশিয়া তার নাৎসি-কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে আগ্রহী।”
প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুদ্ধ ঘোষণা করার পর বৃহস্পতিবার রাশিয়ার বাহিনী ইউক্রেইনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আক্রমণে নামে। বিস্ফোরণ ও গোলাগুলিতে কেঁপে ওঠা বড় বড় শহরগুলোর আনুমানিক এক লাখ লোক ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে; কয়েক ডজন মানুষের মৃত্যুরও খবর এসেছে।
সীমান্ত অঞ্চলগুলো থেকে কিয়েভে যাওয়ার যতগুলো পথ, তার মধ্যে বেলারুশের দিকে থেকে যাওয়ার রাস্তাই সবচেয়ে সংকীর্ণ; বৃহস্পতিবার রাশিয়ার বাহিনীগুলো ওই পথেই এগিয়ে গিয়ে কিয়েভের উত্তরে চেরনোবিলের একসময়কার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দখলে করে নেয়।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেইনের কর্মকর্তারা বলছেন, রাশিয়ার লক্ষ্য হচ্ছে কিয়েভ দখল করা এবং দেশটির পশ্চিমাপন্থি সরকারকে উৎখাত করা।