বগুড়ার পোড়াদহ মেলা বুধবার লাখো মানুষের আগমনের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেলাটি উত্তরাঞ্চলের মাছ ও মিস্টির জন্য বিখ্যাত। মেলাটিকে মাছের মেলাও বলা হয়ে থাকে। মেলা উপলক্ষে এলাকায় ঘরে ঘরে জামাই আত্মীয়দের আগমন ঘটে। এ কারনে জামাই মেলাও বলা হয়। মেলার প্রধান আকর্ষন বাঘাইড় মাছ হলেও এবার সরকারি বিধিনিষেধের কারনে তা তুলতে পারেনি।
বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে গাবতলী উপজেলার গোলাবাড়ী এলাকার পোড়াদহ নামক স্থানে প্রতিবছর মাঘের শেষ বুধবারে অনুষ্ঠিত হয় এই মেলা। মেলা উপলক্ষে ওই উপজেলার ঘরে ঘরে জামাই ও আত্মীয়দের নিমন্ত্রন জানানো হয়। মেলায় প্রধান আকর্ষণ বাঘাইড় মাছ সরকারি বিধি নিষেধের কারনে মেলায় তোলা হয়নি। ফলে ক্রেতার- বিক্রেতারা উভয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বাঘাই মাছ বিলপ্ত প্রজাতির মধ্যে পড়ায় সরকারের পক্ষথেকে বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়। মেলায় যেন বাঘাই বিক্রি করতে না পারে সেজন্য উপজেলা প্রশাসন তদারকি করেন। গাবতলি থানা এস আই ফিরোজ মিয়া।
ঈদসহ অন্য উৎসবে জামাই বা আত্মীয়দের নিমন্ত্রন না জানালেও মেলা উপলক্ষে তাদেরকে নিমন্ত্রন জানানো হয়। ঈদে ওই এলাকার প্রবাসীরা না আসলেও মেলা উপলক্ষে তারা দেশে আসেন। ঈদ উপলক্ষে ওই এলাকার লোক যত না খরচ করে তার চেয়ে বেশি খরচ করে এই মেলা উপলক্ষে। মেলা থেকে বড় মাছ এবং বড় বড় মিস্টি এনে সমাদর করা হয় জামাই ও আত্মীয়দের। আবার জামাইদের দেয়া হয় সালামি। সিলেট থেকে জামাই মাসুদ মিয়া জানান,শ^শুরের দাওয়াতে এসে ১০ হাজার টাকা সালামি পেয়েছে। তিনি মাঝ কিনেছেন ১২ হাজার টাকায়। আরো অন্যান্যন বাজার সহ ২০ হাজার টাকা খরচ হবে তার।
উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের গোলাবাড়ী বন্দরের পূর্বধারে গাড়ীদহ নদী ঘেষে পোড়াদহ নামকস্থানে সন্যাসী পূঁজা উপলক্ষে ১দিনের জন্য এই মেলা বসে। একদিনের জন্য মেলা হলেও সপ্তহ জুড়েই মেলার আমেজ ছড়িয়ে পড়ে গোটা জেলায়। বিশেষ করে গাবতলী উপজেলায় মেলাটি হওয়ায় এখানে প্রত্যেক পরিবারেরই আত্মীয় স্বজনের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। মেলায় দর্শনার্থীদের পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকে কয়েক হাজার ব্যবসায়ীরাও আসে। মেলায় মূল আকর্ষণ ছিল বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। ভোররাত থেকেই আড়তে আড়তে ছুটে যান খুচরা ব্যবসায়ীরা। চাহিদা অনুযায়ী তারা মাছ কেনেন। পরে মাছের পসরা সাজিয়ে দোকানে দোকানে জেঁকে বসেন এসব ব্যবসায়ীরা।
এই মেলার প্রধান আকর্ষণ বাঘাইড় মাছ। সরকার আইন প্রণয়নের মধ্যদিয়ে মাছটি ধরা এবং বিক্রি নিষিদ্ধ করায় এবার বাঘাইড় মাছে উপস্থিতি ছিলো না। তবে মেলায় রুই, কাতলা, মৃগেল, বোয়াাল, সিলভার কার্প, বিগহেড, কালবাউস, পাঙ্গাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উঠেছিল। মাছের পরে মেলায় বরাবর মতো আকর্ষণ ছিল বাহারি মিষ্টান্ন সামগী। মাছ আকৃতির মিষ্টি, রসগোল্লা, সন্দেশ, জিলাপি, নিমকি, তিলের নাড়ু, খই, শুকনা মিষ্টির দোকানেও ছিল ক্রেতাদের উপচে পড়া ভীড়।
এবারের মেলায় ১০ কেজি ওজনের মাছের মিষ্টি,৫কেচি ওজনের লাভ মিষ্টি,জিলাপিসহ হরেক রকমের মিষ্টি উঠে। ১০ কেজি ওজনের মিষ্টি ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ১৮ কেজি ওজনের কাতলা মাছ নিয়ে এসেছিলেন এক ব্যবসায়ী। এছাড়াও হরেক রকমের মাছ ও পন্যের পসরা নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন কয়েক হাজার ব্যবসায়ী। পাশা পাশি শিশুদের জন্য নাগর দোলা,সার্কাস, যাদু খেলা,চর্কি খেলার আয়োজন করা হয়। বগুড়া জেলার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকেও মেলায় দর্শনার্থীদের আগমন ঘটেছিল উল্লেখযোগ্য পরিমান।
মেলার ইজারাদার ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ মন্ডল জানান, মেলাটি প্রায় ৪০০ বছরের পুরাতন। এই মেলায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে দর্শনার্থীরা আসেছে। এবারেও মেলাটি ব্যপক উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্য দিয়েই শেষ হয়েছে।
এদিকে মেলার প্রকৃত ইতিহাস নিয়ে কথা বলেন ড. বেলাল হোসেন। তিনি বলেন, মোগল আমল বা সুলতানি আমলে লৌকিক অনুষ্ঠান যেমন মেলা বা পার্বন বেশি দেখা যেত। তখন হাট-বাজার কাছাকাছি ছিল না। বছরে একবারই লোকজন কেনা কাটা করত। কেনাকাটা হতো মেলাকেন্দ্রীক। সে হিসেবে আমরা পোড়াদহ মেলাকে দিন তারিখ অনুযায়ী ৪০০ বছর বলতে পারি না। মেলাটা আগে থেকেই ছিল। ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহের সময় ১৭৫৭ সালের পর মেলাটি রুপান্ত হয়েছিলো মাত্র। তার আগে মেলাটির অন্যরকম একটা রূপ ছিল।
https://www.facebook.com/pundrotvbd/videos/467035895161739