1. shahajahanbabu@gmail.com : admin :
যুদ্ধবিরতি কাজে লাগিয়ে বড় যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরান - Pundro TV
মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫, ০৪:১২ অপরাহ্ন



যুদ্ধবিরতি কাজে লাগিয়ে বড় যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরান

আন্তর্জাতিক
  • প্রকাশিতঃ সোমবার, ৭ জুলাই, ২০২৫

১২ দিনের সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের পর ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। এটিকে কোনো স্থায়ী শান্তি হিসেবে না দেখে তেহরান এটিকে একটি কৌশলগত বিরতি বা ‘স্ট্র্যাটেজিক পজ’ হিসেবে দেখছে। দীর্ঘদিনের ‘কৌশলগত ধৈর্য’ (স্ট্র্যাটেজিক পেশেন্স) নীতির ধারাবাহিকতায় ইরান এখন যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠে দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের জন্য পুনরায় সংগঠিত হচ্ছে, প্রস্তুতি নিচ্ছে ভবিষ্যতের লড়াইয়ের।

যুদ্ধের সময় ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইরানের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটি, ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা ও পারমাণবিক গবেষণাগারে ব্যাপক আঘাত হানে। নিহত হন আইআরজিসির শীর্ষ কর্মকর্তা, মহাকাশ বিভাগের প্রধান ও একাধিক পারমাণবিক বিজ্ঞানী। কিন্তু এই বিপর্যয়ের মাঝেও ইরান তাদের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চাপে ফেলে দেয়। এতে স্পষ্ট হয়ে ওঠে—ইরান এখনো শক্ত প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম।

এই যুদ্ধবিরতির সুযোগে ইরান নিজেদের সামরিক শক্তি পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করছে। তারা ক্ষেপণাস্ত্রভাণ্ডার পুনর্ভরতি, ‘ফাতাহ’ ও ‘খাইবার শেকান’-এর মতো হাইপারসনিক প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিকায়নে জোর দিচ্ছে। যুদ্ধ থেকে পাওয়া শিক্ষা অনুযায়ী, আধুনিক যুদ্ধে জয় পেতে শুধু ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন নির্ভরতা যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন পূর্ণাঙ্গ বিমান প্রতিরক্ষা ও আকাশ আধিপত্য। তাই ইরান এখন রাশিয়ার এস-৪০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, সু-৩৫ যুদ্ধবিমান এবং চীনের জে-১০ ও পঞ্চম প্রজন্মের জে-২০ যুদ্ধবিমান সংগ্রহের পরিকল্পনা করছে।

এ ছাড়া যুদ্ধকালে স্পষ্ট হয়েছে যে, ইরানের একটি বড় দুর্বলতা হলো আকাশভিত্তিক আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা (AWACS)-এর অভাব। তাই চীন ও রাশিয়ার কাছ থেকে এসব প্রযুক্তি সংগ্রহ এখন তেহরানের প্রতিরক্ষা পরিকল্পনায় অন্যতম অগ্রাধিকার।

সামরিক প্রস্তুতির পাশাপাশি ইরান আন্তর্জাতিক কূটনীতির ময়দানে নিজেদের অবস্থান জোরালো করতে চাইছে। তারা ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অভিযোগ হবে, তারা ‘ঘোষণাহীন যুদ্ধ’ শুরু করেছে এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সুরক্ষিত পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর আঘাত হেনেছে। তেহরান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে—এই বিচারিক প্রক্রিয়া পূর্ণাঙ্গ না হওয়া পর্যন্ত তারা পারমাণবিক আলোচনায় ফিরবে না।

এরই মধ্যে ইরান আইএইএ-এর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করেছে, সংস্থার তদারকি ব্যবস্থাকে পক্ষপাতদুষ্ট আখ্যা দিয়ে। এমনকি যুদ্ধ শুরুর আগেই তারা গোপনে বিপুল পরিমাণ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম নিরাপদ স্থানে সরিয়ে রেখেছে বলে জানা গেছে। যেহেতু কোনো স্থাপনায় তেজস্ক্রিয়তার লক্ষণ পাওয়া যায়নি, ধারণা করা হচ্ছে এই ইউরেনিয়াম মজুদ এখনো অক্ষত রয়েছে—যা ভবিষ্যতে কৌশলগত চাপ তৈরির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

ইরান এখন কেবল যুদ্ধের ক্ষতি কাটিয়ে উঠছে না, বরং ধাপে ধাপে সামরিক, কূটনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের বিশ্বাস, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইসরায়েল আরও বেশি আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ চাপে পড়বে। আর সেই সময়কেই তারা কৌশলগতভাবে ব্যবহার করতে চায় নিজেদের পক্ষে ভারসাম্য টানতে।

তেহরানের কাছে ‘কৌশলগত ধৈর্য’ মানে শুধুই অপেক্ষা নয়—বরং এটি সময়কে একটি শক্তিশালী অস্ত্রে পরিণত করে ধাপে ধাপে প্রতিপক্ষকে দুর্বল করার দীর্ঘমেয়াদি এক রাজনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধনীতি। এই যুদ্ধবিরতি আসলে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা—একটি বড় সংঘাতের জন্য কাঠামো গড়ে তোলার সময়। শেষ পর্যন্ত কারা সময়ের এই লড়াইয়ে জয়ী হবে—তেহরান না তেলআবিব—তা নির্ধারণ করবে আগামী দিনের ইতিহাস।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২
Developed By ATOZ IT HOST