বগুড়ার শিবগঞ্জের ধাওয়াগীর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি নেওয়ার অভিযোগে ছাত্র ও প্রধান শিক্ষকের মাঝে বাকবিতন্ডতার জেরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রায় ২২ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। এঘটনায় গত ১৩ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকটি দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন রানা বাবু নামের এক অভিভাবক।
অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৯ জানুয়ারি উপজেলার শিবগঞ্জ ইউনিয়নের ধাওয়াগীর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র মীম মাছাদ স্কুলে সেশন ফি দিতে গেলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক তার কাছ থেকে ভর্তি ফি ও সেশন ফি বাবদ অতিরিক্ত ৪৫০ টাকা দাবী করে। এসময় নবম থেকে দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ মিম মাসাদসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম মর্তুজার বাক বিতন্ডা সৃষ্টি হয়।
পরে ৯ জানুয়ারি ঐ শ্রেণির কতিপয় শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষকের পক্ষে অবস্থান নিলে দুই পক্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কথাকাটা কাটি হয়। বর্ধিত ফি না দেয়ার পক্ষে থাকা শিক্ষার্থীরা গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ইউপি সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বী করা পরাজিত প্রার্থী শিহাবুল ইসলাম সুইট নামের এক ব্যক্তিকে সাথে নিয়ে ফি বৃদ্ধির বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলেন। সেশন ফির প্রতিবাদ করা না করা নিয়ে ঐ দিন বিকালে জিসান ও মিম নামের দুই জন ছাত্রের হাতাহাতি হয়।
এ ঘটনার পর ১০ জানুয়ারি বিদ্যালয়ে ক্লাস চলাকালীন জিসান তার বাবাকে ফোনে বলে গতকাল আমাকে যারা মারপিট করেছে তারা স্কুলে এসেছে।
বাবা আব্দুল বাছেদ ও স্থানীয় ইউপি সদস্য তোজাম্মেল হোসেন সহ বেশ কিছু বহিরাগতদের সঙ্গে নিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে। প্রধান শিক্ষকের সামনে বিদ্যালয়ের ২য় তলায় ক্লাস রুমে ঢুকে শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা হামলাকারীদের বাধা দিলে বহিরাগত লোকজন বেপরোয়াভাবে শিক্ষার্থীদের মারপিট করে আহত করে। আহতরা হলেন দশম শ্রেণির ছাত্র মীম, রেজাউল হোসেন, বিপুল, ইব্রাহীম, জুয়েল, সৌরভ, সাওন সহ অন্তত ২২ জন।
শনিবার সরজমিনে ঐ এলাকায় গেলে,
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, ঘটনার সুত্রপাত সেশন ফি নিয়ে হলেও পরে এঘটনার মোড় ঘুরে যায় ইউপি নির্বাচনে দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের বিরোধের দিকে। মেম্বার প্রার্থী সুইটকে সাথে নিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে আসায় বর্তমান মেম্বারের সমর্থকরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠায় এ হামলার কারন বলে উল্লেখ করেছেন তারা।
লিখিত অভিযোগকারী রেজওয়ান হোসেন রাহুল এর বাবা রানা বাবু’র সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ক্লাস চলাকালীন সময়ে বহিরাগতরা আমাদের সন্তানদের মারপিট করে আহত করলেও প্রধান শিক্ষক কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেন নি। প্রধান শিক্ষকের ইন্ধনেই এই হামলা হয়েছে।
দশম শ্রেণির ছাত্র মিম মাছাদ জানান, আমরা ৯ম শ্রেনি থেকে দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছি। কিন্তু প্রধান শিক্ষক আমাদের থেকে ভর্তি ফি ও সেশন ফি চেয়েছে। নতুন করে কেনো ভর্তি হতে হবে জানতে চাইলে তিনি আমার গালে থাপ্পর মেরে বলে “এখন থেকে এই নিয়ম। প্রত্যক বছরই ভর্তি হতে হবে।”
ঐ শ্রেণির ইব্রাহিম নামের এক ছাত্র জানান, হামলার পর প্রধান শিক্ষকের কাছে বারবার বিচার চেয়েও আমরা ব্যর্থ হয়েছি।তিনি সরাসরি হামলাকারীদের পক্ষ নিয়েছেন।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম মর্তুজার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগে করা হলে তিনি জানান, আমাদের প্রতিষ্ঠানে এরকম একটা ঘটনা ঘটেছে আমি বিষয় টি ইউএনও স্যারকে জানিয়েছি। এই ঘটনায় আগামী সোমবার চেয়ারম্যান সঙ্গে বসার কথা আছে।
উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা টিএম আব্দুল হামিদ জানান, আমাকে প্রধান শিক্ষক ঘটনা সম্পর্কে জানিয়েছেন। আমরা সরেজমিন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে কুলসুম সম্পা বলেন, এ ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি, বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য ইতিমধ্যে উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।