রাজধানীতে বিএনপি’র পূর্ব নির্ধারিত পদযাত্রা কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশসহ আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। ভাঙচুর করা হয়েছে বিআরটিসি’র একটি দোতলা বাস ও একটি পুলিশ বক্স। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় বেশ কয়েকজন পথচারীও আহত হয়েছেন। গতকাল বিকালে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড়ে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে সাবেক এমপি শেখ রবিউল ইসলাম রবিসহ ১৫ থেকে ২০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয় বলে বিএনপি দাবি করেছে।
গায়েবি মামলায় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ ও ১০ দফা দাবি আদায়ে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে গতকাল রাজধানীতে পদযাত্রা পালন করে বিএনপি। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি’র উদ্যোগে পৃথকভাবে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেন দলটির নেতাকর্মীরা। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র পদযাত্রা শান্তির্পূণভাবে শেষ হলেও দক্ষিণে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
বিকালে ধানমণ্ডিতে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু করেন দলটির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। কর্মসূচিতে দলের শীর্ষ নেতাসহ হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন।
সামনের সারিতে যেসব নেতাকর্মীরা ছিলেন, তারা খুব ভালো আচরণ করেছেন। এ পর্যন্ত (সায়েন্স ল্যাব) এসে তাদের যা করার কথা ছিল, তাই করেছেন। সব সিনিয়র লিডাররা তখন চলে যান।
শিগগিরই সরকার পতনের আন্দোলন- গয়েশ^র: এদিকে ধানমণ্ডিতে পদযাত্রা-পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করিনি। শেখ হাসিনা যদি দাবি মেনে পদত্যাগ করেন তাহলে পতনের আন্দোলন শুরু করতে হবে না। আমরা জানি শেখ হাসিনা তা করবে না। আমরা শিগগিরই সরকার পতনের আন্দোলন ঘোষণা করবো। গতকাল দুপুরে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে বাংলাদেশ মেডিকেল হাসপাতালের সামনে অস্থায়ী মঞ্চে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। গয়েশ্বর বলেন, আমাদের লড়াই ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, আমাদের লড়াই দেশের মানুষকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দেয়ার জন্য। পাশাপাশি লড়াই হবে তাদের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করার।
রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে বিএনপি দাবি আদায় করে নেবে উল্লেখ করে গয়েশ্বর বলেন, আমরা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আদায় করে নেবো। আমাদের দাবি একটাই, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। ‘যার ভোট সে দেবে, যাকে খুশি তাকে দেবে’- এই লক্ষ্যে আমাদের ১০ দফা দাবি। ১০ দফার মূল কথা হচ্ছে- একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। আর বাকিগুলো হলো প্রাসঙ্গিক। আমরা এই অবৈধ সরকারের পদত্যাগ চাই। সংসদ বাতিল চাই। সরকারকে বলবো- নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মেনে নিন। তিনি বলেন, তারা (নিরপেক্ষ সরকার) ক্ষমতায় এসে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। তাদের অধীনে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো। আশা করবো আওয়ামী লীগও অংশ নেবে। জনগণ যাকে ভোট দেবে, তারাই সরকার গঠন করবে, আর তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। পদযাত্রা কর্মসূচি ধানমণ্ডি থেকে শুরু হয়ে সীমান্ত স্কয়ার হয়ে ল্যাবএউড হাসপাতালে সামনে গিয়ে শেষ হয়। এতে অংশ নেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, বিএনপি’র প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউলসহ দলটি বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা।
অন্যদিকে মহানগর উত্তর বিএনপি’র উদ্যোগে গাবতলী বাগবাড়ি থেকে টেকনিক্যাল ও কল্যাণপুর হয়ে পঙ্গু হাসপাতালের সামনে থেকে ৩০০ ফুট রাস্তা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে দলটির নেতাকর্মীরা। এই পদযাত্রা কর্মসূচিতে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। মানুষের উপস্থিতির কারণে সড়কের দু’পাশ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন পথচারী ও বিভিন্ন পরিবহনে থাকা নেতাকর্মীরা। গতকালের পদযাত্রায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, দেশের শ্রমিক, মজুর আর মধ্যবিত্তদের আর হালাল উপার্জনে চলার উপায় নাই। প্রতিদিনই প্রত্যেক জিনিসের দাম বাড়ছে কিন্তু বেতন-ভাতা আর উপার্জন বাড়ছে না। এখন আর তারা চলতে পারছেন না, তাদের কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু সেই কষ্টের কথা বলতে গেলে বাধা দেয়া হয়। এ অবস্থার উত্তরণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করতে হবে, রাজপথের আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এই সরকারকে বিদায় করতে না পারলে দেশের অস্তিত্ব থাকবে না, স্বাধীনতা থাকবে না। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, দলের নেতা কামরুজ্জামান রতন, তাবিথ আউয়াল, যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন হাসান, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণসহ আরও অনেকে।