1. shahajahanbabu@gmail.com : admin :
লাহোর হাইকোর্টের রায়ে চ্যালেঞ্জের মুখে মোদি সরকার - Pundro TV
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১১:০৯ পূর্বাহ্ন



লাহোর হাইকোর্টের রায়ে চ্যালেঞ্জের মুখে মোদি সরকার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • প্রকাশিতঃ রবিবার, ২ এপ্রিল, ২০২৩

পাকিস্তানের লাহোর হাইকোর্ট ব্রিটিশ আমলের রাষ্ট্রদ্রোহ আইন অসাংবিধানিক বলে রায় দিয়েছেন। সে দেশের আপিল বিভাগ সেই রায় বহাল রাখলে পাকিস্তানের ফৌজদারি দণ্ডবিধি থেকে রাষ্ট্রদ্রোহ ধারাটি নিষিদ্ধ হয়ে যাবে।

এই রায় ভারতের শাসক দল বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে চর্চা। বহুল প্রচারিত সর্বভারতীয় এক ইংরেজি দৈনিকেও ওই রায়ের উল্লেখ করে আজ শনিবার সম্পাদকীয় লেখা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, পাকিস্তান যদি পারে, ভারতের সুপ্রিম কোর্টেরও তা পারা উচিত। এ বিষয়ে সরকারকে নতুন ওজর–আপত্তি পেশের আর কোনো সুযোগ সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া উচিত নয়।

সম্পাদকীয়তে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে, অবিলম্বে আইনটি খারিজ করা হোক। ভুল মানুষকে ভুল কারণে শাস্তি দিতে এই ভুল আইন ব্যবহৃত হচ্ছে।

বলা ভালো, এই রায়ের মধ্য দিয়ে লাহোর হাইকোর্ট ভারতের মোদি সরকারকে চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়েছে। ‘পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ’ (পিইউসিএল) নেত্রী কবিতা শ্রীবাস্তব শুর আজ বলেন, ‘ব্রিটিশ সরকার নিজেদের দেশে ওই আইন বহু আগেই বাতিল করে দিয়েছে। অথচ আমাদের দেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার শাসককুল তা বিরোধীদের দমনের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে চলেছে।’

নাগরিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কবিতা শ্রীবাস্তব বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের মতিগতি দেখে মনে হয় না, তারা এই আইন খারিজ করতে আগ্রহী।’

‘অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রটেকশন অব ডেমোক্রেটিক রাইটস’–এর (এপিডিআর) সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত শূর আজ প্রথম আলোকে বলেন, পাকিস্তানের মতো ক্ষণস্থায়ী গণতান্ত্রিক দেশের এক হাইকোর্ট যে সাহস দেখালেন, ভারতের সুপ্রিম কোর্টের উচিত তেমনই সাহসী হওয়া। ৭৫ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে এই কালাকানুন রদ করার দাবি চলে আসছে। সরকারের সম্মতির অপেক্ষায় না থেকে এখন সুপ্রিম কোর্টের উচিত সাহসী হয়ে নিজে থেকেই আইনটি অসাংবিধানিক ঘোষণা করা। কালাকানুনটি খারিজ করে দেওয়া।

গত বৃহস্পতিবার লাহোর হাইকোর্টের বিচারপতি শাহিদ করিমের একক বেঞ্চ এই ঐতিহাসিক রায় দেন। বিরোধীদের দমনে সরকার রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের অপপ্রয়োগ করছে—এই অভিযোগে হাইকোর্টে বেশ কয়েকটি আবেদন করা হয়েছিল।

ভারতের সুপ্রিম কোর্টও ভারতীয় দণ্ডবিধির ওই ধারা বহাল রাখা নিয়ে একাধিকবার প্রশ্ন তুলেছেন। ২০২২ সালের ১০ মে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এন ভি রমানার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ রাষ্ট্রদ্রোহসংক্রান্ত ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১২৪ (ক) ধারার ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেছিলেন। ওই বছর অক্টোবরে কেন্দ্রীয় সরকারের আবেদনক্রমে আইনটি পর্যালোচনা করতে সুপ্রিম কোর্ট তাদের অতিরিক্ত সময় মঞ্জুর করেন। তখন স্পষ্ট করে বলা হয়, অতঃপর ১২৪ (ক) ধারায় নতুন কোনো এফআইআর যেন দাখিল করা না হয়। ওই ধারায় অভিযুক্তদের জামিন দিতে হবে বলেও সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিলেন। কিন্তু ঘটনা হলো, এখনো ওই ধারা খারিজের বিষয়ে সরকার তার চূড়ান্ত অভিমত সুপ্রিম কোর্টকে জানায়নি।

ব্রিটিশ শাসিত ভারতে ১৮৬০ সালে ওই আইন তৈরি হয়েছিল। ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের ফৌজদারি দণ্ডবিধির দেশদ্রোহ বা রাষ্ট্রদ্রোহ ধারাটির উৎস তাই অভিন্ন। পরাধীন ভারতে বহু স্বাধীনতাসংগ্রামীকে ওই ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মাসের পর মাস জামিন না দিয়ে তাঁদের আটক রাখা হয়েছে। স্বাধীন ভারতে ওই প্রাচীন আইন কেন বলবৎ থাকবে, সুপ্রিম কোর্ট নিজেই সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। তার জবাবে প্রথমে মোদি সরকার জানিয়েছিল, তারা ধারাটি খারিজের পক্ষে নয়। ধারাটি পুনর্বিবেচনা করা নিয়েও সরকার আপত্তি জানিয়েছিল। ধারাটি বহাল রেখে সেটির প্রয়োগে নতুন বিধিমালা তৈরির কথা সরকার জানিয়েছিল।

পরে প্রবল জনমত ও সুপ্রিম কোর্টের মনোভাবের বিপ্রতীপে না হাঁটার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সরকারের পক্ষে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা সুপ্রিম কোর্টকে বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী মানবাধিকার ও রাজনৈতিক অধিকার খর্ব করার বিপক্ষে। তিনি নিজেই চাইছেন, ধারাটি পর্যালোচিত হোক। যা করার সরকারই করবে। সুপ্রিম কোর্টকে দায়িত্ব নিতে হবে না।

প্রধান বিচারপতি তখন সলিসিটর জেনারেলের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, পর্যালোচনার জন্য সরকার কত দিন সময় নেবে? এক মাস, দুই মাস, তিন মাস? সরকার নির্দিষ্ট সময়সীমা জানায়নি। সুপ্রিম কোর্টও তা বেঁধে দেননি। বছর ঘুরে নতুন বছরের তিন মাস শেষ। সরকার এখনো নীরব। সারা দেশে এই ধারায় ১৩ হাজার মামলা এখনো বিচারাধীন। এই ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি জরিমানাসহ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। সরকার কবে পর্যালোচনা করে সর্বোচ্চ আদালতকে জানাবে, এখনো তার কোনো ইঙ্গিত নেই।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ



© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২
Developed By ATOZ IT HOST