1. shahajahanbabu@gmail.com : admin :
পোশাকশিল্পে গবেষণা প্রয়োজন - Pundro TV
বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০২৪, ০৭:৫১ অপরাহ্ন



পোশাকশিল্পে গবেষণা প্রয়োজন

অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিতঃ সোমবার, ১৩ মার্চ, ২০২৩

২০০০ থেকে ২০২৩ সাল। ইনস্টিটিউট থেকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নতি। গত ২৩ বছরে ফ্যাশন শিক্ষায় অনেক সুনাম অর্জন করেছে ‘বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি’। দেশের তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য কারিগরি সক্ষম মানবসম্পদ উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড.আইয়ুব নবী খান

বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন ডিজাইন ও টেকনোলজি সবার প্রথম পছন্দ কেন?

‘বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি’ একটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়। আমাদের উদ্দেশ্য হলো পোশাকশিল্প খাতে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা। বাংলাদেশে এর বিশাল কর্মক্ষেত্র রয়েছে। গার্মেন্টস, টেক্সটাইল, ফ্যাশন হাউস, আন্তর্জাতিক রিটেইল হাউস, বায়িং হাউস হলো উচ্চ সম্ভাবনাময় খাত। এখানে প্রচুর চাকরির সুযোগ আছে। বলা যায়, অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি আমাদের এ পোশাকশিল্প খাত। এখানে অনেকের কাজের সুযোগ আছে। তবে দক্ষ মানুষের অভাবও আছে। আমরা চাই এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দক্ষ ও মেধাবী গ্র্যাজুয়েট বের হবে। তারাই পোশাকশিল্প সফলভাবে পরিচালনা করবে। বাংলাদেশ এখন গার্মেন্টসশিল্পে বিশ্বে দ্বিতীয়। আমরা যদি এ ইউনিভার্সিটির মাধ্যমে দক্ষ জনবল তৈরি করতে পারি, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় যে উদ্দেশ্য-লক্ষ্য নিয়ে তৈরি হয়েছে তা সফল হবে। কমে যাবে বিদেশি বিশেষজ্ঞ নির্ভরতা। কারণ, এ সেক্টরে এখনো অনেক বিদেশি বিশেষজ্ঞ কাজ করেন। একটা সময় আমাদের গ্র্যাজুয়েটরাই বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করবে। তারাই হবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কারিগর।

আপনারা কী ধরনের কোর্স পরিচালনা করেন?

আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের কোর্স পরিচালনা করি। এর মধ্যে ১২টি আন্ডার গ্র্যাজুয়েট, ৩টি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট, মাস্টার্স, ১টি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ও ৩টি সার্টিফিকেট কোর্স। এ ছাড়াও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং ব্যুরোর দক্ষতা উন্নয়নবিষয়ক তিনটি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স রয়েছে। এ কোর্স শুধু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিজিএমইএ, বিকেএমইএতে কর্মরত ব্যক্তিদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য করতে পারেন।

এখান থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা চাকরিতে যোগদানে কী ধরনের সুবিধা পান?

২০০০ সাল থেকে ইনস্টিটিউট এবং ২০১২ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে। গত ২০ বছর ধরে আমাদের কোনো ছাত্রছাত্রী চাকরি না পেয়ে থাকেনি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা পাস করে তারা বেশিরভাগই চাকরি পায় না, অধিকাংশই বেকার থাকে। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পাস করা এমন কোনো ছাত্রছাত্রী নেই, যারা বেকার আছে। এখানকার ছাত্রছাত্রীরা কাজ পাচ্ছে না এমন কোনো ইতিহাস নেই। দেখা যায়, ছাত্রছাত্রীরা শেষবর্ষে থাকাকালে বা ইন্টার্নশিপ শেষ করার পর পোশাকশিল্পের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের চাকরিতে নিয়ে নেয়। আমাদের পরিসংখ্যান বলে, প্রায় ৯০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী শেষবর্ষে থাকাকালে চাকরি পেয়ে যায়। আবার কেউ কেউ উদ্যোক্তা হয়ে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে। এখান থেকে পাস করা অনেক সফল উদ্যোক্তা রয়েছে। পুরস্কারপ্রাপ্ত অনেক উদ্যোক্তাও আছে। বিভিন্ন জায়গায় আমাদের ছাত্রছাত্রীরা সফলভাবে কাজ করছে। অনেকে ভালো পদে কাজ করছে। যেমন—স্বপ্নভূমির কথা বলা যায়। আমাদের অনেক সফল উদ্যোক্তাও রয়েছে। ফ্যাশন ডিজাইনার আফসানা তাদের মধ্যে একজন। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বায়িং হাউস যেমন ওয়াল মার্ট, জেসি পেনি, এইচ অ্যান্ড এম, লিভাইস, নেক্সট, প্রাইম মার্ক-এর মতো প্রতিষ্ঠিত হাউসে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা সফলভাবে কাজ করছে।

লক্ষ্য অর্জনে আপনারা কতটুকু সফল?

আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে আরও কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছি। কারণ উন্নতির শেষ নেই। বলতে পারি, সফলতার সঙ্গে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এ পর্যন্ত প্রায় ১৪ হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদে সফলভাবে কাজ করছে। ইদানীং দেখছি অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সেতুবন্ধের মাধ্যমে কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ।

পোশাক শিল্প খাত এগিয়ে নিতে কী করণীয়?

আমাদের পোশাক শিল্প খাতে অনেক কাজ করার সুযোগ আছে। এ শিল্পে রয়েছে অনেক সম্ভাবনা। সে জন্য প্রয়োজন গবেষণার। আমাদের দেশে পোশাকশিল্পে কোনো প্রকার গবেষণা দেখি না। আমরা শুধু বেসিক আইটেমের মধ্যে গার্মেন্টস নিয়ে বসে আছি। কিছু কাজ করে রপ্তানি করি। কিন্তু পোশাকশিল্পে এমন অনেক দিক আছে যেগুলো থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি। সে জন্য পোশাকশিল্প নিয়ে গবেষণা করে অন্যান্য দিক খুঁজে বের করে কাজে লাগানো দরকার। সেদিকে নজর দেওয়া দরকার এখন। সেই সঙ্গে বিক্রয়যোগ্য পণ্য বাড়ানো প্রয়োজন। এ ছাড়া পণ্য উন্নয়ন এবং ফ্যাশন উন্নয়নে নজর দেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে নিজস্ব ফ্যাশন বা ঐতিহ্যবাহী দেশি পোশাকের দিকে নজর দেওয়া এখন সময়ের দাবি। এখন বিশ্বের বাজারে দেশি পোশাক তুলে ধরতে হবে। পাশাপাশি দেশি পোশাকের প্রচার-প্রসার বাড়াতে কাজ করা দরকার।

চীনের উহান টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তির কী সুবিধা পাচ্ছেন?

উহান বিশ্ববিদ্যালয় চীনের অন্যতম টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া চীনের আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতামূলক চুক্তি রয়েছে। জিনজিয়ান সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয় ও জিয়াংগন বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের যোগাযোগ আছে। আমরা এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বিভাগ স্থানান্তর, ছাত্রছাত্রী স্থানান্তরসহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করছি। তাদের ছাত্র-শিক্ষক এখানে আসে, আমাদের ছাত্র-শিক্ষক তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়। সেখানে গিয়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। এ ছাড়াও আমাদের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার জন্যও সেখানে যায়।

চীনের আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে শিক্ষাবিষয়ক লিয়াজোঁ আছে। সেখানে মাস্টার্স প্রোগ্রাম ও স্কলারশিপ নিয়ে অনেক ছাত্রছাত্রী পড়াশোনার জন্য যায়। কিছু ফুল স্কলারশিপ, কিছু পার্সিয়াল স্কলারশিপ। তাদের সঙ্গে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতা চুক্তি ছয় বছর হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ১৫০ জন ছাত্রছাত্রী সেখানে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেছে। ফ্যাকাল্টি মেম্বাররা সেখানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছে। আরও সুবিধা রয়েছে। ফ্যাশন বা টেক্সটাইল শিক্ষায় উচ্চশিক্ষার্থীদের জন্য বাংলাদেশে সুযোগ সীমিত। কিন্তু চীনে এ শিক্ষার বিশাল সুযোগ। সেখানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ বা প্রশিক্ষণ নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা আমাদের এখানে যোগদান করে। এতে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা ও দক্ষতা বাড়ছে।

ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে আমাদের দেশীয় লেখকদের বই আছে কি?

ফ্যাশনবিষয়ক দেশীয় লেখকদের বই খুবই কম। এখানে কেউ কেউ বই লিখেছে। আমি নিজেও টেক্সটাইলের ওপর কিছু বই লিখেছি। আর কিছু বই অচিরেই পাওয়া যাবে। তবে এর ব্যাপকতা আরও বাড়াতে হবে। বাংলাদেশে টেক্সটাইল শিক্ষার খাতটা বেশি পুরোনো নয়। এখানে অনেক পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন আছে। সরকার কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে। প্রাইভেট পাবলিক যৌথ উদ্যোগে কাজ হচ্ছে। এ শিক্ষা খাত তুলনামূলকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে সরকারকে শিক্ষা ও গবেষণায় আরও বেশি নজর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে তাদের বেশি দায়িত্ব ও পেশাদারিত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে গবেষণায় বেশি নজর দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। আমরা যদি নতুন পণ্যক্ষেত্র তৈরি করতে না পারি তাহলে বিশ্ববাজারে একই পণ্য দিয়ে বাজার টিকিয়ে রাখা কষ্টকর। সে জন্য নতুন পণ্য বাজারে আনতে হবে। বিশ্ববাজারে নতুন পণ্য তুলে ধরতে হবে। বাংলাদেশে যেসব গার্মেন্টস আছে সেগুলোকে আরও বেশি কাজে লাগাতে হবে। ১৮ কোটি মানুষের দেশে আমরা নতুন নতুন আইটেম করতে পারি। তাহলে বিশ্ববাজারে গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়বে আমাদের। গার্মেন্টস শিল্পও আরও এগিয়ে যাবে। কারণ পোশাক মৌলিক চাহিদার দ্বিতীয় ধাপ। যার চাহিদা সবসময় থাকবে। আমরা যত ভালো করতে পারি, যত বৈচিত্র্য আনতে পারব, ততই সমৃদ্ধ হবে আমাদের পোশাকশিল্প।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ



© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২
Developed By ATOZ IT HOST