1. shahajahanbabu@gmail.com : admin :
শাবান মাস থেকেই শুরু হোক পবিত্র রমজানের প্রস্তুতি - Pundro TV
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:০৮ পূর্বাহ্ন



শাবান মাস থেকেই শুরু হোক পবিত্র রমজানের প্রস্তুতি

অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিতঃ শনিবার, ১১ মার্চ, ২০২৩

এখন চলছে আরবী বছরের অষ্টম মাস শাবান মাস।রমজান মাস আসতে এক মাসের চেয়েও কম সময় বাকি। শাবান মাস মুসলমানদের নিকট অতিশয় গুরুত্ববহ একটি মাস কারণ শাবান মাস রমজান মাসের আগমনী সুসংবাদ নিয়ে আসে। এই মাসের পূর্ণ নাম হলো ‘আশ শাবানুল মুআজজম’ এর অর্থ হলো মহান শাবান মাস। শাবান আরবি শব্দ যার অর্থ হচ্ছে শাখা-প্রশাখা, বেরিয়ে যাওয়া, ছড়িয়ে পড়া ইত্যাদি।শাবান মাস আসলেই চারদিকে রমজান ও ইবাদতের বাতাস ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। মুমিন হৃদয় জেগে ওঠে তাদের প্রভুপ্রেমে নিজেদের সবকিছু বিলিয়ে দেওয়ার জন্য। ইতিমধ্যে আমাদের মধ্যে শুরু হয়েছে রমজানের প্রস্তুতির জন্য নিজেদেরকে মানসিকভাবে গড়ে তোলার অপার সুযোগের মাস শাবান।

রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাবান মাসে সবচেয়ে বেশি নফল ইবাদত করতেন। বিশেষ করে এই মাসে তিনি নফল সাওম অধিক পরিমাণে বাড়িয়ে দিতেন। কারণ এই মাসের পরেই আসে সওয়াবের বসন্তকাল হিসেবে পরিচিত রমজান মাস।তাই শাবান মাস এলেই মুমিনদের অন্তরে রমজানের পবিত্রতার বাতাস শুরু হতে থকে।এইজন্য এ মাসটি মুসলমানদের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বের দাবিদার। হযরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বছরের অন্য কোনো মাসে শাবান মাসের চেয়ে বেশি রোজা রাখতে দেখিনি। শাবান মাসে তিনি প্রায় সারা মাসই রোজা রাখতেন। খুব সামান্য কয়েক দিন বাদ যেত। ’ (সুনানে তিরমিযি: ৭৩৬)। হিজরতের দেড় বছর পর মুসলমানদের প্রথম কিবলা ফিলিস্তিনের মসজিদুল আকসা বা ‘বাইতুল মুকাদ্দাস’-এর পরিবর্তে মক্কা শরিফের মসজিদুল হারাম তথা কাবা শরিফ কিবলা হিসেবে ঘোষিত হয় এই শাবান মাসেই। বনু মুস্তালিকের যুদ্ধ ও বদরে ছোগরাও এই মাসেই সংঘটিত হয়। তাই শাবান মাস একদিকে যেমন মুসলমানদের নফল ইবাদাতের মাস, অন্যদিকে তেমনি কাবাকেন্দ্রিক মুসলিম জাতীয়তাবোধ ও ঐকান্তিকতায় উজ্জীবিত হওয়ার মাস।

শাবান মাস মূলত রমজান মাসকে স্মরণ ও আগে থেকেই রমজান মাসকে বরণ করে নেওয়ার জন্য। হযরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে শাবান মাসের রোজা সবচেয়ে বেশি প্রিয় ছিলো’। (বায়হাকি: ৮৬৯১)। মূলতঃ শাবান মাসে রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে শাবান মাসের তারিখের হিসাব রাখতেন এবং রমজানের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে শাবান মাসে আমলের পরিমাণ অত্যাধিক পরিমাণে বাড়িয়ে দিতেন। যেন আমরা রমজান মাসে অধিক হারে নফল ইবাদাত, রোজা, তারাবিহ, শেষ রাতে তাহাজ্জুদ,লাইলাতুল কদরের ইবাদাত, ইতিকাফ ইত্যাদি আমলগুলো সুন্দর ভাবে আদায় করতে পারি।বেশি বেশি আমল করাতে যেন আমাদের কোনো প্রকার সমস্যা না হয় এইজন্য শাবান মাসটাকে রমজানের আগে প্রশিক্ষণ বা পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে নেওয়া যেতে পারে বা একজন মুমিনের জন্য নেওয়া দরকারও বটে।

পবিত্র শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত, অর্থাৎ পনেরো শাবান রাত হচ্ছে পবিত্র শবেবরাত বা লাইলাতুন নিছফী মিন শাবান , এ রাতের অশেষ ফজিলত হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। বছরের শ্রেষ্ঠ পাঁচটি রাতের অন্যতম এ রাত। এ রাতের করণীয় সম্পর্কে হযরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেছেন, পনেরো শাবান রাতে (শবেবরাত) তোমরা জেগে থেকে ইবাদত কর এবং পরদিন রোজা রাখ। অন্য আরেকটি হাদিসে হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, একদিন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো- হে আল্লাহর রাসূল! কোন রোজার ফজিলত বেশি? উত্তরে তিনি বললেন, ‘রমজান মাসের সম্মানার্থে শাবান মাসের রোজার ফজিলত বেশি। আবার জিজ্ঞাসা করা হলো- কোন দানের ফজিলত বেশি? উত্তরে তিনি বললেন, রমজান মাসের দানের ফজিলত বেশি।’ (বায়হাকি: ৮৭৮০)। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায় সব রজব মাসে ১০টি নফল সাওম রাখতেন এবং শাবান মাসে ২০টি নফল সাওম রাখতেন।আয়েশা রা. থেকে একটি হাদিসের পরিভাষা এমন যে, শাবান মাসে রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এত বেশি সাওম পালন করতেন মাঝেমধ্যে আমার ভয় লেগে যেতে যে, রমজান মাস কি চলে এসেছে নাকি।

শাবান মাস হলো আমলের মাস।এ মাসে বেশি বেশি আমল করে নিজেকে জান্নাতি মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার অন্যতম সুযোগ। শাবান মাসে অনেক বেশি আমল করা যায় তবে এ শাবান মাসে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ চারটি আমল বা কাজ। যা সুন্নাতি আমল হিসেবে বিবেচিত হয়ে গুরুত্ব বহন করে। রমজান মাসের আমলগুলো সঠিকভাবে পালন করতে শাবান মাসে চারটি আমল বেশি বেশি করা খুবই জরুরি। শাবান মাসে এ আমলগুলো যথাযথভাবে আদায় করতে পারলেই রমজানের বড় বড় ইবাদতগুলো করা সহজ হবে। তখন রমজান মাসে খুব বেশি কষ্ট হবে না আমল করতে।খুব সহজেই রমজানের পরিপূর্ণ রহমত,বরকত ও মাগফেরাত লাভ সম্ভব হবে।

প্রথমত হলো শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা রাখা।হযরত উসামা বিন যায়েদ (রা.) রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! শাবান মাসে আপনাকে যত রোজা রাখতে দেখি, অন্য মাসে এতো পরিমাণ রোজা রাখতে দেখিনি। অর্থাৎ আপনি কেন এ মাসে এতবেশি রোজা রাখেন? তখন রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটি এমন একটি মাস। যা রজব এবং রমজানের মতো গুরুত্বপূর্ণ দুইটি মাসের মধ্যে পড়ে। আর অধিকাংশ মানুষ এ মাসটি সম্পর্কে উদাসীন থাকে। যার ফলে তারা ভালো আমল করে না। তারা মনে মনে চিন্তা করে যে, সামনে তো রমজান মাস তো আছেই। (নাসাঈ)। দ্বিতীয়ত হলো, শাবান মাসে অধিক পরিমাণে কুরআন তেলাওয়াত করা। কুরআনকে অর্থ ও তাফসীরসহ পড়ার চেষ্টা করা।

কারণ এই মাস পরেই আসবে কুরআন নাযিলের মাস রমজান। রমজান মাসে যাতে করে বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াতে কোনো সমস্যা না হয় এইজন্য শাবান মাস থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া। তৃতীয়ত হলো বেশি বেশি করে তাওবা করা।সামনে আসছে রহমত,বরকত ও মাগফেরাতে ভরপুর রমজান মাস।রমজান মাসে নিজের গুনাহের জন্য আল্লাহ তায়া’লার কাছে অধিক পরিমাণে ক্ষমা চেয়ে নিজেকে পাপ মুক্ত করার প্রয়াস এই শাবান মাস থেকেই শুরু করা। চতুর্থত হলো আল্লাহর রাস্তায় বেশি বেশি দান করা।দান করা তো শুধু মাত্র নিজেকে দায়মুক্ত করা না বরং রমজান মাসে গরীব ও দুঃখী মানুষদের রমজানের কষ্ট লাঘব করা।তারা যাতে করে সুন্দর করে সাহরি ও ইফতার ভালোভাবে করতে পারে।

এই (শাবান) মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। আগামীকাল নয় বরং এখন থেকেই শুরু করতে হবে। দৈনন্দিন রুটিনে পরিবর্তন আনতে হবে। দুনিয়াবি সকল ধরনের কাজের ব্যস্ততা কমিয়ে দিয়ে বরের সন্তুষ্টির জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ একটা সময় বের করে তা ব্যয় করতে হবে।দিনে ২৪ ঘন্টার পুরো সময় টা ই নিজের বিভিন্ন দুনিয়াদারীতে কাটাই কিন্তু কখনো কি আমরা চিন্তা করেছি যে মালিক আমাকে ২৪ ঘন্টা সময় ও অজস্র নেয়ামত বিনামূল্যে দান করলেন তার জন্য কতটুকু সময় আমি দান করেছি!? কখনো কি ভেবে দেখেছি! সময় এসেছে হিসাব মিলানোর, সময় এসে গেছে নিজেকে রবের জন্য সপে দেওয়ার। সুতরাং শাবান মাস টা হোক রমজান মাসের পূর্ব প্রস্তুতির উত্তম সময়। এখন থেকেই আল্লাহ তায়া’লার জন্য সময় দেওয়া বাড়িয়ে দিতে হবে। আল্লাহ তায়া’লা আমাদের সবাইকে কবুল করুন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২
Developed By ATOZ IT HOST