গ্রীসের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রতিবেশী ও আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী তুরস্কের প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিতে প্রস্তুত রয়েছে গ্রীস। একই সাথে তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে নিজ দেশে গ্রীক-বিরোধী মনোভাব উস্কে দেয়ার অভিযোগ করেন।
এই দু’ন্যাটো মিত্র দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশ দু’টির মধ্যে বেশ কিছু বিষয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে এবং গত অর্ধশতাব্দীতে তারা তিনবার যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল।
জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজের সাথে এথেন্সে এক বৈঠক শেষে গ্রীসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিৎসোটাকিস বলেন, ‘আমার মনোকামনা হলো দেরিতে হলেও আমাদের প্রতিবেশীরা উত্তেজনা হ্রাসের বৈধতার কোনো বুলিসর্বস্ব হুমকি-ধামকি ছাড়া বরং গঠনমূলক কাজের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পথ বেছে নিবে।’
মিৎসোটাকিস বলেন, ‘আমার দিক থেকে বন্ধুত্বের হাত বাড়াতে আমি সব সময়ই প্রস্তুত। আর বিনা কারণে উত্তেজনার সূত্রপাত করার মতো কোনো সুযোগ আমাদের নেই। সকল মতপার্থক্য শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা উচিৎ। আমাদের জনগণ সেটাই চায়, গ্রীক জনগণ সেটাই চায়, তুরস্কের মানুষজন সেটাই চায়, সমগ্র ইউরোপ সেটাই চায়।’
গ্রীস ও তুরস্কের মধ্যকার দ্বন্দ্বের মধ্যে রয়েছে এজিয়ান সাগর ও পূর্ব ভূমধ্যসাগরে সীমান্ত নিয়ে দ্বন্দ্ব। যা কিনা জ্বালানি অনুসন্ধানের অধিকার নির্ধারণ করবে। গ্রীসের পূর্বাঞ্চলীয় দ্বীপগুলোতে সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখার জন্যও তুরস্কের তোপের মুখে পড়েছে গ্রীস। তুরস্ক বলেছে এমন সামরিক উপস্থিতি আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন করে।
এ বিষয়ে গ্রীস বলেছে, তারা তুরস্ক থেকে সরাসরি হুমকির সম্মুখীন। গ্রীসের দ্বীপগুলোর ঠিক বিপরীতের উপকূলে উল্লেখযোগ্য সামরিক উপস্থিতি রয়েছে তুরস্কের। এছাড়াও তুরস্কের এমন সব বিবৃতিতেও গ্রীস শঙ্কিত।
তুরস্কের কর্মকর্তারা এমন আভাস দেন যে গ্রীসের কিছু কিছু জনবসতিপূর্ণ দ্বীপের সার্বভৌমত্বের বিষয়টি বিতর্কিত হতে পারে।
ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস নেতাদের তুরস্ক থেকে বের করে দেওয়ার জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের কাছে দাবি জানিয়েছে ইসরাইল।
শুক্রবার ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গান্তজ তুরস্কের কাছে এ দাবি জানিয়েছেন বলে সূত্রের বরাতে মিডল ইস্ট মনিটরের খবরে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি আগ্রাসন নিয়ে তুরস্ক যে নিন্দা জানায় সেটিও বন্ধের দাবি করেছেন তিনি।
এবারের সফরে তুরস্কের সঙ্গে প্রতিরক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নেয়ার আগ্রহ দেখান ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গান্তজ। তবে দীর্ঘ দিন দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ থাকায় এই প্রক্রিয়া শুরু হতে আরও সময় লাগবে বলে জানিয়েছে সূত্র।
ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী গান্তজ বলেন, সালেহ আল-আরুরির মতো হামাস কর্মকর্তারা তুরস্কে আশ্রয় পাবেন ইসরাইল তা মেনে নিতে পারবে না। পশ্চিম তীরে ইসরাইলের অভিযানকে ‘নিরাপত্তা কার্যক্রম’ বলে বর্ণনা করেন গান্তজ।
পাশাপাশি তিনি দাবি করেন, পশ্চিম তীরে যেসব সামরিক অভিযান চালাচ্ছে ইসরাইল তার নিন্দা জানানো বন্ধ করতে হবে তুরস্ককে।
ইসরাইলের হারেৎজ পত্রিকা জানিয়েছে, তুরস্ক এরইমধ্যে দেশটিতে থাকা হামাস নেতাদের নির্দেশ দিয়েছে যাতে তারা ইসরাইলের বিরুদ্ধে সামরিক কার্যক্রম কমিয়ে দেন। তুরস্কের এ নির্দেশনার কথা সালেহ আল-আরুরিকেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রায় দশ বছর পর তুরস্ক আবার ইসরাইলের সঙ্গে সামরিক চুক্তি কার্যকর করতে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে বেনি গান্তজ তুরস্ক সফরে গেছেন।
https://www.facebook.com/pundrotvbd/videos/456030203296781