ক্রিকেটীয় শক্তি-সামর্থ্যে দুই দলের পার্থক্য অনেক। কাগজ-কলমের সেই ব্যবধান দৃশ্যমান হলো মাঠের খেলায়ও। ব্যাট হাতে সামনে থেকে দলকে পথ দেখালেন রোহিত শর্মা। পরে কার্যকর ইনিংস খেললেন বিরাট কোহলি ও সূর্যকুমার যাদব। তিন জনের ফিফটিতে ভারত পেল বড় সংগ্রহ। পরে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে নেদারল্যান্ডসকে লড়াই-ই করতে দিল না সাবেক চ্যাম্পিয়নরা।
সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বৃহস্পতিবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ ম্যাচে ৫৬ রানে জিতেছে ভারত। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে জেতা দলটি দুই নম্বর গ্রুপে এখন পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে।
টস জিতে ২ উইকেট হারিয়ে ১৭৯ রানের পুঁজি গড়ে ভারত। তাদের বিপক্ষে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি খেলতে নেমে ডাচরা ৯ উইকেটে করে ১২৩ রান।
৩ ছক্কা ও ৪টি চারে ৩৯ বলে ৫৩ রান করেন রোহিত। এই ইনিংস খেলার পথে যুবরাজ সিংকে ছাড়িয়ে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ড গড়েন ভারত অধিনায়ক।
ছন্দে থাকা কোহলি অপরাজিত থাকেন ২ ছক্কা ও ৩ চারে ৪৪ বলে ৬২ রান করে। ২৫ বলের ইনিংস ১ ছক্কা ও ৭ চারে ৫১ রান করে সূর্যকুমার জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
ম্যাচের শুরুতেই লোকেশ রাহুলকে হারায় ভারত। পল ফন মেকেরেনের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান এই ওপেনার। এক ওভার পর রোহিতকেও ফেরানোর সুযোগ পায় ডাচরা। কিন্তু ফ্রেড ক্লাসেনের বলে মিড-অনে ক্যাচ ছাড়েন টিম প্রিঙ্গল।
১৩ রানে জীবন পেয়ে দলকে এগিয়ে নেন ভারত অধিনায়ক। তাকে সঙ্গ দেন বিরাট কোহলি। তাদের জুটিতে ১০ ওভার শেষে ভারতের ৬৭।
প্রিঙ্গলকে টানা দুই চার মেরে ফিফটি স্পর্শ করেন রোহিত ৩৫ বলে। যখন দ্রুত রান তোলার সময় তার, তখনই ফেরেন সাজঘরে। ক্লাসেনের বলেই ধরা পড়েন ডিপ মিডউইকেটে। ভাঙে কোহলির সঙ্গে তার ৭৩ রানের জুটি।
ঝড় তোলার উপযুক্ত মঞ্চ পেয়ে তা কাজে লাগান সূর্যকুমার। টানা দুই চার মারেন তিনি পল ফন মেকেরেনকে। এরপর বাস ডে লেডেকে মারেন আরও দুটি। জমে ওঠে কোহলির সঙ্গে তার জুটি।
ক্লাসেনকে চারের পর ছক্কায় ওড়ান কোহলি। পরের বলে সিঙ্গেল নিয়ে পূর্ণ করেন টানা দ্বিতীয় ফিফটি। পাকিস্তানের বিপক্ষে রোমাঞ্চকর ম্যাচে তার ৮২ রানের অপরাজিত ইনিংসেই জিতেছিল ভারত।
ইনিংসের শেষ ওভারে লোগান ফন বিককে ছক্কা হাঁকান কোহলি। এক বল পর এই পেসারকে ছক্কায় উড়িয়ে ২৫ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন সূর্যকুমার। এই দুইজনের ৯৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে শেষ ৫ ওভারে রান আসে ৬৫।
রান তাড়ায় ডাচদের প্রথম চার ব্যাটসম্যানের তিনজনই যান দুই অঙ্কে। কিন্তু কেউই বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানো দলটির কেউ পার করতে পারেননি ২০ রান। ৩০ রান আসেনি তাদের কোনো জুটি থেকে।
নেদারল্যান্ডসের ব্যাটিং বিপর্যয়ের শুরু বিক্রমজিত সিংয়ের বিদায় দিয়ে। তৃতীয় ওভারে ভুবনেশ্বর কুমারের লেংথ বল তার বেলস উড়িয়ে দেয়। দারুণ কিছু শট খেলে আকসার প্যাটেলকে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন মাক্স ও’ডাওড। নিজের প্রথম দুটি ওভারই মেডেন নেন ভুবনেশ্বর।
টিকতে পারেননি ডে লেডে, বাংলাদেশের বিপক্ষে দারুণ একটি ইনিংস খেলে দলকে টানা কলিন আকারম্যান, অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস। একটি করে ছক্কা-চারে দলটির হয়ে সর্বোচ্চ ২০ রান করেন প্রিঙ্গল।
শেষ দিকে শারিজ আহমাদ ও ফন মেকেরেনের ছোট দুটি ইনিংসে কোনোমতে একশ পার করে নেদারল্যান্ডস। কমে হারের ব্যবধান।
ভারতের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন ভুবনেশ্বর, আর্শদিপ সিং, আকসার ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ২০ ওভারে ১৭৯/২ (রাহুল ৯, রোহিত ৫৩, কোহলি ৬২*, সূর্যকুমার ৫১*; ক্লাসেন ৪-০-৩৩-১, প্রিঙ্গল ৪-০-৩০-০, ফন মেকেরেন ৪-০-৩২-১, ডে লেডে ৩-০-৩৩-০, ফন বিক ৪-০-৪৫-০, শারিজ ১-০-৫-০)
নেদারল্যান্ডস: ২০ ওভারে ১২৩/৯ (বিক্রমজিত ১, ও’ডাওড ১৬, ডে লেডে ১৬, আকারম্যান ১৭, কুপার ৯, এডওয়ার্ডস ৫, প্রিঙ্গল ২০, ফন বিক ৩, শারিজ ১৬*, ক্লাসেন ০, মেকেরেন ১৪*; ভুবনেশ্বর ৩-২-৯-২, আর্শদিপ ৪-০-৩৭-২, শামি ৪-০-২৭-১, আকসার ৪-০-১৮-২, পান্ডিয়া ১-০-৯-০, অশ্বিন ৪-০-২১-২)
ফল: ভারত ৫৬ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: সূর্যকুমার যাদব