বাংলাদেশের বিপক্ষে বাজে সিরিজের দুঃস্বপ্ন পেছনে ফেললেন শেই হোপ। শততম ওয়ানডে সেঞ্চুরিতে রাঙালেন এই ওপেনার। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল থেকে গেল ব্যর্থতার চক্রেই। তিনশ ছাড়ানো লক্ষ্য দিয়েও হেরে গেল নিকোলাস পুরানের দল। বিস্ফোরক এক ইনিংসে বলতে গেলে তাদের মুঠো থেকে জয় ছিনিয়ে নিলেন আকসার প্যাটেল।
ত্রিনিদাদে রোববার দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ২ উইকেটে জিতেছে ভারত। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই নিশ্চিত করেছে সিরিজ। ৩ ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেছে ২-০ ব্যবধানে।
স্বাগতিকদের ৩১১ রান ২ বল বাকি থাকতে ছাড়িয়ে যায় ভারত।
এ নিয়ে টানা সাত ওয়ানডেতে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে জিতল ভারত। সবশেষ ১৩ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তাদের জয় ১২টি।
শেষ ১০ ওভারে ১০০ রানের সমীকরণ মিলিয়ে ভারতের দুর্দান্ত জয়ের নায়ক আকসার। ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটিতে তিনি ৩৫ বলে তিন চার ও পাঁচ ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ৬৪ রানে। তার এই ইনিংসে আড়ালে পড়ে গেল হোপের সেঞ্চুরি।
পোর্ট অব স্পেনে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে কাইল মেয়ার্সের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে শুরু থেকেই আসে বাউন্ডারি। আরেক পাশে বলে-বলে রান করে তাকে সঙ্গ দেন হোপ।
মেয়ার্স-ঝড়ের বড় অংশই যায় আভেশ খানের উপর দিয়ে। অভিষিক্ত এই পেসার নিজের প্রথম ৩ ওভারে দেন ৩৬ রান।
দশম ওভারে বোলিংয়ে এসেই সাফল্য পান দিপক হুডা। মেয়ার্সের (২৩ বলে ৩৯) ফিরতি ক্যাচ নিয়ে প্রথম বলেই ভাঙেন ৬৫ রানের উদ্বোধনী জুটি।
দ্বিতীয় উইকেটে শামার ব্রুকসের সঙ্গে ৬২ রানের আরেকটি ভালো জুটি উপহার দেন হোপ। আকসারের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় ব্রুকসের সম্ভাবনাময় ইনিংস। শূন্য রানে ব্র্যান্ডন কিংকে ফেরান যুজবেন্দ্র চেহেল।
হোপ ও পুরানের জুটিতে এগিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নিজের সহজাত সাবধানী ব্যাটিংয়ে সঙ্গ দেন হোপ। অধিনায়ক পুরান যথারীতি আক্রমণাত্মক ব্যাটিয়ে বাড়ান রান।
ছক্কার মালা গেঁথে এগিয়ে যাওয়া পুরানকে থামিয়ে ১১৭ রানের জুটি ভাঙেন শার্দুল। যেখানে ক্যারিবিয়ান অধিনায়কের অবদান ৭৭ বলে ৭৪। তার ইনিংস সাজানো ছয় ছক্কা ও এক চারে।
এরপর আর তেমন কোনো জুটি পায়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে ত্রয়োদশ সেঞ্চুরিতে দলকে তিনশ ছাড়ানো রান এনে দেন হোপ। আট চার ও তিন ছক্কায় ১৩৫ বলে করেন ১১৫ রান। সবশেষ ১১ ইনিংসে এটি তার তৃতীয় সেঞ্চুরি।
শততম ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করা চতুর্থ ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান হোপ, সব মিলিয়ে দশম।
৫৪ রানে ৩ উইকেট নেন পেসার শার্দুল। অফ স্পিনে ৯ ওভারে কেবল ৪২ রান দিয়ে একটি উইকেট নেন হুডা। সমান ওভারে তার চেয়ে ২ রান কম দিয়ে ব্রুকসের উইকেট নেন আকসার।
রান তাড়ায় সাবধানী শুরু করে ভারত। ইনিংসের শুরুর দিকে কিছুক্ষণ বৃষ্টির জন্য বন্ধ থাকে খেলা। পাওয়ার প্লে কাটিয়ে দেওয়ার পর শিখর ধাওয়ানের বিদায়ে ভাঙে ৪৮ রানের উদ্বোধনী জুটি।
কঠিন সময় পার করে দিয়ে বিদায় নেন আরেক ওপেনার শুবমান গিল। মায়ার্সকে ফিরতি ক্যাচ দেওয়া গিল পাঁচ চারে ৪৯ বলে করেন ৪৩ রান। এক ছক্কা মেরেই থেমে যান সূর্যকুমার যাদব।
সাঞ্জু স্যামসনের সঙ্গে ৯৯ রানের জুটিতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন শ্রেয়াস আইয়ার। তবে পঞ্চাশ ছুঁয়ে তিনি বেশিদূর এগোতে না পারলে বড় একটা ধাক্কা খায় ভারত। ৭১ বলে এক ছক্কা ও চারটি চারে ৬৩ রান করে আলজারি জোসেফের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান শ্রেয়াস।
তার বিদায়ের পর ভাটা পড়ে রানের গতিতে। পঞ্চাশ ছুঁয়ে স্যামসন রান আউট হয়ে থামলে বিপদ আরও বাড়ে ভারতের। ক্রিজে গিয়েই বোলার উপর চড়াও হন আকসার। হুডার সঙ্গে গড়েন ৩৩ বলে ৫১ রানের জুটি। আকিল হোসেনকে বেরিয়ে এসে খেলার চেষ্টায় হুড ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দিলে ভাঙে বিপজ্জনক হয়ে ওঠা জুটি।
একই গতিতে খেলে গিয়ে ২৭ বলে ক্যারিয়ারের প্রথম পঞ্চাশ স্পর্শ করেন আকসার। শার্দুলের পর আভেশও ফিরে গেলে সব দায়িত্ব এসে পড়ে তার কাঁধে। মোহাম্মদ সিরাজকে নিয়ে শেষ ওভারে ৮ রানের সমীকরণ মিলিয়েই মাঠ ছাড়েন তিনি। প্রথম বল ডট খেলার পর পরের দুই বলে দুই ব্যাটসম্যান নেন দুটি সিঙ্গেল। চতুর্থ বল ছক্কায় ওড়িয়ে ম্যাচ শেষ করে দেন আকসার।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চতুর্থবার তিনশ ছাড়ানো লক্ষ্য তাড়া করে জয়ের স্বাদ পায় ভারত। একই মাঠে আগামী বুধবার হোয়াইটওয়াশ করার লক্ষ্যে মাঠে নামবে তারা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৫০ ওভারে ৩১১/৬ (হোপ ১১৫, মেয়ার্স ৩৯, ব্রুকস ৩৫, কিং ০, পুরান ৭৪, পাওয়েল ১৩, শেফার্ড ১৪*, আকিল ৬*; সিরাজ ১০-১-৪৬-০, আভেশ ৬-০-৫৪-০, শার্দুল ৭-০-৫৪-৩, হুডা ৯-০-৪২-১, আকসার ৯-১-৪০-১, চেহেল ৯-০-৬৯-১)
ভারত: ৪৯.৪ ওভারে ৩১২/৮ (ধাওয়ান ১৩, গিল ৪৩, শ্রেয়াস ৬৩, সূর্যকুমার ৯, স্যামসন ৫৪, হুডা ৩৩, আকসার ৬৪*, শার্দুল ৩, আভেস ১০, সিরাজ ১*; জোসেফ ১০-১-৪৬-২, সিলস ১০-০-৪০-১, শেফার্ড ১০-০-৬৯-১, মেয়ার্স ৭.৪-০-৪৮-২, আকিল ৯-০-৭২-১, ওয়ালশ ৩-০-২৪-০)
ফল: ২ উইকেটে জয়ী ভারত
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে ভারত