ইতিহাস গড়ার চ্যালেঞ্জে বিস্ময়কর কিছু করে দেখানোর পণ করেই যেন মাঠে নেমেছিলেন আবদুল্লাহ শফিক। আগের দিনের সেঞ্চুরিকে আরও টেনে নিলেন তিনি। এক প্রান্ত আগলে রেখে খেললেন শেষ পর্যন্ত। এই ওপেনারের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে শ্রীলঙ্কার দেওয়া রান পাহাড় টপকে গেল পাকিস্তান।
গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে দুইশ রান তাড়া করার রেকর্ড ছিল না কোনো সফরকারী দলের। পাকিস্তান সেখানে তিনশর বেশি রানের লক্ষ্যে জিতে গড়ল ইতিহাস! সিরিজের প্রথম টেস্টে বুধবার ৩৪২ রানের লক্ষ্য তারা ছুঁয়ে ফেলে ৪ উইকেট হাতে রেখে।
এর আগে এই মাঠে আড়াইশ ছাড়ানো রান তাড়ার কীর্তি ছিল কেবল শ্রীলঙ্কার। ২০১৯ সালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৬৮ রানের লক্ষ্যে জিতেছিল তারা। আর সফরকারীদের মধ্যে সফল রান তাড়ার আগের রেকর্ড ছিল ইংল্যান্ডের। গত বছর ১৬৪ রান তাড়া করে জিতেছিল তারা।
পাকিস্তানের টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয় এটি। ২০১৫ সালে শ্রীলঙ্কার মাটিতেই তারা গড়েছিল ৩৭৭ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড।
দুই টেস্টের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাবর আজমের দল।
জয়ের ভিত আগের দিনই গড়ে ফেলেছিল পাকিস্তান। ম্যাচের পঞ্চম ও শেষ দিন তাদের প্রয়োজন ছিল ১২০ রান, হাতে ছিল ৭ উইকেট।
তবে টেস্টে শেষ দিনের পিচ যেকোনো লক্ষ্যের জন্যই ভয়ঙ্কর। একটা পর্যায়ে কিছুটা শঙ্কাও জেগেছিল স্বাগতিকদের মনে। শেষ পর্যন্ত শফিকের দৃঢ়তায় হাসি ফোটে তাদের মুখে।
ইনিংস শুরু করতে নেমে ১৬০ রান করে দলের জয় সঙ্গে নিয়ে মাঠ ছাড়েন শফিক। ৪০৮ বল ও ৫২৪ মিনিট স্থায়ী ইনিংসটি সাজান তিনি এক ছক্কা ও ৭ চারে। দুর্দান্ত এই পারফরম্যান্সের পর ম্যাচ সেরা তিনি ছাড়া আর কে!
৬ টেস্টের ক্যারিয়ারে শফিকের এটা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। টপ অর্ডার এই ব্যাটসম্যানের আগের সেঞ্চুরিটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অপরাজিত ১৩৬।
চতুর্থ ইনিংসে শফিকের এই ইনিংস পাকিস্তানের হয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ। গত মার্চে অধিনায়ক বাবর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলেছিলেন ১৯৬ রানের ইনিংস। আর ২০১৫ সালে ইউনিস খান করেছিলেন অপরাজিত ১৭১ রান।
৩ উইকেটে ২২২ রান নিয়ে খেলতে নেমে দিনের প্রথম ঘণ্টা কাটিয়ে দেন শফিক ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। রিজওয়ানের বিদায়ে ভাঙে ৭১ রানের জুটি। ৪০ রান করা পাকিস্তান কিপার-ব্যাটসম্যানকে এলবিডব্লিউ করে দেন প্রবাথ জয়াসুরিয়া।
শফিককে ফেরানোর সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। ১৩৫ রানে থাকা পাকিস্তান ওপেনারের ফিরতি ক্যাচ ধরতে পারেননি ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা।
লাঞ্চের আগে-পরে দুই ওভার মিলিয়ে অভিষিক্ত আঘা সালমান ও হাসান আলিকে হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে যায় পাকিস্তান। প্রতিপক্ষকে আরেকটু চেপে ধরতে পারত শ্রীলঙ্কা। কিন্তু ধনাঞ্জয়ার বলেই এবার শফিকের ক্যাচ ছাড়েন কাসুন রাজিথা।
জিততে যখন ১১ রান চাই দলটির, হানা দেয় বৃষ্টি। এরপর খেলা শুরু হলে মোহাম্মদ নওয়াজ ও শফিকের ব্যাটে কোনো বিপদ ছাড়াই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় পাকিস্তান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: