1. shahajahanbabu@gmail.com : admin :
খন্ডিত ইউক্রেন, চিন্তিত বাইডেন-রাশিয়া ছেড়ে চীনকে ধরো - Pundro TV
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৭:২১ পূর্বাহ্ন



খন্ডিত ইউক্রেন, চিন্তিত বাইডেন-রাশিয়া ছেড়ে চীনকে ধরো

অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিতঃ মঙ্গলবার, ৫ জুলাই, ২০২২

কথায় আছে ওল্ড ইজ গোল্ড। মার্কিন কুটনীতির প্রবাদ পুরুষ হেনরি কিসিঞ্জার পুরোনো মানুষ। বয়স ৯৯ বছর। এত বয়স্ক ঝানু কুটনীতিবিদ পৃথিবীতে আর বেঁচে নেই। সেই নন্দিত-নিন্দিত, আলোচিত-সমালোচিত বুড়ো কিসিঞ্জারই বোমা ফাটালেন। ২৩ মে ২০২২ তারিখে সুইজারল্যান্ডের দ্যাভোসে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে ভিডিও লিংকের ভার্চ্যুয়াল বক্তব্যে সবাইকে তাক লাগিয়ে তাক লাগিয়ে দিলেন। তিনি সবাইকে স্বরণ করে দিলেন যে তিনি এখনো ফুরিয়ে যাননি। ডাভোসে তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে ভুখন্ডের বিনিময়ে শান্তির কথা বলেছেন।

তার পরামর্শ হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যে যার স্টাটাস কো-আন্টে-তে ফেরত যাবে। অর্থাৎ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পূর্বাবস্থায় যে যার সৈন্য ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। তারপর ভূ-খন্ডের বিনিময়ে শান্তি আলোচনা শুরু হবে।

এর মানে রাশিয়া ২০১৪ সালে যে ক্রিমিয়া দখল করেছিলো সেটা রাশিয়ার ভূ খন্ড বলে স্বীকৃতি দেয়া হবে। বাকী পূর্বাঞ্চলের দোনবাস নিয়ে একটা ঐক্যমতে পৌঁছাতে হবে। অর্থাৎ ঘুরে ফিরে ইউক্রেনকে খন্ডিত হতেই হচ্ছে। এর ফলে ইউক্রেনের হাত থেকে ক্রিমিয়া তো গেলোই, এখন পূর্বাঞ্চলের দোনবাস অঞ্চলকে পূর্ণ স্বায়ত্বশাসন কিংবা স্বাধীনতা প্রদান কিংবা রাশিয়ার অধীনে চলে যেতেই হচ্ছে।

ভূখন্ডের বিনিময়ে শান্তি- এই কথার বাইরে হেনরি কিসিঞ্জার আরো একটি বড়সড় কথা বলেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপকে মনে করিয়ে দিয়েছেন তোমরা রাশিয়াকে ভুলে যেওনা, রাশিয়া তো ইউরোপেরই অংশ। রাশিয়া ইউরোপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। হেনরি কিসিঞ্জারের এই বক্তব্য ভীষণ তাৎপর্যপূর্ণ। এর মধ্যেই ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের করণীয় সব দিক নির্দেশণা দেয়া আছে। রাশিয়া ইউরোপের অংশ এই কথা বড় আকারে বিশ্লেষণ করলে দাঁড়ায় ইউরোপের সব দেশ ভাই ভাই। ইউরোপ নিজেরা মারামারি করলে তোমরা চীনকে ঠেকাবে কি করে।

আর চীনকে ঠেকাতে না পারলে ইউরোপীয়রা গত ৪ শত বছর যাবত যে শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়ে এসেছে তা ধুলিস্যাত হয়ে যাবে। তোমরা ইউরোপীয়রা সবাই মিলে রাশিয়ার টুটি চেপে ধরলে সে তো বাঁচার জন্য চীনের সাথে বড় ধরনের জোট গঠন করবে। অতএব যে করেই হোক রাশান এন্ড চাইনিজ এ্যালায়েন্স ঠেকাও।

অতএব প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এখন রাশিয়ার ওপর থেকে ফোকাস সরিয়ে চীনের ওপর হম্বিতম্বি শুরু করেছেন। মাঝেমধ্যে আবার বলছেন রাশিয়ার অস্ত্র ফুরিয়ে গেলে তুমি তাকে অস্ত্র দেবে না। তাহলে ইউক্রেন যুদ্ধের দায় তোমার ওপর বর্তাবে। আবার বলছেন তাইওয়ানের কিছু হলে তোমাকে দেখে নেবো। এর পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট বাইডেন চীনের ওপর চাপ বাড়াতে জাপান-অষ্ট্রেলিয়া-ভারতকে নিয়ে কোয়াড কোয়াড সাপ লুডু খেলছে। ওদিকে আবার মাঝে মধ্যে চীনের বন্ধু উত্তর কোরিয়াকে বলছেন, আর যদি একটা মিসাইল ছোড়ো তাহলে তোমার দম বন্ধ করে দেয়া হবে।

কিন্তু চীন বেশ ভালো করেই বুঝেছে যে যুক্তরাষ্ট্র ২৭টি শক্তিধর দেশকে নিয়ে ইউক্রেনকে রক্ষা করতে পারছে না। অতএব জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, অষ্ট্রেলিয়া কিংবা ফিলিপাইন-ভিয়েতনাম তোমার কথায় নেচে উঠে চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাবে না।

আসলে  ট্রাম্পের এবং বাইডেন এই দুজনেই জানেন যে চলতি শতক হবে চীনের। চীন সব দিক দিয়েই যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে। অতএব চৈনিক শ্রেষ্ঠত্ব যেনো ইউরোপীয় সভ্যতাকে টেক্কা না দেয় তার একটা বিহিত করতেই হবে। ট্রাম্প চাইছিলেন ঐ ইউরোপ-টিওরোপ বাদ দিয়ে ইউএসএ ফার্স্ট নীতিতে চলা। অনেকটা নিজে বাঁচলে বাপের নাম ধরণের অবস্থা।

ট্রাম্পের স্টাইলটা ছিলো মেক ইউএসএ গ্রেট এ্যাগেইন। এ ধরণের ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখা। এর জন্য যে আলট্রা ন্যাশনালিজম দরকার সেটাও তিনি করতে পেরেছিলেন। ৬ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে ক্যাপিটল হিল দখল করে তার সমর্থকরা যে নাচানাচি করেছিলো সেটাই আলট্রা ন্যাশনালিজমে মজে যাওয়ার প্রমাণ।

অন্যদিকে, প্রেসিডেন্টন জো বাইডেনের স্টাইলটা হলো তার জাত ভাই ইউরোপকে সাথে নিয়ে চলা। তবে সেই ভাইদের মধ্য থেকে রাশিয়াকে বাদ রাখা। বাইডেনের পরিকল্পনা ছিলো ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়াকে ক্ষেপিয়ে তুলে পুরো ইউরোপ জুড়ে একটা রাশান জুজু তৈরি করা। কিন্তু বিধি বাম।

 

সেই রাশান জুজু থেকে সত্যি সত্যিই যে এক পুতিন দৈত্য সামনে এসে দাঁড়াবে ততটা কল্পনা বাইডেন হয়তো করেননি। কল্পনার ভূত বাস্তবে এসে পড়ায় বাইডেন এখন সত্যিই চিন্তিত। মিস্টার বাইডেন এই চিন্তা-ভীতি থেকেই এখন কিসিঞ্জারের ফর্মুলা মোতাবেক শ্লোগান তুলছেণ রাশিয়া ছেড়ে চীনকে ধরো।

বড়ই রঙ তামাশায় ভরপুর মার্কিন কূটনীতি। ১৯৭০’৮০ র দশকে রাশান কমিউনিজমের ভয়ে যুক্তরাষ্ট্র-পশ্চিম ইউরোপ আতঙ্কিত ছিলো। তখন চীনও গোড়া কমিউনিস্ট দেশ ছিলো । ১৯৬৯ সালে চীন-রাশিয়া দুই কমিউনিস্ট দেশ সীমান্ত যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এই সুযোগে যুক্তরাষ্ট্র চীন রাশিয়ার কমিউনিজম এ্যালায়েন্স পুরোপুরি ভেঙ্গে দিতে চীনের প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়ায়।

এই হেনরি কিসিঞ্জার তখন গোপনে চীন সফর করেন। দুই দেশ টেবিল টেনিস বা পিংপং খেলতে থাকে। মিস্টার হেনরি কিসিঞ্জারের প্রচেষ্টায় ১৯৭১ সালে হার্ড লাইনার কমিউনিস্ট রাষ্ট্র চীন ভেটো ক্ষমতাসহ জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভ করে। পরবর্তীতে ১৯৭৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র-চীন কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। আর ক্যাপিটালিজমে প্রবেশের পথ সুগম করার জন্য চীনকে ১৯৮০ সালে আইএমএফ এবং বিশ্ব ব্যাংকের সদস্য করে নেয়া হয়।

সুতরাং ইতিহাস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে প্রশ্ন রাখতেই পারে যে সেই সময়ের গোড়া কমিউনিস্ট চীনা রাষ্ট্রকে বন্ধু করে নিতে পারলে এখনকার লিবারেল ক্যাপিটালিস্ট কাম কমিউনিস্ট চীনকে শত্রু গণ্য করছো কেন? তখন রাশিয়াকে ঠেকাতে আমাকে বন্ধু করেছিলে, এখন আবার সেই রাশিয়ার ভয়ে আমাকে এখন শত্রু গণ্য করছো ।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ১০০ দিন পেরিয়ে গেছে। এত দিনে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট মিস্টার জেলেনস্কি বুঝতে পেরেছেন যে হলিউড বলিউডের ফাইট আর সত্যিকার ব্যাটল ফিল্ডের ফাইট এক নয়। সত্যিকারের ব্যাটল ফিল্ডে শুধু ফাইট করলেই হয়না বড় ভাইদের খেয়াল খুশির দিকে নজর রাখতে হয়। মানে কতটা যুদ্ধ করা যাবে আর কোথায় থামতে হবে। কতটুকু ভূখন্ড জয় করা যাবে আর কতটুকুই বা ছেড়ে দিতে হবে।

মিস্টার জেলেনস্কি ইইউ পার্লামেন্ট,ইউ এস কংগ্রেস, কানাডিয়ান, অষ্ট্রেলিয়ান পার্লামেন্ট- এমন সব জায়গায় আবেগঘন বক্তৃতা দিয়ে যে অস্কারতুল্য করতালি পেয়েছিলেন- তা যেনো এখন হাওয়াই মিলিয়ে গেছে। এরপরও মিস্টার জেলেনস্কি গর্জে উঠছেন উই উইল ফাইট টিল দি ডেথ। এর কারণ যুদ্ধ যতই কঠিন হোক মাতৃভূমির মায়া কেউ ছাড়তে পারে না।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২
Developed By ATOZ IT HOST