1. shahajahanbabu@gmail.com : admin :
 গ্রীস-তুরস্কের সমুদ্রসীমানা সংক্রান্ত বিরোধ - Pundro TV
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:২৭ পূর্বাহ্ন



 গ্রীস-তুরস্কের সমুদ্রসীমানা সংক্রান্ত বিরোধ

অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিতঃ মঙ্গলবার, ৫ জুলাই, ২০২২

গ্রীস-তুরস্কের সমুদ্রসীমার বিরোধের কারণে দেশ দুটির মধ্যে যেকোনো সময় যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে। গ্রীস-তুরস্ক বিরোধের প্রথম কারণ হলো গ্রীস-তুরস্কের সমুদ্রসীমানা সংক্রান্ত বিরোধ।

১৯২৪ সালে পূর্বের আয়তনের তুলনায় সঙ্কুচিত হয়ে বর্তমান তুরস্ক গঠিত হয়। এর মাত্র কিছুদিন পরই ১৯৩৬ সালে তুরস্কের প্রতিবেশি দেশ গ্রীস তার সমুদ্রসীমা ৩ নটিক্যাল মাইল থেকে ৬ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বর্ধিত করে। এর ফলে গ্রীস-তুরস্কের মধ্যে সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত বিরোধ শুরু হয়। তুরস্ক জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক আদালতে দৌড়াদৌড়ি করে।

ঐ বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ রেজুলেশন পাশ করে। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক আদালতও রুলিং জারি করে। তবে তাতে গ্রীস-তুরস্ক সমুদ্রসীমা বিরোধের কোনো মীমাংসা হয়নি। তবে একপর্যায়ে গ্রীস-তুরস্ক উভয়েই নিজেদের সমুদ্রসীমা ৬ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বর্ধিত করতে সম্মত হয়।

এরপর গ্রীস-তুরস্ক সমুদ্রসীমানা নিয়ে এখন আবার নতুন করে বিরোধ শুরু হয়েছে। বর্তমানে গ্রীস তার সমুদ্রসীমা ১২ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে চাইছে। অর্থাৎ পূর্বের ৬ নটিক্যাল মাইল থেকে এখন ১২ নটিক্যাল মাইল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তুরস্ক গ্রীসের সমুদ্রসীমার এই বর্ধিতকরনের তীব্র আপত্তি জানাচ্ছে। কারণ গ্রীস যদি তার সমুদ্রসীমা ১২ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বৃদ্ধি করে তবে আজিয়ান সাগরের প্রায় ৭২% অংশের দখল পাবে গ্রীস। অন্যদিকে, তুরস্কের ভাগে থাকবে মাত্র ৯%, আর বাদবাকী ১৯% থাকবে ডিপ হাইসি।

 

গ্রীসের এই সমুদ্র সীমা বর্ধিতকরন প্রচেষ্টা সফল হলে তুরস্ক ভীষণ বেকায়দায় পড়ে যাবে। তুরস্ক সাগরে তেল গ্যাস অনুসন্ধান কিংবা উত্তোলন থেকে বঞ্চিত হবে। এখন জাতিসংঘ কিংবা আন্তর্জাতিক আদালত যদি তুরস্ককেও গ্রীসের সমান ১২ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত সমুদ্রসীমা বর্ধিত করার অনুমতি দেয়, তাহলেও তুরস্কের কোনো লাভ হবে না। তুরস্ক ঘুরেফিরে আজিয়ান সাগরে ঐ ৯% অংশেরই মালিক থাকবে। এর কারণ হলো আজিয়ান সাগরে গ্রীসের রয়েছে দুই হাজার দ্বীপ।

সেগুলোর মধ্যে বেশ কিছু দ্বীপ আবার তুরস্কের উপকূল সংলগ্ন। অন্যদিকে তুরস্কের রয়েছে মাত্র কয়েকটা দ্বীপ। এর ফলে গ্রীস তার প্রতিটা দ্বীপ থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত সমুদ্রসীমা বৃদ্ধি করলে আজিয়ান সাগরের ৭২% অংশ পাবে, আর তুরস্ক তার কয়েকটা দ্বীপ থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত সমুদ্র সীমা বৃদ্ধি করলে আজিয়ান সাগরের ৯% অংশ লাভ করবে। অর্থাৎ গ্রীস এবং তুরস্ক সমান দৈর্ঘ্যে সমুদ্র সীমানা যত বৃদ্ধি করবে আজিয়ান সাগরে গ্রীসের অংশ ততই আনুপাতিক হারে বাড়তে থাকবে।

সুতরাং এই অবস্থায় গ্রীস-তুরস্ক উভয়ই একই পরিমাণ দৈর্ঘ্যে সমুদ্রসীমা বাড়িয়ে তুলুক এমন সমাধান তুরস্কের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আর ঠিক এ কারণেই তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান বার বার বলে যাচ্ছেন তুরস্কের রয়েছে দীর্ঘ উপকূল। এত দীর্ঘ উপকূল থাকা সত্ত্বেও তুরস্ক আজিয়ান সাগরের মাত্র ৯% অংশ ভোগ দখল করতে পারবে- তা আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি আকারে ইংগিতে এটাও বোঝাতে চাচ্ছেন যে ১৯২৩ সালের যে লুজান চুক্তির আওতায় গ্রীস আজিয়ান সাগরের যেসব দ্বীপ লাভ করেছিলো তা পূণঃমুল্যায়ন হওয়া দরকার। তুরস্ক এখন তার উপকূলে অবস্থিত গ্রীস মালিকানায় থাকা দ্বীপগুলোকে নিজের করে নিতে চাইছে। উল্লেখ্য যে, গ্রীস-তুরস্কের ভৌগলিক সীমারেখা একে দেয়া ঐ লুজান চুক্তির মেয়াদ আগামী ২০২৩ সালে ১০০ বছর পূরণ হবে। এমতাবস্থায় কেউ কেউ বলছেন ১০০ বছর পূরণ হয়ে গেলে আন্তর্জাতিক চুক্তির মেয়াদকাল অটোমেটিক বাতিল হয়ে যাবে। আর অন্যরা বলছেন নতুন চুক্তি দ্বারা পুরানো চুক্তি বাতিল করা না হলে সেই আন্তর্জাতিক চুক্তি অনন্তকাল চলবে।

গ্রীস-তুরস্ক সমুদ্র সীমা বিরোধ চরম আকার ধারণ করে যখন তুরস্ক গত ৩১ জানুয়ারী ২০২০ সালে তার তেল গ্যাস অনুসন্ধানকারী জাহাজ ওরাক রেইসকে সাগরে পাঠায়। ঐ জাহাজ লক্ষ্য করে গ্রীস যেনো হামলা না চালায় সেজন্য তুরস্কের কতগুলো যুদ্ধ জাহাজ তাকে পাহাড়া দিতে থাকে।

এক পর্যায়ে অস্ত্র সজ্জিত তুরস্কের ঐ সব নেভাল শিপ সমুদ্রে চক্কর দেয়ার সময় গ্রীক জাহাজের মুখোমুখি হয়ে যায়। ফ্রান্স গ্রীসের সমর্থনে এগিয়ে যায়। ফ্রান্স, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটোর বেশ কিছু দেশ তুরস্ককে হুমকি দিতে থাকে। ফ্রান্স তার অত্যাধুনিক রাফায়েল জংগী বিমান গ্রীসের কাছে বিক্রি করতে থাকে। আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন তুরস্কের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গ্রীসকে মৌন সমর্থন দিতে থাকে।

কিন্তু পশ্চিমা শক্তির হুমকি ধামকি সত্ত্বেও তুরস্ক সাগরে তেল-গ্যাসের অনুসন্ধান চালাতে থাকে। প্রেসিডেন্ট এরদোগান তার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। অবশেষে জার্মানি মধ্যস্থতা করতে এগিয়ে আসে। এর ফলে তুরস্ক ও গ্রীসের মধ্যে আলোচনার পরিবেশ তৈরী হয়। তুরস্ক সাগর থেকে তার তেল গ্যাস অনুসন্ধানকারী জাহাজ ফিরিয়ে আনে।

২০২১ সাল থেকে গ্রীস-তুরস্ক সমুদ্র সীমার বিরোধ নিরসনে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত আলোচনার অগ্রগতি সামান্যই হয়েছে। গ্রীস তার সমুদ্রসীমা বাড়াতে বদ্ধপরিকর। গ্রীস মনে করে নিজে সামরিক শক্তিতে তুরস্কের চেয়ে দুর্বল হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো তার সাহায্যে এগিয়ে আসবে।

অন্যদিকে, তুরস্কের তেল গ্যাসের ভীষণ দরকার। তুরস্কের ভূখন্ডে তেল গ্যাসের কোনো খনি নেই। তুরস্কের ফুলে ফেঁপে ওঠা বিশাল ইন্ডাজট্রির জন্য তেল-গ্যাসের ভীষণ দরকার। তাই ভূমধ্যসাগরের ঐ অঞ্চলে তেল গ্যাসের যে বিশাল মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে তা তুরস্ক কিছুতেই হাত ছাড়া করতে চাইবে না। প্রয়োজনে হয়তো যুদ্ধকেই বেছে নেবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২
Developed By ATOZ IT HOST