বছর পাঁচেক আগে ডমিনিকা নামের অনিন্দ্য সুন্দর দ্বীপটিকে বিধ্বস্ত করেছিল হারিকেন ‘মারিয়া।’ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল এই স্টেডিয়ামও। সেই আঙিনায় হারিকেন বয়ে যায় আবার। তবে এবার তা আসে দ্বীপবাসীর জন্য বিনোদন নিয়ে, গ্যালারির উৎসবে তা চড়ায় বাড়তি রঙ। হারিকেনের নাম যে ‘রভম্যান পাওয়েল!’
এই বছর দারুণ ফর্মে থাকা এই ব্যাটসম্যান খেলেন ৬ ছক্কায় ২৮ বলে ৬১ রানের ইনিংস। ফিফটি উপহার দেন ওপেনার ব্র্যান্ডন কিং। আগের দিন যে উইকেটে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ, সেখানেই এ দিন ২০ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তোলে ৫ উইকেটে ১৯৩ রান।
রান তাড়ায় বাংলাদেশ ধুঁকতে থাকে শুরু থেকে। দীর্ঘসময় ধরে উইকেটে মিইয়ে থাকা সাকিব আল হাসান শেষ দিকে কিছু বড় শট খেলে পরাজয়ের ব্যবধান কিছুটা কমান। বাংলাদেশ ২০ ওভারে করতে পারে ৬ উইকেটে ১৫৮ রান।
ম্যাচের ভাগ্য আসলে নির্ধারিত হয়ে যায় অনেক আগেই। বাংলাদেশ পারেনি কোনোরকম চ্যালেঞ্জ জানাতেই।
৫২ বলে ৬৮ রানে অপরাজিত থাকেন সাকিব। তবে সপ্তদশ ওভারেও তার রান ছিল ৩৭ বলে ৩৫। সব আশা শেষ হয়ে যাওয়ার পর দ্রুত কিছু রান তোলেন তিনি।
বড় রান তাড়ায় বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল দ্রুত শুরু। কিন্তু হয় উল্টো। পিঠের চোটের কারণে মুনিম শাহরিয়ার না থাকায় এনামুল হকের সঙ্গে ওপেনিংয়ে ফেরেন লিটন দাস। ব্যর্থ হয় নতুন এই জুটিও। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে দুজন ফেরেন পরপর দুই বলে।
বাঁহাতি পেসার ওবেড ম্যাককয়ের বলে আলতো ফ্লিকে ক্যাচ দেন লিটন, বাজে ফুটওয়ার্কে বাইরের বল স্টাম্পে টেনে আনেন এনামুল।
অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ চারে নেমে পাল্টা আক্রমণের ইঙ্গিত দেন ওডিন স্মিথকে টানা দুই বলে চার ও ছক্কা মেরে। তবে ওই ওভারে বিদায় নেন তিনিও।
বাংলাদেশের লড়াইয়ের তাড়নাও যেন মরে যায় তাতে। সাকিব এগোতে থাকেন এক-দুই রান নিয়ে। আফিফ হোসেন ভালো কিছু শটে একটু দ্রুত রান করেন বটে। তবে তার ইনিংস থামে ২৭ বলে ৩৪ রান করে।
আগের ম্যাচে কার্যকর ইনিংস খেলা নুরুল হাসান সোহান এবার ১৩ বলে করেন ৭। এরপর কেবল ম্যাচ শেষ হওয়ার বিরক্তির অপেক্ষা। শেষ দিকে সাকিবের তিন ছক্কা ও দুই চার পারেনি খুব একটা রোমাঞ্চ জাগাতে।
টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দশম ফিফটির পাশাপাশি আরও ব্যক্তিগত মাইলফলক অবশ্য ধরা দেয় সাকিবের। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে স্পর্শ করেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ২ হাজার রান। ১০০ উইকেট তার আছে আগে থেকেই। এই ‘ডাবল’ অর্জনে তিনি বিশ্ব ক্রিকেটেই প্রথম। তবে দলের ম্রিয়মান পারফরম্যান্সে এসব আড়ালেই পড়ে থাকছে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ জয়ের পথ তৈরি করে প্রথম ইনিংসেই। শুরুটা করে তারা কাইল মেয়ার্সের ঝড়ের আভাসে। ম্যাচের প্রথম ওভারেই তাসকিন আহমেদকে চার-ছক্কার পর দ্বিতীয় ওভারে শেখ মেহেদি হাসানের প্রথম বলেও মারেন চার। তবে মেহেদি এরপরই লেংথ একটু খাটো করে আটকে ফেলেন মেয়ার্সকে। টানা তিনটি ডট বলের পর স্লগ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান (৯ বলে ১৭)।
তিনে নামা শামার ব্রুকসকে শূন্যতেই ফেরান সাকিব। শুরুটা তখন বাংলাদেশেরই ভালো বলা যায়, ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ৪ ওভারে ২ উইকেটে ২৭।
কিন্তু নিকোলাস পুরান নেমে আগ্রাসী কয়েকটি শটে বদলে দেন খেলার গতিপথ। অধিনায়কের সঙ্গে দারুণভাবে এগিয়ে যান কিংও। গড়ে ওঠে জুটি।
সাকিব নিজের প্রথম ওভারে ১ রানে ১ উইকেট নিলেও আর বোলিং পাননি ১২ ওভারের আগে। অন্য বোলারদের অনায়াসেই খেলে কিং-পুরান জুটি দলের রান নিয়ে যান একশতে।
৫৬ বলে ৭৪ রানের এই জুটি ভাঙেন মোসাদ্দেক হোসেন। রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে পুরান এলবিডব্লিউ হন ৩০ বলে ৩৪ করে।
কিং পরের ওভারে ফিফটি পূরণ করেন ৩৬ বলে। ১৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে তার তৃতীয় ফিফটি এটি। তবে বাংলাদেশের বোলিং তুলাধুনা করেন মূলত পাওয়েল। শুরুতে একটু সময় নেন। প্রথম ৯ বলে তার রান ছিল ৭। এরপর শুরু হয় তাণ্ডব।বিপজ্জনক পাওয়েলকে ঝড় তোলার আগেই থামাতে সাকিবকে আক্রমণে আনেন অধিনায়ক। কিন্তু পাওয়েল খ্যাপাটে হয়ে ওঠেন সেই ওভারেই। টানা চার বলে মারেন তিন ছক্কা ও এক চার। পরের ওভারে তাসকিনকে মারেন বিশাল দুটি ছক্কা।
১৫ থেকে ১৭, এই তিন ওভারেই রান আসে ৫৫!
পরের দুই ওভারে শরিফুল ও মুস্তাফিজ একটু নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন রান। শরিফুলকে উড়িয়ে মেরে সীমানায় ধরা পড়েন কিং (৪৩ বলে ৫৭)। তবে শেষ ওভারে শরিফুলকে গ্যালারিতে আছড়ে ফেলেন ওডিন স্মিথ, ইনিংসের শেষ বলে ১০২ মিটার লম্বা ছক্কায় শেষ করেন পাওয়েল।
তাতে যে উচ্চতায় পৌঁছে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর, এই বাংলাদেশের জন্য সেটি তাড়া করা দুঃসাধ্য। অসাধারণ কিছু করে সেই ধারণা বদলে দিতেও পারেননি মাহমুদউল্লাহরা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ১৯৩/৫ (কিং ৫৭, মেয়ার্স ১৭, ব্রুকস ০, পুরান ৩৪, পাওয়েল ৬১*, শেফার্ড ৩, স্মিথ ১১*; তাসকিন ৩-০-৪৬-০, শেখ মেহেদি ৪-০-৩১-১, মুস্তাফিজ ৪-০-৩৭-০, সাকিব ৪-০-৩৮-১, শরিফুল ৪-০-৪০-২, মোসাদ্দেক ১-১-০-১)
বাংলাদেশ : ২০ ওভারে ১৫৮/৬ (এনামুল ৩, লিটন ৫, সাকিব ৬৮*, মাহমুদউল্লাহ ১১, আফিফ ৩৪, সোহান ৭, মোসাদ্দেক ১৫, মেহেদি ৫*; আকিল ৪-০-২৭-১, ম্যাককয় ৪-০-৩৭-২, স্মিথ ৩-০-৩২-১, শেফার্ড, পল ১-০-৯-০, ওয়ালশ ৪-০-২৩-০)
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩৫ রানে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১-০তে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ: রভম্যান পাওয়েল।