1. shahajahanbabu@gmail.com : admin :
বস্তির শিশুদের আলোর পথ দেখাচ্ছে পথের দিশা ভাসমান স্কুল - Pundro TV
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৩৯ অপরাহ্ন



বস্তির শিশুদের আলোর পথ দেখাচ্ছে পথের দিশা ভাসমান স্কুল

পুন্ড্র.টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিতঃ বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন, ২০২২

উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার হিসেবে বহুল পরিচিত বগুড়া শহরের বিভিন্ন বস্তিতে এরকম সুবিধা বঞ্চিত শিশুর সংখ্যা আসলে কত সেটা বলা মুশকিল। এদের নিয়ে কেউ কখনো সিরিয়াস ভাবে চিন্তা করেনি বলেই হয়ত এদের সংখ্যা নিরূপণের উদ্যোগও নেয়নি কেউ। তবে, আনুমানিক দুই হাজারের অধিক সুবিধা বঞ্চিত শিশু রয়েছে এই শহরে।

এসব শিশুকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার লক্ষ্যে ২০১৪ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুককে ঘিরে বগুড়ায় একটি সংগঠনের জন্ম হয়। সাংবাদিক মোস্তফা মোঘল বন্ধুদের সাথে নিয়ে “ফেসবুক ফ্রেন্ডস্ সোসাইটি বগুড়া” নামের এই সংগঠন গড়ে তোলেন। তরুণ চিকিৎসক ডাঃ আব্দুস সামাদের নেতৃত্বে সংগঠনটি অল্পদিনের ব্যবধানে সামাজিক কর্মকান্ডে ব্যাপক সুনাম অর্জন করে।
২০১৬ সালে ফেসবুক ফ্রেন্ডস্ সোসাইটি বগুড়া’র তৎকালীন সমাজকল্যাণ সম্পাদক ডা: ইমরান রাশেদের নেতৃত্বে “পথের দিশা ভাসমান স্কুল” নামে বস্তির সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্য শহরের চেলাপাড়ায় একটি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়।

গাবতলী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম মুক্তা এবং চেলোপাড়া মন্দির কমিটির সভাপতি সাবেক ক্রীড়াবিদ গোপাল তেওয়ারীর সহযোগিতায় চেলোপাড়া মন্দিরের বারান্দায় সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের পড়ালে খার ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় কিছু দিন পর পার্শ্ববর্তী চেলোপাড়া দাখিল মাদরাসার বারান্দায় স্কুলের কার্যক্রম শুরু হয়। একপর্যায়ে ২০১৭ সালে বগুড়া রেল স্বেটশন বস্তিতে স্থানান্তর করা হয় স্কুল। বর্তমানে সেখানেই কার্যক্রম চলছে।

বগুড়া রেল স্টেশনের পাশে ফাঁকায় জায়গায় সবুজ ঘাসের উপর প্রায় দুই বছর স্কুলের কার্যক্রম চলার পর বস্তিতে টিনের বেড়া ও ছাউনি দিয়ে স্কুল ঘর নির্মাণ করা হয়। শুরুতে স্বেচ্ছাসেবীরা শিশুদের দায়িত্ব পালন করলেও পরবর্তীতে একজন বেতন ভুক্ত নারী শিক্ষক নিয়মিত স্কুলে শিশুদের পাঠদান করান।

 

বস্তির নোংরা পরিবেশে বেড় ওঠা শিশুদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করাটা সহজ ছিল না। সমাজের অন্য শিশুদের মত শারীরিক কিম্বা মানসিক কোন মিলই ছিল না এই শিশুদের। সম্পুর্ন বৈরী পরিবেশে বেগ ওঠা শিশুদের একত্রিত করে তাদের মাঝে শিক্ষার আলো জ্বালানোর কঠিন কাজটি সুন্দর ভাবে সম্পন্ন করেছেন পথের দিশার স্বেচ্ছাসেবীরা। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এই স্কুলে অক্ষর জ্ঞান লাভ করে ২৫জন শিশু স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। বর্তমানে ৪৫জন সু বিধা বঞ্চিত শিশু পড়াশোনা করছে পথের দিশা ভাসমান স্কুলে। সপ্তাহে শনি, সোম ও বুধবার বিকেলে দুই ঘন্টা করে ক্লাস নেয়া হয়। যদিও সম্প্রতি প্রচন্ড ঝড়ে স্কুলঘর বিধ্বস্ত হওয়ায় কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

পথের দিশা ভাসমান স্কুল শুধুমাত্র বস্তির সুবিধা বঞ্চিত শিশূদের পড়ালেখার দায়িত্ব নিয়েই থেমে থাকেনি। তারা এই শিশুদের পরিবারের দিকেও সুদৃষ্টি রেখেছে সবসময়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এসব শিশুদর পড়ালেখার সকল শিক্ষা উপকরণ যেমন বই, খাতা, কলম, পেন্সিল, রাবার ইত্যাদির ব্যবস্থা করেছে। সকল শিশু শিক্ষার্থীর স্কুলড্রেস, শীতে সোয়েটার, কম্বল, চাদরের ব্যবস্থা করেছে। রমজান মাসের শুরুতে সারা মাসের খাবারের ব্যবস্থাও করেছে পথের দিশা। প্রতিটি পরিবারকে রমজান মাসের শুরুতেই প্রায় ১ হাজার টাকা মূল্যের খাদ্যসামগ্রী উপহার দিয়ে থাকে। ঈদুল ফিতরে মেহেদী উৎসব, নতুন পোষাক এবং ঈদ সালামী দেয়া হয় সব শিশুকে। ইফতার মাহফিলেরও ব্যবস্থা করা হয়।

প্রতি বছর এসব শিশুকে নিয়ে বগুড়ার বাইরে শিক্ষা সফর আয়োজন করা হয়। এসব শিক্ষা সফরে সমাজের অন্য শিশুদের মতই সুযোগ সুবিধা ভোগ করে তারা। ঈদ শেষে প্রতি বছর ঈদ পূনর্মিলনী আয়োজন করা হয়। সেখানে এসব শিশুর পাশাপাশি তাদের অভিভাবকদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়। উন্নত মানের খাবার দিয়ে তাদেরকে আপ্যায়ণ করানো হয়। এছাড়াও নিয়মিত মা সমাবেশ আয়োজন করা হয়। এসব সমাবেশে শিশুদের বিকাশে মায়েদের ভুমিকা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। তাদেরকে সচেতন করা হয় বিভিন্ন বিষয়ে। প্রতিটি মা সমাবেশে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়। সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের পড়াশোনার পাশাশি তাদের শারীরিক বিকাশে খেলাধুলার আয়োজন করা হয়।

 

পথের দিশা ভাসমান স্কুলের সভাপতি প্রভাষক মো: মহররম আলী বলেণ, সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকেই তারা বস্তির সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের উন্নয়নে কাজ করছেন। সমাজের সামর্থ্যবান মানুষকে এগিয়ে আসা উচিৎ বলেও তিনি মনে করেন। পথের দিশা ভাসমান স্কুলের সাধারন সম্পাদক শামীম আহম্মেদ বলেন, আমরা নিজেদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে যতটা পেরেশান থাকি, সেই তুলনায় সমাজের সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের কথা কেউ ভাবিনা। অথচ অবহেলা, অনাদরে বেড়ে ওঠা এই শিশুদেরও আমাদের সন্তানদের মতই স্বাভাবিক জীবন লাভের অধিকার রয়েছে। আসুন! আমরা তাদেরকে সমাজের মূলস্রােতে ফিরিয়ে আনি। পাশা পাশি পথের দিশার এই মহতী কালে সহযোগিতায় এগিয়ে আসবেন সমাজের মানবিক মানুষ এমটাই প্রত্যাশা আমাদের।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২
Developed By ATOZ IT HOST