স্পিন সহায়ক উইকেটে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়া লঙ্কানদের জয়ের নায়ক চারিথ আসালাঙ্কা। পাঁচে নেমে খেলেন ১১০ রানের ঝকঝকে এক ইনিংস। সঙ্গে ধনাঞ্জয়ার ৬০ রানের সৌজন্যে ২৫৮ রান তোলে শ্রীলঙ্কা।
রান তাড়ায় অস্ট্রেলিয়াকে প্রায় একাই টানেন ওয়ার্নার। ১২ চারে ৯৯ রান করা ওয়ার্নারের বিদায়ের পর লড়াই করেন প্যাট কামিন্স। তার ৩৫ রানের ইনিংসে শেষ ওভারে গড়ায় ম্যাচ।
সেখানে দারুণ লড়াই করেন কুনেমান। শানাকার দ্বিতীয় বলেই চার মারেন তিনি। পরের তিন বলে দুই চারের সঙ্গে একটি ডাবল নিয়ে আশা জাগান জয়ের। কিন্তু শেষ বলে আর ৫ রানের সমীকরণ মেলাতে পারেননি তিনি। ২৫৪ রানে থেমে যায় অস্ট্রেলিয়া।
আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা একদম ভালো হয়নি শ্রীলঙ্কার। ১০ ওভারের মধ্যে ৩৪ রানেই টপ অর্ডার তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ফেলে তারা।
দ্বিতীয় ওভারেই গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের বলে স্টাম্পড হয়ে যান নিরোশান ডিকভেলা। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান পাথুম নিসানকাকে (১৩) বড় ইনিংস খেলতে দেননি মিচেল মার্শ। কামিন্সের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল স্টাম্পে টেনে এনে ফেরেন চোট শঙ্কা কাটিয়ে খেলা কুসল মেন্ডিস (১৪)।
বিপদে পড়া দলের হাল ধরেন ধনাঞ্জয়া ও আসালাঙ্কা। দারুণ ব্যাটিংয়ে প্রায় বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান বাড়াতে থাকেন দুইজন। তাদের জুটির রান পঞ্চাশ স্পর্শ করে ৫৬ বলে।
আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিংয়ে দলের রান বাড়ানো ধনাঞ্জয়া ফিফটি স্পর্শ করেন ৫২ বলে। মার্শের বলে মিডউইকেটে ম্যাক্সওয়েলের দারুণ ক্যাচে বিদায় নেন তিনি ৭ চারে ৬০ রান করে। ভাঙে ১০১ রানের জুটি।
দুনিথা ওয়াল্লালাগে ও ভানিন্দু হাসারাঙ্গাকে নিয়ে দলকে টানেন ৬০ বলে ফিফটি করা আসালাঙ্কা। এগিয়ে যান সেঞ্চুরির দিকে দেখেশুনে খেলে। কাঙ্ক্ষিত তিন অঙ্কে পা রাখেন তিনি ৯৯ বলে। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করে বিদায় নেন ডিপ মিডউইকেটে ধরা পড়ে। শেষ হয় তার এক ছক্কা ও ১০ চারে ১০৬ বলে ১১০ রানের ইনিংস।
পরে আর বেশিদূর যেতে পারেনি লঙ্কানরা। এক ওভার বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায় তারা। ৩ চারে ২১ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন হাসারাঙ্গা।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দুটি করে শিকার ধরেন বাঁহাতি স্পিনার কুনেমান, কামিন্স ও মার্শ।
জবাব দিতে নেমে রানের খাতাই খুলতে পারেননি অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। ওয়ার্নার ও মার্শ মিলে সামাল দেন শুরুর ধাক্কা। ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউটে ২৬ রানে ভাঙতে বসা জুটি শেষ পর্যন্ত পেরিয়ে যায় পঞ্চাশ। জমে যাওয়া এই জুটি ভাঙে মার্শের বিদায়ে।
ওয়ার্নার এক প্রান্তে খেলে যান নিজের মতো করে। ৪৯ বলে ফিফটিতে পা রেখে এগিয়ে যান আরও সামনে। কিন্তু তাকে বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি মার্নাস লাবুশেন। রিভিউ নষ্ট করে ফেরেন তিনি এলবিডব্লিউ হয়ে।
অ্যালেক্স কেয়ারির পর ট্রাভিস হেডকে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যান ওয়ার্নার। কিন্তু পরপর তিন ওভারে হেড, ম্যাক্সওয়েল ও ওয়ার্নারের বিদায়ে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের আশা প্রায় শেষ হয়ে যায়।
ধনাঞ্জয়ার অফ স্পিন হেডের ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে ছোবল দেয় স্টাম্পে। রিভিউ নিয়ে ম্যাক্সওয়েলকে ফেরায় লঙ্কানরা। পথের কাঁটা হয়ে থাকা ওয়ার্নারকে বিদায় করেন ধনাঞ্জয়া। পা বাড়িয়ে ডিফেন্স করতে গিয়ে হন স্টাম্পড। ওয়ানডেতে আড়াই বছর পর সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে ফেরেন এক রানের আক্ষেপ নিয়ে।
ওয়ার্নার যখন ফেরেন তখন অস্ট্রেলিয়া চাই ৭৭ বলে ৬৭ রান। ধীরে ধীরে ক্যামেরন গ্রিনকে নিয়ে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন কামিন্স। শেষের আগের ওভারে তিনিই বিদায় নেন। এরপর শেষ ওভারে কুনামানের ওই লড়াই। তবুও পেরে ওঠেনি সফরকারীরা।
সিরিজের পঞ্চম ও শেষ ম্যাচ আগামী শুক্রবার, এই মাঠেই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা: ৪৯ ওভারে ২৫৮ (ডিকভেলা ১, নিসানকা ১৩, মেন্ডিস ১৪, ধনাঞ্জয়া ৬০, আসালাঙ্কা ১১০, শানাকা ৪, ওয়াল্লালাগে ১৯, করুনারত্নে ৭, হাসারাঙ্গা ২১*, ভ্যান্ডারসে ০, থিকশানা ০; হেইজেলউড ১০-০-৪৫-০, ম্যাক্সওয়েল ৮-০-৪৯-১, কুনেমান ৮-০-৫৬-২, কামিন্স ৯-১-৩৭-২, মার্শ ৭-১-২৯-২, গ্রিন ৫-০-২৭-০, লাবুশেন ২-০-১৩-০)
অস্ট্রেলিয়া: ৫০ ওভারে ২৫৪ (ওয়ার্নার ৯৯, ফিঞ্চ ০, মার্শ ২৬, লাবুশেন ১৪, কেয়ারি ১৯, হেড ২৭, ম্যাক্সওয়েল ১, গ্রিন ১৩, কামিন্স ৩৫, কুনেমান ১৫, হেইজেলউড ০*; করুনারত্নে ৫-১-১৯-২, থিকশানা ১০-১-৪০-১, হাসারাঙ্গা ১০-০-৫২-১, ওয়াল্লালাগে ৫-০-২৯-১, ধনাঞ্জয়া ১০-০-৩৯-২, ভ্যান্ডারসে ৭-০-৪০-২, আসালাঙ্কা ১-০-৭-০, শানাকা ২-০-২৭-১)
ফল: শ্রীলঙ্কা ৪ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: চারিথ আসালাঙ্কা
সিরিজ: পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে শ্রীলঙ্কা