মানসিক চাপ, অস্থিরতা, বিষণ্ণতা কাটাতে অনেকরকম পরামর্শ দেওয়া হয়। ব্যায়াম করা, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা কিংবা কোথাও বেড়াতে যাওয়া।
খোশমেজাজে থাকতে খাবারে দিকেও নজর দিতে হয়।
চর্বিযুক্ত মাছ
এই ক্ষেত্রে সাধারণত স্যামন বা টুনা মাছের নাম প্রথমেই চলে আসে। আসলে মাছ নয়, বরং এতে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস মেজাজ ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি ও স্ট্যান্ডফোর্ড স্কুল অফ মেডিসিন’য়ের গবেষক, প্রশিক্ষিত ফিজিশিয়ান ও ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ডিজিজ রিভার্সাল অ্যান্ড প্রিভেনশন’য়ের সহযোগী সম্পাদক ডা. কেইসি মিন্স বলেন, “ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস’য়ের প্রদাহরোধী অণু সংকেত বহন করে আর মস্তিষ্কে সেটা প্রভাব ফেলে।”
রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “মনে রাখতে হবে মস্তিষ্কের ৬০ শতাংশ চর্বি দিয়ে গঠিত। তাই আমরা কী ধরনের চর্বি খাচ্ছি সেটার ওপর নির্ভর করে মস্তিষ্কে গঠন ও কার্যকলাপ।”
ডোকোসাহেক্সানয়েক অ্যাসিড (ডিএইচএ) ও আইকোসাপ্যান্টিনোয়েক অ্যাসিড (ইপিএ)- এই দুই ওমেগা থ্রি বিষণ্নতা কমাতে প্রভাব রাখে।
২০১৬ সালে ইতালির তুরিন বিশ্ববিদ্যালয়ের করা গবেষণায় দেখা গেছে ডিএইচএ এবং ইপিএ মেজাজ ভালো করতে ভূমিকা রাখে।
মাছ ছাড়াও তিসির বীজ ও টফু থেকেও মিলবে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস।
ডার্ক চকলেট
চকলেটও মন ভালো রাখতে পারে। তবে সেটা হতে হবে ডার্ক চকলেট।
ডা. মিন্স বলেন, “বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে ডার্ক চকলেট বিষণ্ন মনোভাব প্রায় ৫৭ শতাংশ কমাতে পারে।”
আর এরজন্য যে উপাদান বেশি কার্যকর তা হল ডার্ক চকলেটে থাকা কোকোয়া পলিফেনল্স। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রদাহ কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
তবে ডা. মিন্স মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, “কোকোয়া উপাদানই হচ্ছে মন ভালো রাখার মূল চাবি। তাই বাজারের চিনিযুক্ত চকলেট এড়িয়ে নজর দিতে হবে সেইসব ডার্ক চকলেটের দিকে যেগুলোতে কোকোয়া’র পরিমাণ ৮৫ শতাংশের ওপরে।”
গাঁজানো খাবার
দই, সাওয়ারক্রাওট (বাঁধাকপি কুটে লবণযুক্ত করে টক না হওয়া পর্যন্ত গাঁজিয়ে তৈরি করা খাবার বিশেষ; টক বাঁধাকপি), কিমচি (গাঁজন করা শাকসবজি)- এই ধরনের খাবারগুলো অন্ত্রের সুস্থ রাখতে পারে। আর সেটার ভালো প্রভাব পড়ে মস্তিষ্কেও।
এই ধরনের খাবারে থাকা প্রোবায়োটিক সেরোটনিন’য়ের মাত্রা বাড়াতে পারে; যা কিনা ‘হ্যাপি হরমোন’ নামেও পরিচিত।
ডা. মিন্স বলেন, “অন্ত্রের কার্যকলাপের সঙ্গে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যে সুদৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে। কথায় বলে না, পেট ভরা তো মনও ভালো। আর এক্ষেত্রে গাঁজানো পদ্ধতি তৈরি খাবারে থাকা প্রোবায়োটিক বিষণ্ন-মনোভাব কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।”
পাশাপাশি রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ ও বিপাক স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটায় এই ধরনের খাবার।
বাঁধাকপি ও পালংশাক
সবুজ শাক-সবজি দেহের জন্য উপকারী। তবে মন ভালো রাখতেও যে পারে সেটাও ঠিক। কারণ এসব সবজিতে থাকে বি ভিটামিন্স
যুক্তরাষ্ট্রের মায়ো ক্লিনিক জানাচ্ছে, এই ভিটামিনগুলো মন ভালো রাখার মস্তিষ্কের বিভিন্ন রাসায়নিক উৎপাদনের মাত্রা বাড়াতে পারে।
পাশাপাশি বি-টুয়েল্ভ ও বিভিন্ন ধরনের বি ভিটামিন যেমন- বি-সিক্স ও ফোলাট’য়ের অভাবে দেখা দিতে পারে বিষণ্নতা।
সবুজ শাক-সবজি ছাড়াও কলা ও ডিম থেকেও মিলবে বিভিন্ন বি ভিটামিন।
কফি
একথা এখন প্রায় সবারই জানা, ক্যাফেইন মনমেজাজ ভালো রাখতে পারে। আর এককাপ কফি থেকে সেই ক্যাফেইন সহজেই মেলে।
স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতে উৎপন্ন হওয়া অ্যাডেনোসিন যৌগ মস্তিষ্কের রিসিপ্টর’য়ে সেঁটে থাকার ফলে ক্লান্তি দেখা দেয়। আর এই যৌগের উৎপাদন কমাতে পারে ক্যাফেইন। অর্থাৎ ইতিবাচক মনোভাবের সৃষ্টি হয়।
অন্যদিকে, ২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যের নর্থাম্ব্রিয়া ইউনিভার্সিটি’র ‘পারফর্মেন্স অ্যান্ড নিউট্রিশন রিসার্চ সেন্টার’য়ের করা গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যাফেইন যুক্ত এবং ছাড়া দুই ধরনের কফি মন ভালো করতে পারে।
এই গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে গবেষকরা জানান, শুধু ক্যাফেইন নয় কফিতে থাকা অন্যান্য উপাদানও মন-মেজাজ ভালো রাখতে পারে।
ডাল ও শুঁটি
বাঙালির রসনায় ডাল থাকেই। আর এই ডাল ও শুঁটি ধরনের যেকোনো খাবার (যেমন- মটরশুঁটি) মন ভালো রাখতে পারে।
দি আমেরিকান নিউট্রিশন অ্যাসোসিয়েশন’য়ের সদস্য ও স্নায়ু বিশেষজ্ঞ স্টেইসি জে. স্টেফেনসন রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “বিভিন্ন ধরনের ডাল, শুঁটি ও কলাই ধরনের খাবারসহ বিভিন্ন জটিল-শর্করা যুক্ত খাবার শরীরে ধীরে শোষিত হয়। এর ফলে অস্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেইট গ্রহণের ইচ্ছা কমে আর রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যাওয়া রোধ করে।”
তিনি আরও বলেন, “রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে গেল মন-মেজাজের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।”
এছাড়া এসব খাবারে থাকা আঁশ ও ‘রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ’ রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি মেজাজের পরিবর্তন হওয়া কমায়।
এরপরও যদি ডাল ও শুঁটি খেতে ইচ্ছে না হয়, তবে আরও কারণের জন্য বেছে নিতে পারেন এসব খাবার। আর তা হল এগুলো ‘ট্রিপ্টোফান’য়ের ভালো উৎস, যা সেরোটনিন বা ‘হ্যাপি হরমোন’য়ের মাত্রা বাড়ায়।
আর এই হরমোন ঘুম ও হজম ভালো হওয়া, ক্ষত সারানো, হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখা, রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করা ছাড়াও যৌনস্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব রাখে।